১৪১ বছর বাঁচবে মানুষ, তবে…
শিফারুল শেখ : বাঁচতে কে না চায়। মৃত্যুর কথা শুনলেই অনেকে আতকে ওঠেন। এতদিন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিল যে, মানুষ সর্বোচ্চ ১২০ বছর জীবিত থাকতে পারে। শত বছর আগে সংখ্যাটি আরো কম ছিল। কিন্তু এই সংখ্যাটা কীভাবে বাড়ানো যায় তা নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। বর্তমানে নারী-পুরুষের গড় আয়ু ৭৩ দশমিক ২ বছর হলেও নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ ১৪১ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। এবারের গবেষণায় সবচেয়ে বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে, পুরুষ নারীর তুলনায় বেশি দিন জীবিত থাকতে পারে।
নতুন গবেষণায় আশাবাদ
শুনতে অসম্ভব হলেও মানুষের বেশিদিন বেঁচে থাকার আশাবাদের কথা শুনিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. ডেভিড ম্যাককার্থি। তার মতে, পুরুষরা ১৪১ বছর বয়স পর্যন্ত এবং নারীরা ১৩০ বছরের বেশি বেঁচে থাকতে পারে। মোট ১৯টি দেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন গবেষকরা। তারা জানার চেষ্টা করছেন, কারা দীর্ঘদিন বাঁচতে পারেন। পিএলওএস ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত একটি জার্নালে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
ব্রিটিশদের জীবনকাল বিশ্লেষণ :জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ১৮৮০ সাল পর্যন্ত জন্মগ্রহণকারী ব্রিটিশদের জীবনকাল বিশ্লেষণ করে তাদের আয়ু্ষ্কাল কত হতে পারে তা খুঁজে বের করেছেন। তারা ১৯৭০ সালে জন্মগ্রহণকারী পুরুষদের আয়ু সর্বোচ্চ ১৪১ বছর হতে পারে বলে ধারণা করেছেন। আর নারীদের সর্বোচ্চ আয়ু হতে পারে ১৩১ বছর।
১৯৪০ সালে জন্মগ্রহণকারীদের নিয়ে গবেষণা
কিন্তু এই গবেষণা ও সমীক্ষার ওপর আস্থা প্রকাশ করেননি একটা বড় অংশ। তারা সতর্ক করে বলেছেন, এই গবেষণা ভুল হতে পারে। কারণ, গবেষণাটি নির্দিষ্ট পরিসংখ্যানগত অনুমানের ওপর নির্ভর করে হয়েছে। তারা অনেক বেশি নিশ্চিত যে, ১৯৪০ সালে জন্মগ্রহণকারী একজন পুরুষ ১২৫তম জন্মদিনে পৌঁছতে পারেন এবং একজন নারী ১২৪ বছরে পৌঁছতে পারেন।
বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি কতদিন বাঁচেন
এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি ছিলেন ফ্যান্সের জ্যঁ লুই ক্যালমেন্ট। তিনি ১২২ বছর ১৬৪ দিন বেঁচেছিলেন। দীর্ঘ জীবনে তার কোনো মানসিক চাপ ছিল না। জীবদ্দশায় কালমেন্ট বলেছিলেন, খারাপ কিছু ঘটলে আপনার কিছু করার নেই। তবে সেটি নিয়ে দুশ্চিন্তা করা যাবে না। মিষ্টি খেতে পছন্দ করা ক্যালমেন্ট ১১৯ বছর পর্যন্ত মিষ্টি খেয়েছেন। ১৮৭৫ সালে জন্মগ্রহণ করা এই নারী দুটি বিশ্বযুদ্ধ দেখেছেন। মহামারি স্প্যানিশ ফ্লুতে টিকে যাওয়া ক্যালমেন্টের সৌভাগ্য হয়েছিল ১৮৮৮ সালে বিখ্যাত চিত্রকর ভিনসেন্ট ভ্যানগগের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার। ব্রিটেনের সব থেকে দীর্ঘজীবী ব্যক্তি ছিলেন শার্লট হিউজ। যিনি ১৮৭৭ সালের অগাস্টে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং ১৯৯৩ সালের মার্চ মাসে মারা যান।
নারী-পুরুষের সমতাও বাড়াবে আয়ু
ব্রিটেনের জর্জ ইনস্টিটিউট অব গ্লোবাল হেলথ এবং ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডনের যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, সমাজে নারী-পুরুষের সমতা বাড়লে নারীর স্বাস্থ্য ও জীবন সুন্দর হয়। এর ফলে তার আয়ু বাড়ে। আর এর সঙ্গে পুরুষের জীবিত থাকার বয়সও বাড়ে। যেসব দেশে নারী-পুরুষের সমতা বেড়েছে, সেসব দেশে আয়ুও বাড়তে দেখা গেছে। বিশ্বে এই প্রথম এ ধরনের গবেষণা হয়েছে। মুখ্য গবেষক ডা. ক্যাট পিনহো গমেজ বলছেন, মানুষের বেঁচে থাকাটা নির্ভর করে কাজ এবং জীবনমানের ওপর। দূষণমুক্ত পরিবেশ, স্বাস্থ্যব্যবস্থায় অধিক অংশগ্রহণ, শিক্ষা, আয় এবং সামাজিক সমর্থন আয়ু বাড়াতে সহায়তা করে। সম্প্রতি গ্লোবাল ইকোনমিক ফোরাম এক সমীক্ষায় জানায় যে, করোনা ভাইরাস মহামারি, যুদ্ধ এবং জলবায়ুর মারাত্মক প্রভাবে বিশ্বে খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়ছে। এর ফলে মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কাজের পরিবেশও খারাপ হচ্ছে। এসব সূচক মানুষের আয়ুষ্কালকে কমিয়ে আনতে পারে।
নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে জীবনকাল
প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, মানুষ আগামী দশকগুলোতে আরো বেশিদিন বাঁচবে। কারণ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে আধুনিক ওষুধের আবিষ্কার, উন্নত পুষ্টি এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় মানুষের জীবনকাল নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১ সালে মার্কিন জেনেটিক বিজ্ঞানী ডেভিড সিনক্লেয়ার বলেছিলেন, একটি ওষুধ আবিষ্কারের চেষ্টা চলছে, যা মানুষের বার্ধক্যকে ঠেকিয়ে দেবে। ফলে মানুষ ১৫০ বছর পর্যন্তও বাঁচার আশা করতে পারেন। গবেষকরা বলছেন, মানুষের আয়ু বাড়তে বেশ সময় লাগবে। তখন হয়তো পৃথিবীর চেহারাটাও একেবারে বদলে যাবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটের ব্যবহার আরো বাড়বে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।