আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কিংবা ভারতবিরোধী কোনো পদেক্ষপ নেয়ার কথা উঠলেই তৎপর হয় গোষ্ঠীটি। নানান মিটিং, মিছিল কিংবা প্রচারের মাধ্যমে সেই প্রচেষ্টা বাতিলের চেষ্টা করে। মার্কিন সংসদ ভবন ক্যাপিটল হিলের কর্তা ব্যক্তিদের সঙ্গে দফায় দফায় চলে বৈঠক। একমাত্র স্বার্থ হাসিল হলেই থামে গোষ্ঠীটি। বলতে গেলে আমেরিকার নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে ভারত ও মোদির ঢাল হিসেবে কাজ করে তারা। যদিও সংস্থাটি নিজেদের একটি দাতব্য সংগঠন বলেই দাবি করে।
আলজাজিরার অনুসন্ধানী প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের কোনো এক বুধবার সকালে একজন লবিস্ট ওয়াশিংটনের একজন কংগ্রেস কর্তার কাছে যান। তার লক্ষ্য মক্কেলের পক্ষে একটি বৈঠক আয়োজন। আলোচনার বিষয়বস্তু হবে পাকিস্তানের মানবাধিকার সংক্রান্ত কিছু বিষয় এবং ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদে সদ্য প্রবর্তিত একটি প্রস্তাব।
কয়েক সপ্তাহ পর ওই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ওই ক্লায়েন্ট পাকিস্তানে হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত নিপীড়নের অজুহাতে সে দেশের কাছে যুদ্ধবিমান এফ-১৬ এর সরঞ্জাম বিক্রি নিষিদ্ধের তদবির করেন।
তবে ওই ক্লায়েন্ট কোনো বিদেশি সরকার বা কোনো প্রতিরক্ষানীতি বিষয়ক চিন্তক প্রতিষ্ঠান নয়। এটি যুক্তরাষ্ট্রের একটি অলাভজনক সংগঠন। নাম হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশন।
হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে এমন প্রস্তাব পেয়ে হতবাক হয়ে যান মার্কিন ওই কর্মকর্তা। আগে থেকেই এই ফাউন্ডেশনের সঙ্গে তার পরিচয় ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে হিন্দুদের অধিকার রক্ষায় কাজ করে বলেই জানতেন। তবে এটি ভূ-রাজনীতিতে এতটা গভীরভাবে জড়িত থাকবে, তিনি মোটেও আশা করেননি।
ওই সময় ভারত সরকারও পাকিস্তানের কাছে ৪৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের এফ-১৬ চুক্তির প্রকাশ্য বিরোধিতা করে। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কাছে তাদের উদ্বেগের কথা জানান। এ জন্য মার্কিন সরকারকে প্রকাশ্যে কটূক্তিও করেন ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ওই মার্কিন কর্মকতা বলেন, সেই মুহূর্তে আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল যে হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশন ভারত সরকারের পক্ষে কাজ করছে।
দুই দশক আগে যুক্তরাষ্ট্রে হিন্দু সম্প্রদায়ের কণ্ঠস্বর হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশন। তবে ভারত সরকারের স্বার্থ রক্ষায় এটি গঠিত হয়নি। কিন্তু ২০১৪ সালে মোদি ভারতের ক্ষমতায় গেলে দৃশ্যপট পাল্টাতে শুরু করে। তখন থেকে বিজেপির ভারত সরকারের পক্ষে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড জোরদার করে সংগঠনটি।
সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশন যুক্তরাষ্ট্রে বিজেপির কার্যকর মুখপাত্রে পরিণত হয়ে উঠে। যদিও সংগঠনটি নিজেদের নিরপেক্ষ বলেই দাবি করে। কংগ্রেসের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করে মার্কিন সরকারের ভারত নীতিতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় লিপ্ত হয়।
এ সময় মোদি সরকারের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক বজায় রাখে হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশন। যুক্তরাষ্ট্রে মোদি সরকারের সমালোচকদের দমন, বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কর্মসূচিতে ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে সহযোগিতা এবং সংবেদনশীল বিষয়ে দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
তবে এত কিছু করলেও জনসমক্ষে কিন্তু সংগঠনটি নিজেদের ভারত সরকার ও বিজেপি থেকে দূরে থাকার দাবিই করছে। ভারতের হয়ে তদবিরের অভিযোগ শক্তভাবে অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, সংগঠনের সদস্যরা কেবল মার্কিন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় নিযুক্ত হিন্দু। ভারতীয় সরকারের সঙ্গে যোগসাজশের যেকোনো অভিযোগকে দ্বৈত আনুগত্যের অপবাদ বলে অভিহিত করেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।