জুমবাংলা ডেস্ক : দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের ইউএনও ওয়াহিদা খানমের বাসায় ঢুকে তার ওপর হামলা চালানো দুর্বৃত্তরা পিপিই পরেছিল। সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে হামলাকারী ছিল দুজন। তবে মই বেয়ে ভেনটিলেটর দিয়ে একজন প্রবেশ করে। তিনি একঘণ্টার মতো সেই রুমে অবস্থান করেছিল বলেও ফুটেজে দেখা গেছে। তাদের বয়স আনুমানিক ৩০ থেকে ৩৫ বছর। ঘটনার সময় ইউএনওর বাড়িতে দায়িত্বে থাকা নৈশপ্রহরীকে জিজ্ঞসাবাদ করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিরুল ইসলাম সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানান।
বুধবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে উপজেলা পরিষদ ক্যাম্পাসে ইউএনওর বাসভবনের গেটে দারোয়ানকে বেঁধে ফেলে তারা দুর্বৃত্তরা। পরে বাসার পেছনে গিয়ে মই দিয়ে উঠে ভেনটিলেটর দিয়ে বাসার ভেতরে প্রবেশ করে। ভেতরে ঢুকে ভারি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও আঘাত করে ইউএনও ওয়াহিদাকে গুরুতর আহত করে হামলাকারীরা। মেয়েকে বাঁচাতে এলে তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখকে (৭০) জখম করে। তারা অচেতন হয়ে পড়লে মৃত ভেবে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
উভয়েরই শরীর ও মাথায় আঘাত লেগেছে। গুরুতর আহত ওয়াহিদাকে প্রথমে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে তাকে এয়ার অ্যাস্বুলেন্সে করে ঢাকায় এনে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার ঘটনা তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। বৃতস্পতিবার মন্ত্রণালয়ে এক তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে এসে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কারা এই হামলা চালিয়েছে, তা খুব দ্রুত জানা যাবে। অতি অল্প সময়ের মধ্যে আশা করি জটটা খুলবে এবং আমরা অত্যন্ত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
জানা গেছে, ইউএনও ওয়াহিদা খানমের বাবা ওমর আলী প্রতিদিন সকালে হাঁটাহাঁটি করেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে তিনি বাড়ি থেকে হাঁটার জন্য বের না হওয়ায় তার সঙ্গিরা খোঁজ নিতে বাড়িতে যান। পরে বাড়িতে ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া না পেয়ে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এসে ইউএনও ও তার বাবাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।
ওয়াহিদার স্বামী বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ৩১ ব্যাচের কর্মকর্তা মেজবাহুল হোসেন রংপুরের পীরগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তাদের তিন বছর বয়সী এক ছেলে রয়েছে। আর ওয়াহিদার বাবা নওগাঁ থেকে মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন।
জেলা প্রশাসক হামিদুল আলম বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘হত্যার উদ্দেশ্যেই এই হামলা চালানো হয়েছে বলে আমরা মনে করছি। তদন্ত করার পর পুরো ঘটনা জানা যাবে।’
এদিকে ইউএনও আহত হওয়ার খবর পেয়ে রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার ওয়াদুদ ভুইয়া, জেলা প্রশাসক হামিদুল আলম, র্যাব-১৩ রংপুর প্রধান কমান্ডার রেজা আহাম্মেদ ফেরদৌস, মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, রংপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নুরন্নবী লাইজু, হাসপাতালের পরিচালক ডা. ফরিদুল ইসলামসহ জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন উপজেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানমের অবস্থা পরিদর্শনে আসেন।
ঘোড়াঘাট থানার ওসি আমিরুল ইসলাম জানান, ‘কারা কীভাবে এ হামলা চালালো তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুরো উপজেলা পরিষদ চত্বর সিসি ক্যামেরায় আওতায়। সেটাও পরীক্ষা করা হচ্ছে।’
এদিকে রংপুর র্যাব-১৩ প্রধান কমান্ডার রেজা আহাম্মেদ ফেরদৌস জানান, আমরা ঘটনা জানার পরপরই পুরো এলাকা কর্ডন করেছি। আশেপাশের এলাকা থেকেও আমাদের একাধিক টিম যোগ দিয়ে কাজ শুরু করেছে। আশা করি আমরা দায়ীদের ধরতে পারবো।
রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার ওয়াদুদ ভুইয়া বলেন, এটা একটা জঘন্য ঘটনা। এর সঙ্গে যারাই জড়িত থাক তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওয়াহিদা খানমকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।