ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান বর্বরোচিত ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে এবার ঢাকার রাস্তায় মুখরিত হতে যাচ্ছে হাজারো মানুষ। ১২ এপ্রিল শনিবার বিকাল ৩টা থেকে মাগরিবের পূর্ব পর্যন্ত ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে “মার্চ ফর গাজা” শীর্ষক গণজমায়েত। এই কর্মসূচির আহ্বান জানিয়েছে প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম।
মার্চ ফর গাজা: ফিলিস্তিনের জন্য ঢাকার সর্ববৃহৎ সংহতি
গাজার ওপর ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জনমত তৈরি এবং মানবিক সহানুভূতি জাগ্রত করতেই এই গণজমায়েতের আয়োজন করা হয়েছে। মার্চ ফর গাজা শুরুর আগে থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। দেশের খ্যাতনামা আলেম-ওলামা, স্কলার, খেলোয়াড়, মিডিয়া ব্যক্তিত্বসহ সর্বস্তরের মানুষ এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
Table of Contents
বিশেষ করে ইসলামিক স্কলার ড. মিজানুর রহমান আজহারী এক ফেসবুক পোস্টে খতিবদের প্রতি আহ্বান জানান যেন তাঁরা জুমার খুতবায় এই কর্মসূচির ব্যাপারে মুসল্লিদের উদ্বুদ্ধ করেন। এ আহ্বানের মধ্য দিয়ে ‘মার্চ ফর গাজা’ একটি জাতীয় পর্যায়ের মানবিক ও ধর্মীয় সংহতির প্রতীক হয়ে উঠেছে।
এছাড়া হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও যৌথ বিবৃতিতে এই কর্মসূচির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছে এবং দেশের সর্বস্তরের মানুষের প্রতি কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হবে মানবস্রোতে ভরপুর
মার্চ ফর গাজা কর্মসূচি শুরুতে শাহবাগ থেকে মানিক মিয়া এভিনিউ পর্যন্ত আয়োজনের কথা থাকলেও পরে তা স্থানান্তর করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নির্ধারণ করা হয়। মূল আয়োজন বিকেল ৩টায় শুরু হয়ে চলবে মাগরিব পর্যন্ত। প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এটি হবে ঢাকার রাস্তায় গাজা সংহতির সবচেয়ে বড় গণজমায়েত।
এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার কার্যক্রম চলছে জোরেশোরে। প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্টের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে একাধিক ভিডিও বার্তা পোস্ট করা হয়েছে, যাতে আলেম, স্কলার, খেলোয়াড় ও তারকারা অংশগ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছেন।
এই তালিকায় আছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ, মাহমুদুর রহমান, ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, আয়মান সাদিক, তামিম মৃধা প্রমুখ।
আয়োজকরা বলছেন, ‘দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে’ সবাইকে এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে গাজার নিপীড়িত মুসলিমদের পাশে থাকার বার্তা স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেওয়া যায়।
ইসরায়েলি আগ্রাসন ও গাজার সংকট: পটভূমি
গণহত্যার অবসান দাবি
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের ফলে হাজার হাজার নিরীহ মানুষ নিহত ও আহত হয়েছেন। নারী ও শিশুদের সংখ্যা ভয়াবহ রকমের বেশি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, বাসাবাড়ি—সবই ইসরায়েলি বোমার আঘাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত। এই পরিস্থিতি বিশ্বজুড়ে মানবিক উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্য মতে, গাজার সাম্প্রতিক পরিস্থিতিকে জাতিসংঘের অনেক সংস্থা পর্যন্ত ‘মানবিক বিপর্যয়’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এমন এক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ ও ইসলামপ্রিয় মানুষদের সমবেদনা ও প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নামা এই কর্মসূচি তাৎপর্যপূর্ণ।
সংহতির নতুন রূপ: ধর্ম, জাতি ও পরিচয়ের ঊর্ধ্বে
মার্চ ফর গাজা কর্মসূচি শুধু রাজনৈতিক কিংবা ধর্মীয় প্রেক্ষাপটেই নয়, বরং মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্ব বহন করে। এটি একটি নাগরিক আন্দোলন, যা ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক সংগঠনের সম্মিলিত উদ্যোগে রূপ পেয়েছে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ প্রমাণ করতে চায় যে, তারা নির্যাতিত মানুষের পাশে আছে, তাদের কণ্ঠস্বর বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দিতে প্রস্তুত।
মার্চ ফর গাজার মাধ্যমে ইসলামি স্কলার, তারকা খেলোয়াড় ও বিশিষ্টজনদের অংশগ্রহণ বাংলাদেশের গণমানসে একটি বিশেষ বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে—সংহতির মাধ্যমে পরিবর্তন সম্ভব। এ কর্মসূচি বর্তমান সময়ে একটি ঐক্যবদ্ধ ও মানবিক বাংলাদেশের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
FAQs
মার্চ ফর গাজা কবে অনুষ্ঠিত হবে?
১২ এপ্রিল শনিবার, বিকেল ৩টা থেকে মাগরিবের পূর্ব পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই গণজমায়েত অনুষ্ঠিত হবে।
এই কর্মসূচির পেছনে কে বা কারা রয়েছে?
এই কর্মসূচির আয়োজক প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম, যারা গাজার পক্ষে জনমত গঠনের উদ্দেশ্যে কাজ করছে।
কে কে এই কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন?
ড. মিজানুর রহমান আজহারী, মাওলানা মামুনুল হক, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, আয়মান সাদিকসহ বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা এই কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করেছেন।
মার্চ ফর গাজার মূল উদ্দেশ্য কী?
গাজার জনগণের ওপর চলমান গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো এবং বিশ্ব দরবারে গাজার মানুষের পক্ষে সমর্থন ও সহানুভূতি প্রকাশ করা।
এই কর্মসূচি কি রাজনৈতিক?
না, এটি দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একটি মানবিক ও নাগরিক আন্দোলন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।