মাহমুদ আহমদ : সমাজের প্রতিটি স্তরে মন্দ কাজের ছড়াছড়ি। আমাদের অবস্থা এমন হয়েছে যে, দিনের পর দিন নানা অপকর্মের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ছোট বড় কোনো পাপকেই আমরা পাপ মনে করছি না। আমাদের চিন্তা-চেতনা এমন যে, যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকবো, মৃত্যু কখনো স্পর্শ করতে পারবে না। প্রকৃত পক্ষে এমন চিন্তা বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়।
বিশ্বজুড়ে মহামারি করোনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, মৃত্যু যখন আসবে তখন পাহাড়সম ধন-সম্পদ এবং ক্ষমতা তা ঠেকাতে পারবে না। তারপরও আমরা প্রতিনিয়ত বিরামহীনভাবে মন্দ কাজ করেই যাচ্ছি। আল্লাহকে ভুলে যাচ্ছি। মৃত্যুর কথাও স্মরণ করছি না। মহান আল্লাহ তাআলা কুরআনে ইরশাদ করছেন-
’তোমরা যেখানেই থাকো না কেন মৃত্যু তোমাদের স্পর্শ করবেই।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৩৪)
হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো- হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সবচেয়ে বুদ্ধিমান কে? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি বেশি মৃত্যুর কথা স্মরণ করে এবং মৃত্যুর পরের জীবনের প্রস্তুতি গ্রহণ করে।’ (ইবনে মাজাহ)
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, হে মানব সম্প্রদায়! সুখ শান্তি বিনাশকারী মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ কর।’ (তিরমিজি, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)
দুনিয়ার চাকচিক্যময় জীবনের মোহে আমরা বেশির ভাগ সময় মত্যুর মতো অবধারিত সত্য ভুলে নানা অপরাধে জড়িয়ে পাড়ি। আমরা যদি মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করি তবে বিভিন্ন অপকর্ম ও সব মন্দ কাজ থেকে রক্ষা পেতে পারি। এ কথাই বলেছেন বিশ্বনবি- ‘জীবনের স্বাদ বিনষ্টকারী মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ কর।’ (তিরমিজি)
যখন মৃত্যুর কথা স্মরণ হবে তখনই ভালো কাজ করবে মানুষ। তখনই অন্যায় অপরাধ থেকে ফিরে থাকবে। আর তাতে পরকালের ভান্ডার ভারি হতে থাকবে। হাদিসে এসেছে-
এক সাহাবি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! দুনিয়াতে সবচেয়ে বুদ্ধিমান কারা? তিনি জবাবে বললেন, যারা বেশি বেশি মৃত্যুর কথা স্মরণ করে এবং প্রস্তুতি গ্রহণ করে। দুনিয়া ও পরকালে তারাই সম্মান ও মর্যাদার মুকুট পরবে।’ (মুজামুল কাবির)
দুনিয়াতে আমরা দুইদিনের মুসাফির। অথচ আমাদের চলাফেরা ও আচার-আচরণে এসব ভুলে যাই। কারণে-অকারণে একে অপরের ওপর রেগে যাই। ঝগড়াবিবাদে জড়িয়ে পড়ি। হাদিসে এসেছে-
হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার কাঁধে ধরে বললেন, দুনিয়াতে এভাবে কাটাও যেন তুমি একজন মুসাফির বা পথিক।’
হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলতেন, ‘তুমি সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে সকাল বেলার অপেক্ষা কর না বরং সকালে উপনীত হয়ে সন্ধ্যার অপেক্ষা কর না। সুস্বাস্থ্যের দিনগুলোতে রোগ-ব্যধির দিনগুলোর জন্য প্রস্তুতি নাও আর জীবদ্দশায় মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ কর।’ (বুখারি)
আসুন ভেবে দেখি
আমরা কীভাবে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করবো। মৃত্যুর প্রধান প্রস্তুতি হল- নিজেকে প্রতিনিয়ত ভালো কাজে নিয়োজিত রাখা এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখা। কথায় কথায় এমন কিছু না বলা, যাতে গোনাহ বা অন্যায় সংঘটিত হয়। ফলে আল্লাহ আমাদের ওপর অসন্তুষ্ট হবেন। যেভাবে উপদেশ দিয়েছেন বিশ্বনবি-
‘তোমরা নেক আমলের দিকে দ্রুত ধাবিত হও। ঘুটঘুটে অন্ধকার রাতের অংশ সাদৃশ ফেতনায় পতিত হওয়ার আগেই।’ (মুসলিম)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে বেশি বেশি মৃত্যুকে স্মরণ করার মাধ্যমে ভালো কাজ করার তাওফিক দান করুন। আমিন। লেখক : ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।