সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : নীতিমালার তোয়াক্কা না করে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার আটিগ্রাম ইউনিয়নের মালুটিয়া এলাকায় তিন ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়।
কৃষি জমির টপ সয়েল ইটভাটায় যাওয়ায় জমির উর্বরতা হারাচ্ছে। এতে করে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা করছে প্রান্তিক কৃষকরা। দ্রুত সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে আগামীতে খাদ্য ঘাটতিসহ ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
ইট তৈরির প্রধান কাঁচামাল মাটি। ফসলি জমির মাটি ইট তৈরিতেও সুবিধা। এছাড়া হাতের নাগালে হওয়ায় কৃষকদের বিভিন্ন ভাবে বুঝিয়ে বাধ্যকরে এ মাটি কিনে নেয় প্রভাবশালী পক্ষ। এরপর তারা বেশি দামে ইটভাটায় সরবরাহ করে থাকেন।
মাটি বিক্রি করায় ফসলি জমির উপরিভাগের মাটিতে যে জিপসাম বা দস্তা থাকে তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া মাটিতে যে জীবানু থাকে এবং অনুজীবের কার্যাবলি আছে তা সীমিত হয়ে যাচ্ছে। এতে করে দিন দিন ফসলি জমিতে উৎপাদন ক্ষমতা কমছে। মাটির জৈব শক্তি কমে গিয়ে দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতির মুখে পড়বে। কোন কোন জমিতে মাছ চাষের অজুহাতে পুকুরের মত করা হলেও চলছে ধোঁকাবাজি।
জানা গেছে, স্থানীয় প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির আশ্রয়-প্রশ্রয়ে দেদারসে চলছে কৃষি জমি কেটে মাটি ব্যবসা। মালুটিয়া ও ভগবানপুর এলাকা থেকে এস্কেভেটর বা ভেকু মেশিন দিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের ভাতিজা ফিরোজ, সোহেল মুন্সি, আমজাদ মোল্লা, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দুলাল হোসেন ফসিল জমি কেটে ইটভাটায় মাটি বিক্রি করছে। এদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না। যার ফলে অবাধে দিন রাত ভর মাটি কেটে সোনার ফসলি জমি ধ্বংস করছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আবাদকৃত বোরো ধানের পাশ থেকে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে ট্রাকের মাধ্যমে বিভিন্ন ইটভাটায় মাটি সরবরাহ করা হচ্ছে। শত শত খোলা ট্রাকের ধুলোর কারণে বোরো ধানের ক্ষতি হচ্ছে এবং পরিবেশগত ভাবে হুমকিতে রয়েছে এলাকাবাসী। এমনকি মাটি কাটার ফলে বোরোধান ক্ষেত ভাঙ্গনের শিকার হচ্ছে। ট্রাকযোগে মাটি সরবরাহ করার কারণে গ্রামীণ সড়কের হচ্ছে বেহাল অবস্থা ।
ভগবানপুর গ্রামের আইয়ুব আলী বলেন, কৃষি জমি থেকে মাটি কাটার কারণে আমার বোরো ধানের ক্ষতি হচ্ছে। আমার পাশের জমি থেকে গভীর করে মাটি কাটা হয়েছে। এতে আমার বোরো ধান ক্ষেতভাঙনের আংশকা রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে কথা বললে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করার ভয় দেখায়। একারণে মুখ বুঝে সহ্য করতে হচ্ছে।
সাহেরা খাতুন নামের আরেক নারী বলেন, এলাকায় কি ইটখোলা আইলো, এলাকা শেষ করে দিল। আমরা যে জমিতে চাষ করে ভাত খাই শেষ জমির মাটি কেটে ইটখোলায় নেয়া হচ্ছে। আমাগো পুলাপাইনের ভবিষ্যৎ নষ্ট করছে এই মাটির ব্যবসায়ীরা। না পারবে লেখা পড়া করতে, না পারবে জমি চাষ করতে। এদের কারণে আমরা খুব বিপদে রয়েছি।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) আসমাউল হুসনা বলেন, কিছুদিন আগে ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাটি কাটা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো। যদি এখনো ফসিল জমি থেকে মাটি কাটা হয় তাহলে খুব শ্রীর্ঘই অভিযান চালিয়ে মাটি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।