আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর নেতা মুশতাক আহমেদ রীতিমত ‘ছি ছি’ করে উঠেছেন; বলেছেন, এ তো লজ্জাজনক! দেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার উল হক কাকার তো তদন্তেরই নির্দেশ দিয়ে বসেছেন।
অনলাইনে পাকিস্তানিরা, বিশেষ করে পুরুষেরা সমালোচনার ঝড় বইয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কাকে নিয়ে এত সমালোচনা?
তিনি ২৪ বছর বয়সী এক তরুণী, নাম এরিকা রবিন। ধর্মে খ্রিষ্টান, বাড়ি করাচিতে। আসছে নভেম্বরে এল সালভাদরে অনুষ্ঠেয় সুন্দরী প্রতিযোগিতা মিস ইউনিভার্সে তিনিই পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছেন।
পাকিস্তান থেকে মিস ইউনিভার্সে প্রতিযোগী পাঠাতে এবারই প্রথম বাছাই পর্ব হয়। তবে সেটা পাকিস্তানে নয়, হয়েছে মালদ্বীপে। সেখানে সেরা পাঁচজনের মধ্য থেকে তিনি মিস ইউনিভার্স পাকিস্তান নির্বাচিত হয়েছেন এরিকা রবিন।
আর এ ঘটনা রক্ষণশীল মুসলিম দেশ পাকিস্তানে যে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে, তাই তুলে ধরা হয়েছে বিবিসির এক প্রতিবেদনে।
বিশ্বজুড়ে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত নারীদের জন্য ২০০২ সালে টরন্টোয় ‘মিস পাকিস্তান ওয়ার্ল্ড’ প্রতিযোগিতার আয়োজন হয়েছিল। ২০২০ সালে সেটা হয় লাহোরে।
মিস পাকিস্তান ইউনিভার্সাল, মিসেস পাকিস্তান ইউনিভার্সাল এবং মিস ট্রান্স পাকিস্তানের মত বিভিন্ন পর্বে অনুষ্ঠিত হয়েছে সে প্রতিযোগিতা। তবে মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতার ৭২ বছরের ইতিহাসে পাকিস্তান থেকে কেউ কখনো অংশ নেননি।
দুবাইভিত্তিক ইউজেন গ্রুপ এবারই প্রথম মালদ্বীপে মিস ইউনিভার্স পাকিস্তান প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। ইউজেন গ্রুপ মিস ইউনিভার্স বাহরাইন ও মিস ইউনিভার্স মিশরের ফ্র্যাঞ্চাইজিরও মালিক। তারা জানিয়েছে, মিস ইউনিভার্স পাকিস্তান প্রতিযোগিতায় ‘বিপুল সংখ্যক’ আবেদন পেয়েছিল তারা।
রবিন বিবিসিকে বলেছেন, “পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করতে পারব, আমার দারুণ লাগছে। কিন্তু এত সমালোচনা কেন হচ্ছে, সেটা বুঝে উঠতে পারছি না। আমার ধারণা, আমি ঘরভর্তি পুরুষের সামনে সাঁতারের পোশাক পরে হেঁটে যাব, সেটা ভেবেই এক কথা হচ্ছে।”
পাকিস্তানের রক্ষণশীলদের একটি বড় অংশ চান না, তাদের দেশের কেউ এমন প্রতিযোগিতায় অংশ নিক। বিশেষ করে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তানে এ ধরণের সুন্দরী প্রতিযোগিতা বিরল।
রবিন জানান, প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় পর্বটি হয়েছিল জুমে। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, নিজের দেশের জন্য তিনি কী করতে চান।
জবাবে তিনি বলেছিলেন, “পাকিস্তান একটি পিছিয়ে পড়া দেশ- এমন মানসিকতার পরিবর্তন করতে চাই আমি।”
শত বিতর্কের মধ্যেও ফ্যাশন মডেল, লেখক ও সাংবাদিকদের অনেকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এরিকা রবিনকে।
পাকিস্তানি মডেল ভেনিজা আহমেদ ‘ভয়েস অফ আমেরিকা’র কাছে প্রশ্ন রেখেছেন, “এই পুরুষরাই যখন ‘মিস্টার পাকিস্তান’ নামের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় দারুণভাবে অংশ নেন, তাহলে একজন নারীর অর্জন নিয়ে তাদের এত সমস্যা কেন?”
করাচিভিত্তিক লেখক রাফায় মেহমুদ বিবিসিকে বলেন, পাকিস্তানিরা অনেক বেশি ‘দ্বান্দ্বিক’ জাতি।
“শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান একটি কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র, যেখানে প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক উভয় ক্ষেত্রে কঠোর পুরুষতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটে। এরিকা রবিন যে জটিলতায় পড়েছেন, তা এরই একটি সম্প্রসারিত রূপ।”
সেন্ট প্যাট্রিক হাই স্কুল ও গভার্নমেন্ট কলেজ অব কমার্স অ্যান্ড ইকোনমিকসের স্নাতক রবিনের অবশ্য নিজের অবস্থান নিয়ে কোনো সংশয় নেই। তার ভাষ্য, তিনি কোনো ভুল করেননি।
“আমি একটি বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করে কোনো আইন ভঙ্গ করছি না। আমি এ ধরনের গৎবাঁধা ধারণাগুলো ভাঙতে আমার দিক থেকে লড়াই করে চলেছি।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।