আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সাধারণত একটি ভ্রূণ থেকে পূর্ণাঙ্গ মানবশিশু হয়ে গর্ভে বেড়ে উঠে। কিন্তু কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ঘটল বিরল এক ঘটনা। থ্রিডি স্ক্যানে দেখা গেল, পাঁচ মাস ধরে মায়ের পাকস্থলী, অন্ত্র, খাদ্যনালী ও লিভারের ফাঁকে বেড়ে উঠছিল শিশু। পরে মাকে বাঁচাতে তাড়াতাড়ি অস্ত্রোপচার করে বের করা হয়েছে ওই ৫ মাসের গর্ভস্থ শিশুটিকে। চিকিৎসকরা বলছেন, এমন ঘটনা বিস্ময়কর। বিরলের মধ্যে বিরলতম।
ভারতের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার প্রতিমা বাগ নামে ২৫ বয়সী এক তরুণী পেটের যন্ত্রণা নিয়ে ভর্তি হন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। চিকিৎসকেরা আগের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট দেখেন। পরে নতুন করে কিছু পরীক্ষা, অল্ট্রাসোনোগ্রাফি করানো হয় প্রতিমার। কিন্তু কিছুই ধরা পড়েনি। শেষে ইউরিন প্রেগন্যান্সি টেস্ট করে বোঝা যায় মহিলা অন্তঃসত্ত্বা। কিন্তু খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না গর্ভস্থ সন্তানের। কোনোভাবেই জরায়ুর মধ্যে কোনো কিছুরই খোঁজ না মেলায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, থ্রিডি স্ক্যান করা হবে প্রতিমার। গত শুক্রবার এনসিসিটি বা নন কন্ট্রাস্ট সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট দেখে চোখ কপালে ওঠে চিকিৎসকদের। দেখা যায় মাথা হাত-পা সমেত পূর্ণ শারীরিক গঠন নিয়ে সন্তান বাড়ছে প্রতিমার পাকস্থলী, লিভার, অন্ত্রের মতো একাধিক প্রত্যঙ্গের মাঝে প্রায় ৫ মাস ধরে।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক প্রবোধ সোরেন ও পূজা ব্যানার্জি ভৌমিক বলেন, গর্ভে সন্তান প্লাসেন্টার বদলে বিপজ্জনক জায়গায় বড় হচ্ছিল। মায়ের নিয়মিত পিরিয়ড হওয়ার কারণে তিনি বুঝতেও পারেননি যে তার গর্ভে সন্তান এসেছে। খাদ্যনালী, লিভার এবং পাকস্থলীর দেয়াল থেকে গর্ভস্থ শিশু তার খাবার সংগ্রহ করছিল। কিন্তু আর একটু বড় হলেই সে যেভাবে খাবার সংগ্রহ করতো, তাতে মায়ের শরীরের অভ্যন্তরে বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা তৈরি হতো। ফলে মায়ের মৃ*ত্যুর সম্ভাবনা থাকতো।
প্রবোধ সোরেন ও পূজা ব্যানার্জি ভৌমিক আরো জানান, সাধারণত এ ধরনের ঘটনায় ১০ হাজারে একটি সন্তান বাঁচে। তাই এক্ষেত্রে মাকে বাঁচানোর জন্য অস্ত্রোপচার করে গর্ভস্থ শিশুকে বাদ দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিলো না।
এদিকে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী প্রথমে প্রতিমার হিমোগ্লোবিন ছিলো ৭। শুক্রবার ও শনিবার পর পর দু’ ইউনিট ব্লাড দেওয়া হয় তাকে। এরপর শনিবার অস্ত্রোপচার হয় প্রতিমার। তবে প্রাণে বেঁচে গেলেও মা হতে না পারার ঘটনায় খানিকটা মুষড়ে পড়েছেন প্রতিমা।
প্রতিমা বারবার বলছেন, ‘বুঝতেই পারলাম না যে, আমি সন্তানসম্ভবা।’
এই ঘটনায় চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এটি এক ধরনের অ্যাবডোমিনাল প্রেগন্যান্সি। হিস্ট্রোপ্যাথলজি পরীক্ষা করে এটি প্রাইমারি অ্যাবডোমিনাল প্রেগন্যান্সি নাকি সেকেন্ডারি অ্যাবডোমিনাল প্রেগন্যান্সি; সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে চাইছে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ।
মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, যদি এটা প্রাইমারি অ্যাবডোমিনাল প্রেগন্যান্সি হয়, তাহলে তা বিশ্বের চিকিৎসাবিজ্ঞানের দরবারে এটা ২৬তম ঘটনা হিসেবে উল্লিখিত থাকবে। সূত্র: দ্য ওয়াল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।