আর্জেন্টিনা থেকে আর্সেনালের বয়সভিত্তিক দল দিয়েই ইউরোপের ফুটবলের সাথে পরিচয় ঘটেছিল দিবুর। তবে সময়ের সাথে বয়সভিত্তিক দল থেকে মূল দলে উন্নীত হলেও খেলার সময় খুব একটা পাচ্ছিলেন না তিনি। প্রতি মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ, এফএ কাপ মিলিয়ে হাতেগোনা দু-চারটি ম্যাচ পাচ্ছিলেন দিবু। ক্লাব আর্সেনালও বোধহয় তার সক্ষমতা নিয়ে সন্দিহান ছিল।
২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচটা নিজের বাড়িতে বসেই দেখেছিলেন দিবু। অঝোরে কেঁদেছিলেন, আর দশজন আর্জেন্টাইন সমর্থকের মতোই। হয়তো কাঁদতে কাঁদতে নিজেকে বসিয়েছিলেন গোলরক্ষক সার্জিও রোমেরোর জায়গায়, হয়তো ঐ দস্তানাজোড়া তার হাতে থাকলে তাতে আটকে যেত গোৎজের শটটা, হয়তো শিরোপাজয়ী দলটার নাম হতো আর্জেন্টিনা। একজন পেশাদার আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক হিসেবে তার এ ভাবনা পুরোপুরি অযৌক্তিকও ছিল না।
তবে ক্লাবে অসাধারণ মৌসুম কাটালেও জাতীয় দলের হয়ে প্রাপ্য সুযোগটা আসছিল না। যখন এলো, সেটাও ফ্রাঙ্কো আরমানির কোভিড সংক্রমিত হওয়ার কারণে; আর সেটা এলো কোপা আমেরিকার মাত্র দুই ম্যাচ আগে। চিলি আর কলম্বিয়ার বিপক্ষে অনুষ্টিত বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ঐ দুই ম্যাচে আহামরি ভালো করেননি, তবে আরমানি তখনও সুস্থ না হওয়ায় প্রথম পছন্দের গোলরক্ষক ছিলেন এমিলিয়ানোই। এরপর যা ঘটল, তাকে রূপকথা ছাড়া আর কী বলা যায়!
কোপা আমেরিকার প্রথম ম্যাচেই ভিদালের পেনাল্টি সেভ করলেন, এরপর উরুগুয়ে-প্যারাগুয়ে-ইকুয়েডরের বিপক্ষে ক্লিনশিট রাখলেন, সেমিফাইনালের টাইব্রেকারে তো তিনটা পেনাল্টি ঠেকিয়ে নায়কই বনে গেলেন। আর যে আসল পরীক্ষা ছিল পরাক্রমশালী ব্রাজিলের বিপক্ষে, সেটাতেও তিনি পাস করলেন ক্লিনশিটসহ।
এরপর থেকেই আর্জেন্টিনার প্রথম পছন্দের গোলরক্ষক হয়ে গেছেন এমিলিয়ানো, আকাশি-সাদাদের হয়ে জিতেছেন ফিনালিসিমার ট্রফি। নিয়মিত খেলেছেন বাছাইপর্ব আর প্রীতি ম্যাচে, আর এক নম্বর গোলরক্ষক হিসেবেই উড়ে গেছেন কাতারে।
তবুও মেক্সিকোর বিপক্ষে ম্যাচের আগে টেলিভিশন ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল তার দুশ্চিন্তাগ্রস্ত চেহারাটা। আর তখনই এমিলিয়ানোকে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন তার সবচেয়ে কাছে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটি, লিওনেল মেসি। ঐ ম্যাচের প্রথমার্ধে মেক্সিকোর অসাধারণ একটা ফ্রি-কিক ঠেকিয়ে দিয়ে আর্জেন্টিনাকে ম্যাচে রেখেছিলেন এমিলিয়ানো, দ্বিতীয়ার্ধে মেসি-ম্যাজিকের কথা আর নতুন করে না বললেও চলছে।
লিওনেল মেসির জন্য এই আর্জেন্টিনা দলটা যুদ্ধে যেতে পারে, রদ্রিগো ডি পল সেটা আগেই বলেছেন। এমিলিয়ানো মার্টিনেজ এক্ষেত্রে এক ধাপ এগিয়ে; তিনি তো মেসির জন্য নিজের জীবনও উৎসর্গ করতে রাজি। অবশ্য তিনি তেমনটা বলবেন না-ই বা কেন! একটা পুরো প্রজন্মকে নতুনভাবে উদ্বুদ্ধ করা লিওনেল মেসির জন্য এটুকু তো করা-ই যায়!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।