জুমবাংলা ডেস্ক: সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে চাকরি দেয়ার কথা বলে ১৫ বছর বয়সে প্রিয়াকে ভারতে পাচার করে দেন তার এক আত্মীয়৷ এরপর সেখানে যৌন ব্যবসায় জড়াতে বাধ্য করা তাকে৷ খবর ডয়চে ভেলের।
পশ্চিমবঙ্গের একটি পতিতালয় থেকে কয়েক দফা পালানোর চেষ্টা করেও পালাতে পারেননি প্রিয়া৷ ভাগ্যের জেরে এক পুলিশি অভিযানে অনেকের সঙ্গে পতিতালয় থেকে উদ্ধার পেয়েছেন তিনি৷ কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিল প্রক্রিয়ার কারণে তিন বছরেও দেশে ফেরার প্রহর শেষ হচ্ছে না তার৷
বর্তমানে ২৪ বছর বয়সি প্রিয়া পশ্চিমবঙ্গের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন৷ তার সঙ্গে আরো ১৮০ জন বাংলাদেশি নারীকে উদ্ধার করা হয়েছিল৷ তবে ভারত ও বাংলাদেশের জটিল ও দীর্ঘ আমলাতান্ত্রিত প্রক্রিয়ার কারণে প্রিয়ার মত অনেকে এখনো দেশে ফেরার ছাড়পত্র পাননি৷ যারা দেশে ফিরেছেন তাদেরও লেগে গেছে কয়েক বছর৷
‘‘আমি আর কত দিন অপেক্ষা করব?” নিজের প্রকৃত নাম, পরিচয় গোপন করে পতিতালয়ে পাওয়া নাম জানিয়ে বলেন প্রিয়া৷ আশ্রয়কেন্দ্রে নিজের কক্ষে বসে তিনি বলেন, ‘‘তারা আমার কাছে ফেরার দিন জানতে চাইলে আমি বলবো, আমি আর যাব না৷”
থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনের এক বিশ্লেষণ বলছে, দেশে ফিরতে ইচ্ছুক এমন ভুক্তভোগীবাকর্মী, বিচারক, সীমান্তরক্ষী বাহিনী, উভয় দেশের আমলাদের অনুমোদন নেওয়াসহ প্রায় ১৫টি ধাপ পার করতে হয়৷৷ এসব প্রক্রিয়া শেষে মেলে দেশে ফেরার অনুমতিপত্র৷
ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশই পাচার হওয়াদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া তরান্বিত করার চেষ্টা করলেও এখনও তাদের দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়৷
থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন বলছে, এর ফলে বাড়ি ফিরে নতুন করে জীবন শুরুর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে পারে এবং তারা আবারো পাচারের ঝুঁকিতে পড়তে পারেন৷
বাংলাদেশে থেকে যারা পাচার হয়ে যান তাদের নিয়ে কাজ করে জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ার৷ এই সংস্থাটির তরিকুল ইসলাম বলেন, “আশ্রয়কেন্দ্রে বাস করা … বেদনাদায়ক হতে পারে৷ যখন তারা দুই বছর বা তারও বেশি সময় পর ফিরে আসে, তখন পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য করা তাদের জন্য কষ্ট হয়ে যায়৷”
বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রে প্রতারণার শিকার হয়ে যৌনপল্লীতে হাজির হন মেয়েরা৷ প্রত্যন্ত অঞ্চলের অতিদরিদ্র্য পরিবারের সদস্যরা কখনো কখনো অর্থের লোভে মেয়েদের বিক্রি করে দেন বলে জানিয়েছে একাধিক আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থা৷ এছাড়া ভালোবাসার ফাঁদে ফেলে কিংবা বিদেশ যাওয়ার লোভ দেখিয়েও মেয়েদের যৌনপল্লীতে আনা হয়৷
‘‘কেউ বাড়ি ফেরার পরেও পাচারকারীরা তাদের খোঁজ রাখে৷ যখন দেখে যে, দেশে ফিরেও সে কোনো কাজ পাচ্ছে না বা মানিয়ে নিতে পারছে না তখন সে আবার তাকে পাচারের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে৷”
প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া নারীদের বেশিরভাগই পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত হয়৷ তবে এ নিয়ে সরকারি তথ্য নেই৷
গত আট বছরে ভারত থেকে এক হাজার ৭৫০ জন পাচার হওয়া নারীকে ফিরিয়ে এনেছে বাংলাদেশ৷ এদের বেশিরভাগই পশ্চিমবঙ্গ ও মহারাষ্ট্রে পাচার হয়েছিল৷
প্রত্যাবাসনের গতি বাড়াতে ২০১৫ সালে ভারত ও বাংলাদেশ একটি সমঝোতায় আসে৷ এটি কার্যকর করতে উভয় দেশ শিগগিরই একটি চুক্তি করবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন৷
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ফেরদৌসী আক্তার বলেন, প্রত্যাবাসান প্রক্রিয়া শেষ করতে ১৮ থেকে ২২ মাস সময় লাগে৷ তবে বিভিন্ন সংস্থাগুলো বলছে, এই প্রক্রিয়া শেষ করতে ছয় পর্যন্ত লেগে যায়৷
ফেরদৌসী বলেন, ‘‘ভুক্তভোগীকে ভারত থেকে প্রত্যাবাসনের জন্য অনেক স্তরের মধ্য দিয়ে যেতে হয়৷ আমরা এই স্তরগুলো কমিয়ে আনতে আলোচনা করছি৷ …ক্ষতিগ্রস্থরা অবশ্যই দ্রুততম সময়ে ফিরতে পারবেন৷”
ঢাকার উপকণ্ঠে বসবাসকারী বাসিরন জানান, তার দুই মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার এক বছর পর ভারতের একটি পতিতালয়ে তাদের সন্ধান মেলে৷
৪৭ বছর বয়সি এই নারী বলেন, “আমি যখন এই সংবাদটি শুনলাম তখন আমি আর্তনাদ করেছিলাম, আমার মনে হয়েছিল আমার বুক ফেটে যাচ্ছে৷”
তার মেয়েদের বয়স এখন ১৬ ও ১৭ বছর জানিয়ে বাসিরন বলেন, ২০১৭ সালে তাদের পশ্চিমবঙ্গের একটি পতিতালয় থেকে উদ্ধার করা হয়৷ সেখানে তাদের একটি ঘরে রাখা হত, মারধর করা হত, জোর করে নেশা করিয়ে ধর্ষণ করা হত৷
দুই বছর পরেও এই দুই নারী বাড়ি ফেরার অপেক্ষা করছে৷ কবে তাদের সেই অপেক্ষার প্রহর শেষ হবে নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছে না৷
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।