মোচাটুনিকে বলা হয় সুঁচালো ঠোঁটের পাখি। কলাগাছে ফুল ফুটলে এরা আসবেই, কলাবাগান থেকে কলাবাগানে ঘুরে বেড়াবে কলাফুলের মধুর লোভে। বাসাও করে কলাপাতার তলায়। বসতেও ভালোবাসে কলাপাতার ওপরে। কলার মোচায় এরা চমৎকার ভঙ্গিতে বসে। কলাফুলের কাছে হোভারিং (শূন্যে স্থির থেকে ওড়া) করেও এরা সুন্দর ভঙ্গিতে। সুঁচালো ঠোঁট ফুলের ভেতরে ঢুকিয়ে মধু পান করে অবাক কৌশলে। এদের নাম তাই মোচাটুনি। কলাটুনিও বলা যায়।
মোচাটুনির ইংরেজি নাম Little Spider Hunter বা ছোট মাকড়সাভুক। সব ধরনের মাকড়সাই এদের প্রিয় খাদ্য, তাই এই নাম। মাকড়সার জালের কাছে হোভারিং করে মাকড়সা ধরে মোহনীয় ভঙ্গিতে। আঁঠালো জালে জড়ায় না কখনো। এরা অত্যন্ত চঞ্চল, ভীতু স্বভাবের। বাংলাদেশের সব জেলাতেই আছে। বড় শহরে দেখা যায় না।
মোচাটুনি দেখতে মৌটুসী-নীলটুনির মতো। আকারে একটু বড়। শরীরের মাপ ঠোঁটসহ ১৫ সেন্টিমিটার। শুধু ঠোঁটটিই ৫ সেন্টিমিটার অর্থাৎ গোটা শরীরের মাপের তিনভাগের একভাগ। ঠোঁটের গড়ন চমৎকার। আগার দিকটা বুকের দিকে কিছুটা বাঁকানো, রং কালচে-সবুজ। এদের বুক-পেট-লেজের তলার রং জলপাই-সবুজ, তাতে হাল্কা হলুদের আভা। বুক ও পেটের দুপাশসহ লেজের গোড়াটায় হলুদ রং বেশি। মাথা-গলা-পিঠ জলপাই-সবুজ। লেজের আগায় সাদাটে ভাব। পা কালচে। সূর্যের আলোয় মৌটুসী-নীলটুনির মতো এদের শরীর তেমন ঝলকায় না, তবে চোখ দুটি চকচকে।
ফুলের মধু, মৌমাছি, মাকড়সা ও মাকড়সার ডিমসহ নানা রকমের পোকামাকড় ও কীটপতঙ্গ খায়। নারকেল ফুলে যখন মৌমাছি আসে, তখন এরা ওই মৌমাছিও ধরে। নারকেল ফুলের রেণু ও মধু এদের খুব পছন্দ। বাসা বাঁধে পৌষের শেষ থেকে আষাঢ়ের প্রথম দিক পর্যন্ত। কলাপাতার মাঝখানটির তলায় চমৎকার মাচানের কায়দায় বাসা বানায়। বাসার মুখটা থাকে পাতার আগার দিক বরাবর।
সরু ঠোঁটে পাতা ফুটো করে ওরা সরু সরু সুতার মতো উপকরণ পাতার ওপর দিকে ওঠায়। তারপর পাতার ওপরে বসে ওই সুতার মাথায় ঠোঁট দিয়ে ছোট ছোট গোল বল তৈরি করে। ওই গিঁটের জন্য সুতার মাথা আর নামতে পারে না পাতার তলায়। পাতার মাঝখানের ডগায়ও সুতা গুঁজে দেয়। ডগাটিকে মাঝখানে রেখে পাতায় আড়াআড়িভাবে বাসা বানায়। বাসা ১৬-২২ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ১০-১৫ সেন্টিমিটার চওড়া।
বাসার উপকরণ হচ্ছে পাটের আঁশ, মাকড়সার জাল, কলাগাছের শুকনো আঁশ, শুকনো সরু ঘাস ও অন্যান্য। বাসা বাঁধার জায়গা পছন্দে দুজনে লাগায় ২-৬ দিন। আর বাসা বানাতে সময় লাগে ৪-৭ দিন। মানকচুর পাতা, কাঠবাদামের চারার পাতার তলায়ও বাসা করে। চমৎকার বাসাটি পাতার তলায় যেন সেঁটে থাকে। ডিম পাড়ে প্রায়ই ২টি, দৈবাৎ ৩টি। দুটি পাখিতে পালা করে ডিমে তা দেয়। ডিম ফোটে ১৫-১৭ দিনে। ছানারা উড়তে শেখে ১৯-২৩ দিনে। দর্জিরা যে কৌশলে হাতের দুই আঙুলে সুতোর মাথায় গিঁট দেয়, এরাও ঠোঁট ও জিভ ব্যবহার করে সুতোর মতো উপকরণের মাথায় গিঁট দিতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।