জুমবাংলা ডেস্ক: মেক্সিকো প্রজাতন্ত্রের সিনেটের আদিবাসী বিষয়ক কমিটি এবং ইবেরো-আমেরিকানা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় মেক্সিকোতে যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সাথে ‘মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালন করেছে মেক্সিকো সিটিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস।
এ দিনের কর্মসূচি দুইটি পর্বে বিভক্ত ছিল। প্রথম পর্বে, সকালে দূতাবাস প্রাঙ্গণে, রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম কর্তৃক জাতীয় সংগীতের সাথে পতাকা অর্ধনমিতকরনের মধ্য দিয়ে দিনের কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
পরবর্তিতে দিবসটি উপলক্ষ্যে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। উন্মুক্ত আলোচনা সভায় দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং তাদের বক্তব্যে দিবসটির গুরুত্ব এবং তাৎপর্য তুলে ধরেন।
রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম তার বক্তব্যে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষায় আত্ম-উৎসর্গকারী সকল ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। তিনি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে- ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনে যার ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।
এরপর দূতাবাসের কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে সমবেত কণ্ঠে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি পরিবেশনা ও ‘একুশ আমার’ গানটি প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বের পরিসমাপ্তি ঘটে।
দ্বিতীয় পর্বে, এই প্রথমবারের মত বাংলাদেশ দূতাবাস মেক্সিকো প্রজাতন্ত্রের সিনেটের আদিবাসী বিষয়ক কমিটি এবং ইবেরো-আমেরিকানা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করে। এটি পরিচালনা করেন ইবেরোআমেরিকানা ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক ব্যাচেলর বিষয়ক প্রশাসনের সমন্বয়ক ডক্টর অ্যারিবেল কন্ট্রিয়াস।
অনুষ্ঠানটি প্রজাতন্ত্রের সিনেটের ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি প্রদর্শিত হয় যা তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের মনোযোগ আকর্ষনে সক্ষম হয়।
২১শে ফেব্রুয়ারির উৎপত্তির কথা স্মরণ করে তার স্বাগত বক্তব্যে আদিবাসী বিষয়ক কমিটির সভাপতি সিনেটর সোচিতল গালভেজ বাংলাদেশের ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং জাতিগত ভাষা সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি উল্লেখ করেন ২৫ মিলিয়ন আদিবাসী মেক্সিকানদের মধ্যে মাত্র ৬.৫% তাদের মাতৃভাষায় কথা বলতে পারে এবং ৬৮ টি আদিবাসী ভাষার মধ্যে কমপক্ষে ছয়টি ভাষা বর্তমানে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। তার মতে, এই বছরের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ -এর প্রতিপাদ্যটি বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে থাকা এই ভাষাগুলিকে রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। ২০২২ থেকে ২০৩২ সাল পর্যন্ত আদিবাসী ভাষার আন্তর্জাতিক দশকের সূচনার কথা উল্লেখ করে তিনি মেক্সিকোর বিপন্ন আদিবাসী ভাষাগুলিকে সংরক্ষণে কমিশনের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন।
সিনেটর সোচিতল গালভেজের বক্তব্যের পর ভাষা শহীদদের সম্মানে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরবর্তিতে দূতাবাসের কাউন্সেলর শাহানাজ রানু দিবসটি উপলক্ষ্যে প্রদত্ত ইউনেস্কোর মহাপরিচালকের বাণী পাঠ করেন এবং এরপরে ভাষা আন্দোলনের পটভূমি এবং ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ এর গৌরবোজ্জ্বল স্বীকৃতির উপর একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম তার বক্তব্যে বাংলাদেশের ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের মাতৃভাষা সংরক্ষণে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। তিনি আরো বলেন যে, এই ক্ষুদ্র সম্প্রদায়গুলোর জন্য টেকসই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে বাংলাদেশ সরকার তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষার সুযোগ করে দিতে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে।
মেক্সিকোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া প্যাসিফিক বিভাগের মহাপরিচালক রাষ্ট্রদূত ক্লডিয়া ফ্রাঙ্কো ইহুয়েলোস এই দিবসটি উপলক্ষ্য গৃহীত বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগকে স্বাগত জানান। তার মতে,এই অনুষ্ঠানের আয়োজনের মধ্য দিয়ে উভয় দেশের সম্পর্কের নতুন একটি ধারার সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন তার সরকার স্প্যানীশ ভাষার পাশাপাশি মেক্সিকোর ৬৮টি আদিবাসী ভাষার সুরক্ষা, সংরক্ষণ ও প্রচারের কাজ করে চলেছে।
এই বছরের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ -এর প্রতিপাদ্যটি মানুষকে তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয় সম্পর্কে আরো সচেতন করবে তুল্বে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আদিবাসী ভাষা সংক্রান্ত জাতীয় ইনস্টিটিউট (INALI) এর মহাপরিচালক মায়েস্ত্রো হুয়ান গ্রেগোরিও রেহিনোকে প্রতিনিধিত্ব করেন প্রতিষ্ঠানটির ভাষা নীতি বিষয়ক পরিচালক আলমাদিনা কারদেনাস।
তিনি সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে মেক্সিকোর আদিবাসী ভাষাগুলিকে সরকারী ভাষা হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে ইনস্টিটিউটের প্রচেষ্টার পাশপাশি এর চ্যালেঞ্জগুলি তুলে ধরেন।
মেক্সিকোর আদিবাসীদের ভাষাকে শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাবার লক্ষ্যে তিনি ভাষার অবকাঠামো ও প্রযুক্তি, গবেষণা এবং ত্রিভাষিক শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
নিউজিল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত সারা মেইম্যান্ড তার দেশে মাওরি ভাষার অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যাদি উপস্থাপন করেন। অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূত ডেনিস থোকোসানি লোমো তার দেশে আদিবাসীদের ভাষা ও সংস্কৃতির উপর ভূমির মালিকানার প্রভাব সম্পর্কে বক্তব্য প্রদান করেন। তাদের দেশের সমৃদ্ধ ভাষাগত বৈচিত্র্যের প্রেক্ষাপটে উভয় রাষ্ট্রদূতই ভাষার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষনে জোর দেন।
প্রতি দুই সপ্তাহে, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যসহ একটি ভাষার অপমৃত্যু ঘটে- ইউনেস্কোর এই ভবিষ্যদ্বাণীর কথা উল্লেখ করে প্রজাতন্ত্রের সিনেটের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সিনেটর ওলগা মারিয়া সানচেজ কর্ডেরো ভাষা সংরক্ষণে তাদের দায়িত্বের কথা তুলে ধরেন।
মেক্সিকান সংগীত শিল্পী দিয়েগো ভ্যালেনজুয়েলা স্প্যানিশ ভাষায় ২১শে ফেব্রুয়ারির থিম গানটি পরিবেশন করেন । মেক্সিকোর আদিবাসী সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে তুলে ধরতে মোট সাতটি ভিডিওচিএ অনুষ্ঠান চলাকালে প্রদর্শিত হয় যা তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে এবং দৈনন্দিন জীবনে এর প্রভাবগুলি তুলে ধরে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।