আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মালদ্বীপে স্থানীয় মুদ্রা রুফিয়া ও মার্কিন ডলারের করভারশন রেটের মারপ্যাচে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীরা। একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরাও।
একটি উন্নত জীবন, পরিবারের এক চিলতে সুখ আর মুখ ভরা হাসি ফোটাতে নিজের সুখকে জলাঞ্জলি দিয়ে সুখ কিনতে ভিনদেশে পাড়ি জমান অসংখ্য প্রবাসী। কেউ কেউ সুখী হন।
আবার কেউ পার করেন দুঃখে ভরা জীবন। সবাই তো সুখ চান, আর সবাই যে পাবেন, এমন নিশ্চিত কথা কারো জানা নেই। তবু ভাগ্যোন্নয়নের জন্য জীবনের সঙ্গে অবিরত যুদ্ধ করে চলেন রেমিট্যান্স যোদ্ধারা।
ভিনদেশে পাড়ি জমালেও নিজ দেশের প্রতি তাদের রয়েছে অসীম মমতা আর বুক ভরা ভালোবাসা। সেজন্যই টাকা পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা গতিশীল রাখেন। কিন্তু অসংখ্য প্রবাসী আজ দুঃখ-দুর্দশার জীবন অতিবাহিত করছেন।
ভারত মহাসাগরের বুকে জেগে থাকা ছোট বড়ো প্রায় ১২০০ দ্বীপ নিয়ে গঠিত মালদ্বীপ। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের টানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা ভিড় করেন এ দেশে। বাংলাদেশ থেকেও অনেকেই এসেছেন দেশটিতে। তবে তাদের বড় একটি অংশই শ্রমিক।
একটু ভালো বাঁচার জন্যই দ্বীপরাষ্ট্রটিতে এসেছে বাংলাদেশিরা। তবে তাদের বড় একটি অংশই এখন নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। দেশটিতে এক লাখেরও বেশিসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মী আছেন। এদের মধ্যে অনেকেই অবৈধ হিসেবে কাজ করছেন।
মালদ্বীপ সরকার গত একবছর যাবৎ এই অবৈধ প্রবাসী কর্মীদের নিয়মিতকরণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রেখেছে। প্রতিটি উন্নয়নমূলক প্রকল্প প্রবাহের সঙ্গে নতুন শ্রমিকদের নিয়োগ বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্বারোপ করছে দেশটির বর্তমান সরকার।
মালদ্বীপের উন্নয়নে বাংলাদেশি কর্মশক্তির অবদানকে খুবই মূল্যায়ন করে সরকার। তবে সরকার বাংলাদেশি কর্মীদের প্রতি আন্তরিক থাকলেও এখানকার অধিকাংশ নিয়োগকর্তারা একটু ব্যতিক্রম।
দেশটিতে কর্মরত প্রবাসী বা নতুন কর্মী নিয়োগের সময় ডলারে বেতন দেয়ার কথা বলা হলেও বেশিরভাগ নিয়োগকর্তা বেতন দেন নিজস্ব মুদ্রায় বা রুফিয়ায়।
এটাই এখন প্রবাসীদের জন্য বড় সংকট। সরকারিভাবে দেশটিতে এক মার্কিন ডলারের পরিবর্তে ১৫ দশমিক ৪২ পয়সায় স্থানীয় মুদ্রা বা রুফিয়া নির্ধারণ করে। মালদ্বীপের বেশিরভাগ কোম্পানি সরকারি হিসেবই তাদের কর্মীদের স্থানীয় মুদ্রা বা রুফিয়ায় বেতন পরিশোধ করে।
মালদ্বীপে বাংলাদেশের কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংক পরিসেবা না থাকায়, প্রবাসীদের দেশে টাকা পাঠাতে হয় মানি এক্সচেঞ্জ গুলো ব্যবহার করে। সেটাও আবার মার্কিন ডলারের মাধ্যমে। এজন্য তাদের কালোবাজার থেকে ডলার কিনতে হয়।
ডলার কিনতে গিয়ে দেখা যায় সরকার নির্ধারিত মূল্যর পরিবর্তে ২ দশমিক ৫ থেকে ৩ দশমিক ৫ রুপিয়া বাড়তি গুনতে হচ্ছে। এতে প্রতি ডলারে তিন থেকে চার রুপিয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
বাংলাদেশি মুদ্রায় বা টাকার হিসাব করলে প্রতি ডলারে প্রবাসী কর্মীরা বঞ্চিত হন ২০ থেকে ২৫ টাকা। এছাড়া বিকাশে টাকা পাঠাতে চাইলে তা করতে হয় দালালের মাধ্যমে। এর জন্য প্রতি পাঁচ হাজারে খরচ করতে হয় বাড়তি ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা। এ টাকার সরকারি কোনো হিসেব থাকে না। পুরোটাই দালালের পকেটে যায়।
গত ১৩ই ডিসেম্বরে মালদ্বীপের প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী আলী ইহসানের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার রিয়ার এডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ। এ সময় উভয়ের মধ্যে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
যার মধ্যে ছিল মালদ্বীপে বসবাসরত অনথিভুক্ত প্রবাসী বাংলাদেশিদের দ্রুত বৈধকরণ, বাংলাদেশি পর্যটকদের ভিসা সহজকরণ, প্রবাসী কর্মীদের পরিবারের জন্য ভ্রমণ ভিসা অনুমোদন, চিকিৎসক পরিবারের সদস্যদের ভিসা ফি মওকুফ, বন্দি বিনিময় ও বন্দিদের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিতকরণের মতো বিষয়। আলোচনায় উঠে আসে বাংলাদেশি নতুন কর্মী নিয়োগের বিষয়ও।
মালদ্বীপের বাংলাদেশ মিশনের শ্রম কাউন্সেলর মো. সোহেল পারভেজ সময় সংবাদকে বলেন, দেশটিতে সরকারি হিসাব অনুযায়ী বৈধভাবে কাজ করছেন ৭০ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক। তার মধ্যে দক্ষ ও অদক্ষ উভয় ধরনের শ্রমিক আছেন।
তিনি আরও জানান, অবৈধভাবে মালদ্বীপের বিভিন্ন দোকান-মার্কেট-রিসোর্ট-হোটেলে নির্মাণাধীন কাজ করার পাশাপাশি ব্যবসা করছেন প্রায় ৩০ হাজারের মতো বাংলাদেশি। এসব শ্রমিকের মধ্যে যারা বৈধভাবে কাজ করছেন, তারা ভালো আছেন। যারা অবৈধভাবে বসবাস করছেন তারা কিছু সমস্যার মধ্যে আছেন। অবৈধ বাংলাদেশী শ্রমিকদের মালদ্বীপ সরকারের মাধ্যমে নিয়মিতকরণ প্রক্রিয়ার কাজ চলমান রয়েছে।
সোহেল পারভেজ বলেন, আমরা মালদ্বীপ সরকারের সাথে বাংলাদেশি কর্মীদের ডলারে বেতন পরিষদের বিষয়ে এবং স্থানীয় মুদ্রায় যেনো বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠাতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনা করেছি। মালদ্বীপ সরকার বিষয়টি সমাধানে আমাদের আস্বস্ত করেছেন। তবে বর্তমানে মালদ্বীপে ডলার সংকট রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
মালদ্বীপে একটি বাংলাদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা খোলার বিষয়েও ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন মিশন কাউন্সেলর সোহেল পারভেজ।
শ্রমিকদের পাশাপাশি রুফিয়া ও ডলারের মারপ্যাচে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরাও। পণ্য আমদানি করতে তাদেরকেও রুফিয়া থেকে ডলার কনভারশন করতে হয়। আমদানিকৃত পণ্যের বাজারজাতকরণেও সেইভাবেই দরদাম ঠিক করতে হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।