জুমবাংলা ডেস্ক: ঘরে বসেই বিদেশি সব ক্রেতাদের চাহিদা মতো কাজ সম্পন্ন করছেন। এই কাজের বিনিময়ে অর্জন করছেন বৈদেশিক মুদ্রা। ফ্রিল্যান্সিংয়ের এই আয়ই বদলে দিয়েছে বেকার মুস্তাকিম জনির ভাগ্য। ঘরে ফিরেছে স্বচ্ছলতা। চলছে লেখাপড়াও। মুস্তাকিম জনির বাড়ি নাটোরের গুরুদাসপুরের সীমান্ত নাছিয়ারকান্দী গ্রামে।
শুধু মুস্তাকিম জনি একা নন। গুরুদাসপুরে তার মতো অনেক যুবকই এভাবেই ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে প্রতি মাসে শত শত ডলার আয় করছেন। যা দিয়ে বেকার ওই যুবকদের লেখাপড়াসহ চলছে সাংসারিক কিছু চাহিদাও।
মুস্তাকিম জনি জানান, শুরুতে এক বেসরকারি আইটি ট্রেনিং সেন্টারে মাইক্রোসফট অফিস অ্যাপ্লিকেশনের ওপর ক্লাস নিতেন। কিন্তু তাতে সংসার চলছিল না। এ কারণে আয়ের বিকল্প চিন্তা ঘিরে ধরে তাকে। সে সময় থেকেই নতুন করে ডিজিটাল মার্কেটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্টের মতো কাজ তিনি রপ্ত করেন। এরপর পর ২০১৬ সালে শুরু হয় তার ফ্রিল্যান্সিং জগতের কর্মজজ্ঞ।
ফ্রিল্যান্সিংয়ে প্রবেশ করে মুস্তাকিম জনি এখন সফল ফ্রিল্যান্সার এবং ডিজিটাল উদ্যোক্তা। এতের তার সংসারের অভাবও দূর হয়েছে। এখন সংসারের চাহিদা পূরণ করে তিনি নিজের লেখাপড়ার খরচের যোগানও দেন এই আয় থেকেই। মুস্তাকিম জনি প্রতি মাসে ৪০০ থেকে ৫০০ ইউএস ডলার আয় করেছেন। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারি মাদরাসায় মিসকাতে অধ্যয়ন করছেন। পাশাপাশি তিনি ডিজিটাল এয়ার নামের একটি আইটি প্রতিষ্ঠান চালু করেছেন। ওই আইটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং দেশের বাহিরে ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং ও ডিজিটাল মার্কেটিংসহ বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছেন।
তরুণ এই উদ্যোক্তা মুস্তাকিম জনি স্বপ্ন দেখেন তার এই ডিজিটাল এয়ারকে বড় প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার, যেখানে তরুণরা প্রশিক্ষণ নিয়ে ক্যারিয়ার গড়তে পারবে। পড়াশোনার পাশাপাশি তরুণরা যেন আয় করতে পারে ডিজিটাল প্লাটর্ফম থেকে এমন একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন তিনি।
তিনি আরো জানান, দেশকে এগিয়ে নিতে আইটি সেক্টর অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে। অনেক তরুণ চাকরি না পেয়ে হতাশায় ভোগে, এখন যে কেউ চাইলে নিজের ক্যারিয়ার প্রযুক্তিতে গড়তে পারে। হতাশায় না থেকে প্রযুক্তিতে ক্যারিয়ার গড়ার অনেক বড় সম্ভবনা আছে আর তরুণদের এটি কাজে লাগানো উচিত বলে মনে করেন ডিজিটাল এয়ার নামে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ও ডিজিটাল উদ্যোক্তা মুস্তাকিম জনি।
তার বাবা লোকমান হোসেন বলেন, তিন ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার। তিনি পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিলেন। এলাকায় কোকারিজের ব্যবসা করলেও বয়সের ভারে এখন পারছেন না ওই ব্যবসা করতে। তবে মেজ ছেলে মুস্তাকিম জনি কওমি মাদরাসায় লেখাপড়া করলেও ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আয় করেন। মূলত তার পর থেকেই সংসারে অভাব দূর হতে থাকে। মুস্তাকিমের ফ্রিল্যান্সিংয়ের অর্থে তারা এখন সাবলম্বি।
গুরুদাসপুরের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক সহকারি প্রোগ্রামার মো. শাহিনুর ইসলাম জানান, তাদের অফিসের হিসাব মতে, গুরুদাসপুর উপজেলার প্রায় ১ হাজারের বেশি শিক্ষিত যুবক ঘরে বসেই ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন। চাকরির পিছনে ছোটাছুটি না করে শিক্ষিত যুবকরা ফ্রিল্যান্সিংয়ে প্রবেশ করলে এই খাত থেকে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী এক বছরে ফ্রিল্যান্সার বৃদ্ধি পাবে অধিক হারে। তবে সরকারি ভাবেও এসব ফ্রিল্যান্সারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি নতুনদের ফ্রিল্যান্সিংয়ের আসার জন্য উৎসাহি করা হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।