সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে মানিকগঞ্জের শহীদ তজু সড়কে যান চলাচল বন্ধ রেখে সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান এবং পুলিশের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় ৩৩ জনের নাম উল্লেখপূর্বক বিএনপির দুই হাজার পাঁচশত নেতা-কর্মীর নামে মামলা করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাতে থানায় মামলাটি করেন মানিকগঞ্জ সদর থানার এস আই মো. আব্দুল লিটন। তবে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ঠেকাতে বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে একটি মিছিল বের করে জেলা শহরের বিভিন্ন সড়কে পুলিশ প্রশাসনের সামনেই প্রকাশ্যে ধারালো অস্ত্র (চাইনিজ কুড়াল) ও লাঠিসোটা নিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা মহড়া ও শোডাউন দিলেও সেক্ষেত্রে নিরব ভূমিকা পালন করেছে পুলিশ।
বিএনপি নেতকর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলায় সদর উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফজলুল হক, যুবদলের নেতা সেলিম মোহাম্মদ, ছাত্রদলের নেতা রুবেল মাহমুদ, জেলা বিএনপির সহসভাপতি আজাদ হোসেন খান, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক কাজী মোস্তাক হোসেন দীপু, সদস্যসচিব তুহিনুর রহমান তুহিন, পৌর যুবদলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রাজিব হাসান খান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব আওলাদ হোসেন, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম সজীব, সাধারণ সম্পাদক নুসরাতুল ইসলাম জ্যাকি, সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম সজীব, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গোলাম কিবরিয়া সাঈদ, জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক আরিফ হোসেন লিটন, আসাদুজ্জামান শিপু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক জিন্নাহ খান, জেলা বিএনপির যুববিষয়ক সম্পাদক রিয়াজ মাহমুদ হারেজ, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-সম্পাদক আব্দুল খালেক শুভ, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া হাবু, জেলা যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক মাহবুবুল আলম উজ্জ্বল ও শিহাব সুমন, সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক জিয়া উদ্দিন আহাম্মেদ কবীর, জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব হাসান তপু, অলিদ, জেলা যুবদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক গোলাম রফি অপু, মাসুদুর রহমান মাসুদ (চরগড়পাড়া), জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি আব্দুল কাদের, সাধারণ সম্পাদক কসাই লিটন, জেলা যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক আসিফ ইকবাল রনি, জেলা বিএনপির সদস্য শরিফুল ইসলাম চাঁন, জেলা জাসাসের যুগ্ম-আহ্বায়ক মঞ্জুরুল আলম পালু, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক নেতা মাহফুজুর রহমান মাহফুজ, ছাত্রদলের সাবেক নেতা আব্দুর রহমান পণ্ডিত আনন্দ, জেলা বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক সত্যেন কান্ত পণ্ডিত ভজন এবং অজ্ঞাত ২ হাজার ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আসামীদের মধ্য থেকে উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফজলুল হক, যুবদলের নেতা সেলিম মোহাম্মদ, ছাত্রদলের নেতা রুবেল মাহমুদকে ঘটনাস্থল থেকেই আটক করে পুলিশ।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, আসামিরা জেলা শহরের সেওতা এলাকার শহীদ তজু সড়কে যান চলাচল বন্ধ রেখে সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন। যান চলাচল স্বাভাবিক রেখে রাস্তা বন্ধ না করতে অনুরোধ করলেও তাঁরা এর কোনো তোয়াক্কা না করে রাস্তার ওপর অবস্থান নেন। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কিতে লিপ্ত হন। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে বাঁশি বাজিয়ে তাঁদের ওপর মৃদু লাঠিপেটা করা হয়। এরপর আসামিরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রউফ সরকার, কনস্টেবল শাহীনসহ সাত পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিকেরা আহত হয়। তাঁরা দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুরসহ ব্যাপক ক্ষতি করেন।
অপরদিকে, বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মিছিলে পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের সময় ঘটনাস্থলে জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতা ও সাধারণ সম্পাদক এস এ জিন্নাহ কবীর উপস্থিত না থাকায় পুলিশের করা মামলায় তাদেরকেও আসামি করা হয়নি।
ছাত্রলীগের অস্ত্রের মহড়া নিয়ে জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এম এ সিফাত কোরাইশী সুমন বলেন, বিএনপি মারামারি করবে, রাস্তা-ঘাটে মানুষের ক্ষয়ক্ষতি করবে সেটা হতে দেওয়া যাবে না। মানুষের জানমালের ক্ষতি যেন না হয় সে জন্য আমরা মাঠে ছিলাম। ছাত্রদলের কর্মীরা যখন হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখন তাদের প্রতিহত করতে হয়তো কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী লাঠিসোটা হাতে নিতে পারে।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস এ জিন্নাহ কবীর বলেন, ‘আমি এবং সভাপতি মহোদয় সকালে গুলশান কার্যালয়ে মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলাম, মিটিং শেষ করেই রওয়ানা দিয়েও জ্যামের কারণে সমাবেশে উপস্থিত হতে পারিনি। আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে অতর্কিত হামলা করা হয়। মামলায় আমাদের নাম দেবে এটাই স্বাভাবিক ছিল, পরে শুনেছি ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ দেখে যারা উপস্থিত ছিল তাদেরকে আসামী করা হয়েছে। মামলায় আমাদের নাম থাকলেও অবাক হতাম না, বরং নাম না দেয়ায় অবাক হয়েছি। এছাড়া, শুধু মানিকগঞ্জ নয়, সারা দেশেই গণতন্ত্রের বিকাশ ও সাধারণ মানুষের কন্ঠরোধ করতে প্রশাসন ও বর্তমান সরকারের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রকাশ্য অস্ত্র মহড়ার পরেও তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়না।’
মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রউফ সরকার বলেন, সংঘর্ষের সময় ঘটনাস্থলে যারা উপস্থিত ছিলেন, মামলায় তাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অধিকতর তদন্ত করে আর কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদের নামও দেওয়া হবে। অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে তিনজনকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এছাড়া, বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে অস্ত্র নিয়ে ছাত্রলীগের মহড়ার ঘটনায় কোন ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি’না জানতে চাইলে ওসি আব্দুর রউফ সরকার বলেন, ছাত্রলীগের বিষয়টি আমার জানা ছিলনা, পরে শুনেছি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।