মোটা বেতনের লোভনীয় চাকরি ছেড়ে নিজ গ্রামে নিরাপদ কৃষি খামার গড়েছেন আকতার
জুমবাংলা ডেস্ক: নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনসহ বহুমুখী খামার গড়ে তুলেছেন আকতার হোসেন নামে এক কৃষিবিদ। ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিতে সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বাংলানিউজের প্রতিবেদক মো. আমিরুজ্জামান-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত।
১২ বছর আগে লোভনীয় বেতনের এ চাকরি ছেড়ে নিজ এলাকা নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার পল্লীতে এসে ৩৫ বিঘা জমির ওপর গড়ে তুলেছেন বহুমুখী কৃষি খামার।
এতে উৎপাদন হচ্ছে বিভিন্ন জাতের ধান, ধানবীজ, মাছ, ফল, মুরগি, জৈব সার ইত্যাদি। যা সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখাচ্ছে এ জনপদে।
কৃষি খামারের পণ্য বিক্রি হচ্ছে সরাসরি কিংবা অনলাইনে।
সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ি ইউনিয়নের মাঝাপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রিন গ্লোবাল অ্যাগ্রো নামে বিশাল এলাকা জুড়ে একটি খামার। খামারের নয় বিঘা জমিতে পাঁচটি বড় বড় পুকুর। পুকুরগুলোতে জাল ফেলেছেন জেলেরা। জালের মধ্যে খৈয়ের মতো লাফাচ্ছে মাছ। কৃষিবিদ আকতার হোসেন পেয়েছেন পৈতৃক সূত্রে ৩৫ বিঘা জমি। এ জমির মাঝখানে রয়েছে একটি সনাতন পদ্ধতির চালকল (রাইস মিল)। যাতে ভাঙানো হচ্ছে ব্রি-২৯, ব্রি-৩৪ (চিনিগুঁড়া) ধান। গোটা এলাকায় সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে চিনিগুঁড়া চালের।
মিলের পাশে ছোট্ট একটি ফ্যাক্টরি। যেখানে ওই চালগুলো প্যাকেটজাত হচ্ছে। ফ্যাক্টরির এক পাশে রয়েছে মুরগির খামার। তৈরি হচ্ছে জৈব সার।
খামারের মালিক কৃষিবিদ আকতার হোসেন বলেন, ঢাকায় চাকরি করতাম। কিন্তু মন পড়েছিল গ্রামের মাঠে ঘাটে। আমি স্বপ্ন দেখতাম, গ্রামে ছোট্ট একটি খামার গড়ে তুলব। যেখানে উৎপাদন হবে নিরাপদ খাদ্য। এমন স্বপ্নের কথা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বাবা আমজাদ হোসেন সরকারকে জানালে বাবা এক বাক্যে রাজি হয়ে যান। বলেন, চলে আয়- আমাদের জমিতে খামার গড়ে তোল বাবা।
কৃষিবিদ আকতার ঢাকার শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতোকত্তর করেছেন। তিনি মনে করেন, হাইব্রিড পদ্ধতির চাষ ব্যবস্থা সুদূরপ্রসারী ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। জমিতে যথেচ্ছভাবে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার মানবদেহের জন্য ভয়াবহ। তাই তিনি তার পুকুরে কোনো কেমিক্যাল ফিড ব্যবহার করেন না। এর পরিবর্তে মাছের খাদ্য হিসেবে দেওয়া হয় চালের কুড়া (রাইস ব্রান), গুড় ও খৈল। পুকুরে কোনো ফিড ব্যবহার না করায় মাছগুলো বেড়ে উঠতে একটু সময় লাগছে। তবে ওই মাছ অনেক পুষ্টি সমৃদ্ধ। তাই ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
তিনি বলেন, অটো রাইস মিলের চাল অনেক পলিস করা হয়। তাই আমার জমির উৎপাদিত ধান সনাতন চাল কলে মাড়াই করা হয়ে থাকে। তার আগে আমার নিজস্ব ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়। আমার চিনিগুঁড়া চালের ব্যাপক চাহিদা দেশে। তবে উৎপাদন খরচ একটু বেশি হওয়ায় দাম একটু বেশি রাখতে হয়। গত ২০১০ সালে আমার খামারটি গড়ে ওঠে। এ পর্যন্ত খামারে প্রায় চার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। কিছু লাভের মুখ দেখেছি। খামার বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
খামার পরিদর্শনে প্রতিদিন কৃষি বিভাগসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লোকজন আসছেন। আবার অনেকে নিজ উদ্যোগেও আসছেন খামার দেখতে।
বোতলাগাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান জুন বলেন, আকতার হোসেনের খামার সাড়া ফেলেছে। তাকে দেখে অনেকে উৎসাহিত হচ্ছেন।
সৈয়দপুরের বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা. কামরুল হাসান সোহেল বলেন, খামারটি পরিদর্শনে গিয়ে অভিভূত হয়েছি। আকতারের মতো শিক্ষিত তরুণরা যদি এভাবে নিরাপদ খাদ্য যোগান দেন, তাহলে সুস্বাস্থ্য নিয়ে ভাবতে হবে না।
ঠাকুরগাঁওয়ের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) শাহিনা বেগম খামারটি এরই মধ্যে পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, আকতার হোসেন ইস্পাহানি কোম্পানির সিনিয়র সাইনটিস্ট ছিলেন। তিনি চাকরি ছেড়ে হয়েছেন উদ্যোক্তা। অনেক ভালো ব্যবস্থাপনা দেখেছি তার খামারে। ভবিষ্যতে তার খামারটি অ্যাগ্রো ট্যুরিজমের (কৃষি পর্যটন) একটি খাত হয়ে উঠবে।
শুঁয়োপোকার মল থেকে তৈরি বিশেষ চা বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা আয়
Get the latest News first— Follow us on Zoombangla Google News, Zoombangla X(Twitter) , Zoombangla Facebook, Zoombangla Telegram and subscribe to our Zoombangla Youtube Channel.