গত শতক থেকেই মহাকাশে মানুষের বিচরণ। ১৯৬১ সালে ইউরি গ্যাগারিন প্রথম মহাকাশে ভ্রমণ করেন। ১৯৬৯ সালে মার্কিন নভোচারীরা প্রথম পা রাখেন চাঁদে। টানা ৬ মিশনে ১২ নভোচারী হেঁটেছেন চাঁদের মাটিতে। মানুষের এই যাত্রা অব্যাহত রয়েছে আজও। মঙ্গলে যাওয়ার পরিকল্পনা চলছে অনেকদিন ধরেই। হয়তো আগামী দশকেই মানুষ পা রাখবে মঙ্গলে। অবশ্য এর মধ্যেই অনেকগুলো রোবট নভোযান হেঁটে বেড়িয়েছে লাল গ্রহটিতে।
মানবনির্মিত ভয়েজার নভোযান ছাড়িয়ে গেছে আমাদের সৌরজগত। ভবিষ্যতে প্রযুক্তির উন্নতির মাধ্যমে মানুষ যে মহাকাশের আরও গভীরে ও দূরে পাড়ি দেবে, তা বলা বাহুল্য। কিন্তু সেই প্রযুক্তি ব্যবহার করে কি আমরা কখনো সৌরজগতের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্রে পৌঁছাতে পারব?
পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র সূর্য। সৌররাজ। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার পার্কার সোলার প্রোব সেখানে পৌঁছে গেছে। সূর্যকে ঘিরে ঘুরছে প্রোবটি। কিন্তু সূর্য আমাদের সৌরজগতের কেন্দ্রে। আর সৌরজগতের বাইরে আমাদের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্রটির নাম আলফা সেন্টাউরি। সেটার কথা বলছি। যেতে পারব কি আমরা কখনো সেই নক্ষত্রে?
আলফা সেন্টাউরির দূরত্ব পৃথিবী থেকে ৪.৪ আলোকবর্ষ। অনেক বড় দূরত্ব পরিমাপের জন্য এই ‘আলোকবর্ষ’ এককটি ব্যবহৃত হয়। আলো ১ বছরে যতটুকু দূরত্ব পাড়ি দিতে পারে, সেটাই আলোকবর্ষ। নিশ্চয়ই জানেন, আলো সেকেন্ডে ৩ লাখ কিলোমিটার অতিক্রম করে।
এবার নিজেরাই হিসাব করুন, মিনিটে, ঘণ্টায়, মাসে এবং এক বছরে আলো কত কিলোমিটার যায়! যে দূরত্বটা পাবেন, তা হবে প্রায় ৪০ ট্রিলিয়ন কিলোমিটারের সমান। ১ ট্রিলিয়ন মানে ১ লাখ কোটি কিলোমিটার। এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, আলফা সেন্টাউরি পৃথিবী থেকে কত দূরে!
তবু সাহস করে আমরা একটু বোঝার চেষ্টা করি, সেখানে পৌঁছাতে কত সময় লাগবে। এ নিয়ে নাসার একটা হিসাব আছে। তাদের মতে, নাসার ৩৮ মিটারের একটা স্পেস শাটল ব্যবহার করে ওই দূর নক্ষত্রে পৌঁছাতে লাগবে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার বছর। এদিকে পৃথিবীর মানুষের গড় আয়ু মাত্র ৭৪ বছর। তারমানে বর্তমান প্রযুক্তির সাহায্যে আলফা সেন্টাউরিতে যাওয়ার কথা ভাবাও পাগলামি। কিন্তু কল্পনা করতে তো দোষ নেই। তাই আমরা একটু কল্পনার জগতে ভ্রমণ করি।
ধরে নিই, মানুষ ভবিষ্যতে এমন একটা নভোযান তৈরি করল, যা ছুটতে পারে আলোর গতিতে। সে ক্ষেত্রে ওই নক্ষত্রে পৌঁছাতে সময় লাগবে মাত্র ৪ বছর ৪ মাস। কিন্তু আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব বলছে, আলোর গতিতে কোনো কিছু ছুটতে পারবে না। তাঁর কথা না হয় মেনেই নিলাম।
ছুটল না আমাদের যান আলোর গতিতে। একটু কম বেগে ছুটল। আলো সেকেন্ডে ৩ লাখ কিলোমিটার যায়। আমাদের যান নাহয় সেকেন্ডে ২ লাখ ৯৯ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দেবে! এমনটা করা সম্ভব হলে পার্শ্ববর্তী নক্ষত্রে পৌঁছাতে লাগবে সর্বোচ্চ ৫-৬ বছর। আর এটা আমাদের জন্য খুব বেশি সময় নয়। যাওয়াই যায়! কিন্তু সে জন্য ওরকম নভোযান তৈরি করা চাই।
এবার একটু কল্পনা থেকে বেরিয়ে আসি। ধরে নিন, একটু আগে যা পড়েছেন, তা স্রেফ স্বপ্ন। এখন ঘুম ভেঙেছে। আগেই বলেছি, আমাদের বর্তমান প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষের পক্ষে আলফা সেন্টাউরিতে যাওয়া অসম্ভব। তবে আমরা মানুষের পরিবর্তে ভয়েজারের মতো নভোযান পাঠাতে পারি সেখানে।
হয়তো এ নভোযানের সেখানে পৌঁছাতে কয়েকশ বছর লাগবে। যদিও প্রযুক্তির উন্নতির ফলে এ সময় কমতে পারে। আর একটা নভোযান পাঠিয়েও ওই নক্ষত্র সম্পর্কে অনেক রহস্যই উন্মোচন করা সম্ভব হবে। হয়তো সেটা আমাদের জীবদ্দশায় দেখে যেতে পারব না। কিন্তু আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিশ্চয়ই দেখবে।
আশার কথা হলো, স্টার্টআপ স্পেস ইনিশিয়েটিভস ইনকর্পোরেটেডের প্রধান নির্বাহী ও নাসা ইনোভেটিভ অ্যাডভান্সড কনসেপ্টের ফেলো মার্শাল ইউব্যাঙ্কস প্রতি মিটারে ১০ গ্রামের চেয়ে কম ভরের একটি ছোট নভোযান তৈরির জন্য গবেষণা করছেন। সে গবেষণায় সফল হলে ভবিষ্যতে হয়তো আলফা সেন্টাউরির উদ্দেশে পাঠানো হবে তাঁর মহাকাশযানটি।
ইউব্যাঙ্কসের পাশাপাশি দূরের নক্ষত্রে যাওয়ার জন্য গবেষণা করছে বিজ্ঞানভিত্তিক প্রোগ্রাম ব্রেকথ্রু ইনিশিয়েটিভস। তারা তৈরির চেষ্টা করছে ন্যানোমিটার আকারের মহাকাশযান। ২০৬৯ সালে মহাকাশযান চালুর উদ্দেশে এখন থেকে নিজস্ব প্রকল্পে অর্থায়ন শুরু করেছে তারা।
তবে এসব প্রকল্পে ঝুঁকি অনেক বেশি। প্রথমে তারা যা চাইছেন, তা সঠিকভাবে সম্পন্ন হতে হবে। তারপর শুরু হবে আলফা সেন্টাউরিতে পাঠানোর কার্যক্রম। সেখানে যাওয়ার পথে আছে নানা বাধা। সেগুলো সমাধান করা খুব কঠিন। তা ছাড়া মহাকাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেক গ্রহাণু, কৃত্রিম স্যাটেলাইটের বিভিন্ন অংশ। সেগুলোতে ধাক্কা লেগে শেষ হয়ে যেতে পারে দূর নক্ষত্রে যাওয়ার স্বপ্ন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।