জুমবাংলা ডেস্ক : মেহেরপুরের মুজিবনগর কমপ্লেক্সে গাছে গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে খেজুর। যেন সৌদি আরবের এক টুকরো খেজুর বাগান। বৃষ্টির পানি যাতে না পড়ে সেজন্য ফলগুলো পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। পোকার আক্রমন থেকে রক্ষায় দেওয়া হয়েছে নেট। সংশ্লিষ্টরা জানান, এ বাগানে ২শটি খেজুর গাছ রয়েছে। এরমধ্যে বেশিরভাগ গাছেই খেজুর ধরেছে। মধ্যপ্রাচ্যের আবহাওয়ার সঙ্গে মিল না থাকায় এ পর্যায়ে আসতে অনেক প্রতিকূল পরিবেশ পাড়ি দিতে হয়েছে তাদের। এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে ফলের মিষ্টতা ধরে রাখার।
জানা গেছে, ‘মুজিবনগর সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের’ আওতায় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কুষ্টিয়া কেন্দ্র মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স চত্বরে মধ্যপ্রাচ্যের খেজুর চাষের এই উদ্যোগ নেয়। কাতার, ওমান, দুবাই, ইরান, সৌদি, সুদান থেকে আজোয়া, আম্বার, লুলু, খালাস, ডেগলেটনুর, কালমি, মাকতুম, সুক্কারি ও মরিয়ামসহ ১০টি জাতের বীজ নিয়ে আসা হয়। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে বীজ বপন করা হয় কুষ্টিয়া সেচ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। সেই বীজের ২ হাজার চারা রোপণ করা হয় মুজিবনগর কমপ্লেক্সে। বপনের আড়াই বছরের মধ্যে চারটি গাছে ফল আসে। গত বছর ২০টি গাছে ফল এসেছিল।
মুজিবনগর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (খামার বাড়ি) উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মু. আনিসুজ্জামান খান বলেন, মেহেরপুরের মাটিতে মধ্যপ্রাচ্যের খেজুরের চাষ ভালো হচ্ছে। এ সফলতায় কৃষিবিজ্ঞানী ও কৃষকরা আশার আলো দেখছেন। এখানকার আবহাওয়া ও মাটি খেজুর চাষের জন্য উপযোগী। তিনি বলেন, খেজুরের আমদানি নির্ভরতা কমাতে হলে সারা দেশে এ ফলের চাষ ছড়িয়ে দিতে হবে। তবে মধ্যপ্রাচ্যের আবহাওয়া ও বাংলাদেশের আবহাওয়া এক না হওয়ায় প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা। সেজন্য এ অঞ্চলে সরকারিভাবে একটি খেজুর রিসার্চ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা দরকার। মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স চত্বরে খেজুর বাগানের তত্ত্বাবধায়ক মহিবুল ইসলাম বলেন, খেজুরের চারা রোপণ করতে হলে ৩ ফুট গভীর ও ৩ ফুট লম্বা এবং ৩ ফুট আড়াআড়ি গর্ত বানাতে হবে। ওপরের মাটি নিচে এবং নিচের মাটি ওপরে দিতে হবে। গর্তের মাটি ১-২ দিন রোদে শুকিয়ে নিলে ভালো হয়। পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য মাটির সঙ্গে গুঁড়া বিষ মেশাতে হয়। প্রতিটি গাছের গোড়ায় ৮ থেকে ১০ কেজি গোবর সার মেশাতে হবে। চারা রোপণের ১০ থেকে ১৫ দিন পর মিশ্র সার গাছের কমপক্ষে ২ থেকে ৩ ফুট দূরে মাটিতে দিতে হয়। পানি স্প্রে করতে হয়। চারা রোপণের পর চারার গোড়া যেন শুকিয়ে না যায় আবার অতিরিক্ত পানিতে যেন কাদা না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। একটি গাছ থেকে আরেকটি গাছের দূরত্ব হবে ১৫ থেকে ২০ ফুট। দিনে কমপক্ষে ৫ থেকে ৮ ঘণ্টা যাতে রোদ থাকে এমন জায়গা নির্বাচন করতে হবে। তাতে গাছের বৃদ্ধি ও রোগ-বালাই কম হবে। একরপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০টির বেশি গাছ রোপণ করা যাবে না।
তিনি আরও জানান, খেজুর গাছের পরাগায়ন পোকামাকড়, মৌমাছি বা বাতাসের মাধ্যমে খুব কম হয়। তাই হাত দিয়ে অথবা মেকানিক্যাল পদ্ধতিতে পরাগায়ন করতে হবে। বাগানে ১০০টি স্ত্রী গাছের সঙ্গে মাত্র একটি পুরুষ গাছ থাকলেই পরাগায়নের জন্য যথেষ্ট। পরাগায়ন করতে হলে স্ত্রী গাছের ফুল চুরমি ফেটে বাইরে আসার পর পুরুষ গাছের পরাগরেণু পাউডার নিয়ে স্ত্রী গাছের পুষ্পমঞ্জুরিতে লাগিয়ে দিয়ে চুরমির অগ্রভাগ রশি দিয়ে বেঁধে দিতে হবে। ২-৩ দিন পর পর পুনরায় পরাগায়ন করলে ভালো ফল হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।