ইউরেশিয়াজুড়ে ১ লাখ ৩৫ হাজার ও ১ লাখ বছর আগে—এ দুটি সময়কালের মধ্যে নিয়ান্ডারথালরা প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু পরে ঠান্ডা পরিবেশের প্রতিকূলতা জয় করে তারা আবার ফিরে আসে। শত প্রতিকূলতা সহ্য করে টিকে থাকলেও আধুনিক মানুষেরা যখন আসে, তাদের অতিরিক্ত চাপের কাছে ওরা আর টিকতে পারেনি। একই সময়ে একই স্থানে বাস করায় অনেক গবেষক মনে করতেন, আধুনিক মানুষ যুদ্ধ বা নতুন ধরনের রোগ ছড়িয়ে নিয়ান্ডারথালদের বিলুপ্তিতে সরাসরি ভূমিকা রেখেছে।
এর পক্ষে কিছু প্রমাণও রয়েছে। নিয়ান্ডারথালদের কঙ্কালে সহিংসতার চিহ্ন পাওয়া গেছে। ৩৬ হাজার বছর আগে ফ্রান্সের সেন্ট সিসায়ারে পাওয়া প্রাপ্তবয়স্ক এক নিয়ান্ডারথাল তরুণের মাথার খুলিতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রায় ৫০ হাজার বছর আগে ইরাকের শানিদারে গুহায় পাওয়া আরেক প্রাপ্তবয়স্ক নিয়ান্ডারথালের বাঁ পাঁজরে ছুরিকাঘাতের ক্ষত ছিল, যদিও তা একটু সেরে গিয়েছিল।
তবে এ থেকে আধুনিক মানুষ ও নিয়ান্ডারথালরা সহিংসতায় জড়িয়েছিল কি না, তা বলা যায় না। যত দিন না প্রত্নতাত্ত্বিকেরা এমন কোনো জায়গা খুঁজে পান, যেখানে আধুনিক মানুষ নিয়ান্ডারথালদের হত্যা করেছিল, তত দিন পর্যন্ত বলা অসম্ভব—আধুনিক মানুষই নিয়ান্ডারথালদের বিলুপ্তির কারণ।
আবার আধুনিক মানুষের রোগবালাই নিয়ান্ডারথালদের হত্যা করেছে, এমন কোনো জেনেটিক প্রমাণ নেই। যদিও আমরা পরস্পর অনেক ইমিউন-সম্পর্কিত জিন ভাগ করে নিয়েছি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমরা উত্তরাধিকারসূত্রে নিয়ান্ডারথালদের কাছ থেকে কিছু জিন পেয়েছি, যা লুপাস ও ক্রোহন রোগের মতো অটোইমিউন ডিজঅর্ডার ও গুরুতর কোভিড ১৯-এর জন্য সংবেদনশীল। তবে ভবিষ্যতে জেনেটিক বিশ্লেষণ থেকে নিয়ান্ডারথালদের বিলুপ্তিতে রোগবালাইয়ের সম্ভাব্য ভূমিকার কথা জানা যেতে পারে।
সম্পদ দখলের লড়াইয়ে হারজিত
নিয়ান্ডারথালদের বিলুপ্তির পেছনে যুদ্ধ ও রোগবালাই একমাত্র সম্ভাব্য কারণ নয়। যখন দুটি গোষ্ঠী একত্র হয়, পরস্পর প্রতিযোগিতায় নামে, সেটাও মর্মান্তিক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
পেনডেন্ট, এচিংয়ের মতো আর্টিফ্যাক্ট থেকে বোঝা যায়, নিয়ান্ডারথালরা বুদ্ধিমান ছিল। যদিও নতুন গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, আধুনিক মানুষ ও নিয়ান্ডারথালদের মস্তিষ্কের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। উচ্চপর্যায়ের চিন্তার জন্য আধুনিক মানুষের আরও বেশি নিউরন রয়েছে। এই নিউরনগুলো আরও বেশি সংযুক্ত। এর অর্থ হলো, আধুনিক মানুষ সম্ভবত দ্রুত চিন্তা করতে পারত। নিয়ান্ডারথালদের ভাষা প্রক্রিয়াকরণের ক্ষমতা কম ছিল।
এ থেকে ধরে নেওয়া যায়, আধুনিক মানুষ শিকার ও খাবার খোঁজার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে বেশি সুবিধা পেয়েছিল। এ ছাড়া বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠী হয়ে বাস করায় নিয়ান্ডারথালদের সম্ভবত জৈবিক বা বায়োলজিক্যাল অসুবিধার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অসুবিধাও ছিল।
গোষ্ঠীর লোকসংখ্যা বেশি হলে এবং একে অপরের ওপর নির্ভরশীল হলে আইডিয়া বা ধারণাগুলো সহজে ছড়িয়ে পড়তে পারে। কিন্তু নিয়ান্ডারথালরা ছিল বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠী। তাই তাদের শৈল্পিক, সাংস্কৃতিক আইডিয়া ও উদ্ভাবনগুলো বিপুলসংখ্যক মানুষের মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে আগাতে পারেনি। তারা নিজেদের সময়োপযোগী হাতিয়ার তৈরি করলেও আমরা এখনো নিয়ান্ডারথালদের তৈরি দূরপাল্লার হাতিয়ারের হদিস পাইনি। বিপরীতে আধুনিক মানুষের তৈরি প্রজেক্টাইল হাতিয়ার ক্ষমতা দখলের পক্ষে ছিল সহায়ক।
তবে নিয়ান্ডারথালদের বেঁচে থাকার ওপর এই পার্থক্যগুলোর পূর্ণ প্রভাব সম্পর্কে আমরা এখনো জানি না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।