আরিফুল ইসলাম, মালয়েশিয়া থেকে : মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের অনেক সফলতার গল্প রয়েছে। গল্প রয়েছে সাধারণ কর্মী থেকে ব্যবসায়ী হওয়ার, ছাত্র থেকে শিক্ষক হওয়ার, কিন্তু ব্যবসার ক্ষেত্রে অনেকে একত্রে সমবায়ী হয়ে সফলতা মোটেও নেই বললে চলে। এক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশি ১২ তরুণের ‘দশের লাঠি একের বোঝা’ হওয়ার গল্পটা একটু অন্যরকম।
তাদের যাত্রাটা খুব বেশি দিনের নয়। কাজের শেষে বন্ধুরা আড্ডায় বসে চিন্তা করলেন নিজেদের জন্য কিছু একটা করতে হবে। কি করা যায়, কি করা যায়- করতে করতে তাদের মধ্যে একজনের উদ্যোক্তা হওয়ার চিন্তা মাথায় আসে। কিন্তু বাদ সাধলো কি নিয়ে কাজ করা যায় তা নিয়ে? এর মধ্যে হঠাৎ একদিন পাইকারি মার্কেটে খোঁজ নেন তারা। তখন তারা বুঝতে পারেন ইলেক্ট্রনিক পণ্য বাজারে বেশি মূল্য দিয়ে কিনতে হয় বাংলাদেশি প্রবাসীদের। তারা তখন চিন্তা করেন কীভাবে কম মুনাফায় দেশি পণ্য বাংলাদেশি সহ সকল প্রবাসীর হাতে তুলে দেয়া যায়। শুরুটা হয় সমিতির মাধ্যমে অর্থের সংগ্রহ করা।
এই পদ্ধতিতে প্রায় দুই লাখ রিঙ্গিতের একটা ফান্ড তৈরি করে তারা।
প্রথমে ২০২২ সালের ১লা সেপ্টেম্বর ফাইন্যান্স এসোসিয়েশন অফ ফ্রেন্ডস নামে একটি সমিতি গঠন করে এই ফান্ড নিয়ে ১২ যুবক এই সমিতির ছাতার নিচেই তারা ব্যবসা শুরু করলেন। যাত্রা শুরু হয় মূলত এ.জে. রানা ও মো. আল-আমিনের হাত ধরে। প্রথমে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের চৌকিটে জিএম প্লাজায় ছোট পরিসরে একটি দোকান ভাড়া নেন তারা। সেই পথচলা শুরু থেকে বর্তমানে জি এম প্লাজায় দুটি ও চৌকিটের আশেপাশে আরও দুটি শোরুম রয়েছে তাদের। ইলেক্ট্রনিক্স আইটেম, মোবাইল অ্যাক্সেসরিজ, ব্যাগ, পারফিউম, কম্বল ও চকলেট সহ নানান ধরনের পণ্য তাদের শোরুমে রয়েছে। তারা খুব শিগগিরই মালয়েশিয়ার মিনি ঢাকা নামে পরিচিত কোতারায়াতে আরও একটি শো-রুম খোলার চেষ্টা করছেন।
ফাইন্যান্স এসোসিয়েশন অফ ফ্রেন্ডস চিফ মার্কেটিং এ জে রানা জানান, আমাদের কোম্পানির ব্র্যান্ড হিসেবে নিজেদের পরিচয় করাতে চাই, যার ফলে বাংলাদেশিদের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন থাকবে। আমরা অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলেছি। আমরা চাই মালয়েশিয়ার বিভিন্ন রাজ্যে শো-রুম দিবো যেখানে বাংলাদেশি প্রবাসীদের বেশি বসবাস রয়েছে। সমবায়ী ম্যানেজিং ডিরেক্টর আমির হোসেন বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র ব্যবসা নয়। প্রবাসে নিজ দেশের ব্রান্ডিং করা এবং কমমূল্যে দেশি ভাইদের হাতে মানসম্পন্ন পণ্য হাতে তুলে দেয়াই আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। ঈদে প্রবাসীরা তাদের প্রিয়জনদের সঙ্গে দেখা করতে দেশে যায়। এই সময়ে তারা কম্বল, চকলেট ও নানান ধরনের আতর, পারফিউম ইত্যাদি দেশে নিয়ে যান। একজন প্রবাসী তার কষ্টের টাকা দিয়ে যেন বেশি প্রডাক্ট কিনতে পারেন। তার টাকা যাতে সাশ্রয় হয় সেদিকেই তাদের বেশি নজর।
তাদের শো-রুমে বেশির ভাগ পণ্যই বাংলাদেশি। এ ছাড়াও পাকিস্তান, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার ও লোকাল মালয়েশিয়ানদের কাছেও তারা পণ্য বিক্রি করেন। ভবিষ্যতের এই তরুণদের আশা তাদের স্বপ্নকে আরও বড় আকারে প্রসারিত করবেন। মালয়েশিয়ায় হানিফা, হাইপার মার্কেট লুলু, মাইডিনের মতো বড় শো-রুম চেইন স্থাপন করার ইচ্ছা তাদের। যেখানে কম দামে বাংলাদেশি প্রবাসীদের হাতে পণ্য তুলে দিতে বদ্ধপরিকর এই তরুণ সমবায়ীরা। ইতিমধ্যে তারা মালয়েশিয়ার ই-কমার্স অনলাইন প্ল্যাটফরম লাজাদা এবং শপিতে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। কোম্পানিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আল-আমিন বলেন, আমরা আমাদের পণ্যের মান ঠিক রেখে অন্যান্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সুস্থ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ব্যাবসা করতে চাই। এই ১২ তরুণ উদ্যোক্তা মালয়েশিয়ার বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও জড়িত রয়েছেন। প্রবাসীদের নানান সমস্যায় তারা এগিয়ে আসেন। তাদের উদ্যোগ আর জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের কমিউনিটিতে বেশ প্রশংসা পেয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।