জুমবাংলা ডেস্ক : যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ২০০ মিলিয়ন পাউন্ডের সম্পদ ও ৩৫০টিরও বেশি সম্পত্তি নিয়ে যুক্তরাজ্যে তিনি গড়ে তুলেছেন রিয়েল এস্টেট সাম্রাজ্য। সম্প্রতি ব্লুমবার্গ নিউজের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এলে আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয় বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। এবার এই প্রসঙ্গ উঠে এসেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি, স্থানীয় সময়) দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের কাছে জানতে চাওয়া হয় ব্লুমবার্গের বিশদ প্রতিবেদন নিয়ে।
একজন সাংবাদিক তার প্রশ্নে মিলারকে বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের দুর্নীতিতে জড়িত থাকার বিষয়টি একটি ওপেন সিক্রেট। মন্ত্রিপরিষদের একজন সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে একটি সাম্রাজ্য গড়ে তোলার অভিযোগ রয়েছে, যার মূল্য ২০০ মিলিয়ন পাউন্ড। যা দেশের বৈদেশিক রিজার্ভের ১ শতাংশের সমতুল্য। সরকারকে জবাবদিহি করতে এবং বিশ্বব্যাপী দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়টিকে কীভাবে মোকাবিলা করছে?
জবাবে মিলার বলেন, এই প্রতিবেদন সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র অবগত। আমরা বাংলাদেশ সরকারকে সব নির্বাচিতদের দেশের আইন ও আর্থিক বিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে উৎসাহিত করি।
যা ছিল ব্লুমবার্গ নিউজের প্রতিবেদনে
রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ব্লুমবার্গ নিউজের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। যুক্তরাজ্যে কোম্পানি হাউসের করপোরেট অ্যাকাউন্ট, বন্ধকি চার্জ এবং এইচএম ল্যান্ড রেজিস্ট্রি লেনদেনের ওপর ভিত্তি করে ব্লুমবার্গের বিশ্লেষণে এ পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়েছে।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়, লন্ডনের উত্তর-পশ্চিম এলাকায় একটি প্রপার্টি ২০২২ সালে ১১ মিলিয়ন পাউন্ডে বিক্রি হয়। এই প্রপার্টিতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে বেশ কিছু সাদা রংয়ের বাড়ি। সেই সঙ্গে আছে সিনেমা হল ও জিমনেসিয়াম।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে সেন্ট্রাল লন্ডনের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট থেকে শুরু করে টাওয়ার হ্যামলেটসে আবাসন—যেখানে ইংল্যান্ডের বৃহত্তম বাংলাদেশি কমিউনিটির আবাসস্থল এবং লিভারপুলে শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক ভবন।
আন্তর্জাতিক এই সংবাদ সংস্থা সাইফুজ্জামান চৌধুরীর প্রায় আড়াইশ প্রপার্টির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছে, যখন এই প্রপার্টিগুলো কেনা হয়, তখন যুক্তরাজ্যজুড়ে তীব্র আবাসন সংকট চলছিল এবং এর ৯০ ভাগই ছিল সদ্য তৈরি নতুন বাড়ি।
ব্লুমবার্গ যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটনে সাইফুজ্জামানের অন্তত ৫টি প্রপার্টি খুঁজে পেয়েছে। মিউনিসিপ্যাল প্রপার্টির নথি অনুসারে, এসব সম্পত্তি ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে প্রায় ছয় মিলিয়ন ডলারে কেনা হয়েছে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীরা বলছেন, তার এসব সম্পত্তির কারণে প্রশ্ন উঠতে পারে, রাজনীতিবিদদের সম্পৃক্ততা আছে এমন লেনদেন যাচাইয়ের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের আইন আদৌ কার্যকর কি না।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ডিসেম্বরে প্রাক-নির্বাচনী ঘোষণায় সাইফুজ্জামান তার মোট সম্পদের পরিমাণ ২৫৮ দশমিক তিন মিলিয়ন টাকা (দুই দশমিক চার মিলিয়ন ডলার) এবং তার স্ত্রী রুখমিলা জামানের মোট সম্পদের পরিমাণ নয় লাখ ৯৩ হাজার ডলার বলে জানান। তিনি বাংলাদেশে সম্পদের ঘোষণাপত্রে তার যুক্তরাজ্যের সম্পদের পরিমাণ দেখাননি। মন্ত্রী হিসেবে ২০২২-২৩ সালে তার বেতন প্রায় ১০ হাজার পাউন্ড হিসাবে দেখানো হয়।
সাইফুজ্জামান যুক্তরাজ্যের ২০১৭ সালের অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং আইনে সংজ্ঞায়িত ‘পলিটিক্যালি এক্সপোজড পারসন (পিইপি)’ ক্যাটাগরিতে পড়েন। এটি যুক্তরাজ্যে ব্যবসায়িক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত সম্পত্তির এজেন্ট, ঋণদাতা, প্রপার্টি আইনজীবী এবং অন্যদের ওপর পিইপি শনাক্ত করার কাজ করে।
এইসব ব্যক্তি সম্পত্তি কেনার মতো ব্যবসায়িক লেনদেনে নিযুক্ত থাকলে তাদের সম্পৃক্ততা অতিরিক্ত তদন্তের দাবি রাখে।
ব্লুমবার্গ তাদের প্রতিবেদনে উল্লিখিত কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, যাদের মধ্যে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর জন্য সম্পত্তি কেনার সঙ্গে জড়িত আর্থিক সেবা ও আইনি প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল জানায়, ২০১৬ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে সম্পত্তি কেনায় ৬৭০ কোটি পাউন্ড মূল্যের ‘সন্দেহজনক তহবিল’ চিহ্নিত করেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।