জুমবাংলা ডেস্ক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী নুসরাত নওশীন। স্নাতকোত্তরের পরীক্ষা শেষে ৩৭তম বিসিএসে প্রথম অংশগ্রহণ করেন তিনি। ওই সময় ৪৫ দিনের টানা প্রিপারেশন নিয়ে প্রিলিতে পাশ করলেও স্বপ্ন পূরণ হয়নি। ততদিনে দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি ব্যাংকে ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি অফিসার (এমটিও) হিসেবে যোগদান করেন নুসরাত নওশীন।
৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে (মেধাক্রম-৬৪) সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। এই হবু ম্যাজিস্ট্রেটের সাফল্যের গল্প যেন সিনেমাকেও হার মানায়।
একটু পেছনে ফিরি। নুসরাত নওশীন তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করেছেন। স্বামী আসিফ ইমতিয়াজ তখনও বন্ধু। দু’জনে একসঙ্গে বসলেন ৩৭তম বিসিএসে। প্রিলি উৎরালেও রিটেনের দিনে পয়লা ফাল্গুনের জ্যাম ঠেলে কেন্দ্রে পৌঁছাতে এক ঘন্টা দেরি হয়ে যায় নওশীনের। শারীরিক আর মানসিক ধকল কাটিয়ে সেবার সেরাটা দিতে পারেননি। বিয়ের পর রেজাল্ট বের হয়। বর আসিফ পররাষ্ট্র ক্যাডারে সপ্তম হলেও নওশীন হন নন-ক্যাডার।
প্রত্যেক শেষেরই শুরু থাকে। আসিফ-নওশীন দম্পতির বেলায়ও তাই। জীবনের কঠিন পথে দুইজন হাতে হাত ধরে হেঁটেছেন। একে অপরের ছায়া হয়ে থেকেছেন। বিসিএস ক্যাডার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হলেও ওই পথ না মাড়িয়ে শিক্ষকতাকেই বেছে নেন আসিফ ইমতিয়াজ। বর্তমানে কর্মরত আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে। তিনি জানান, ‘প্রথমবার ব্যর্থ হয়ে আমার স্ত্রী বিসিএস-এর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেললো, ৩৮তম বিসিএসে আর অংশগ্রহণই করলো না। কিন্ত পরে ধীরে ধীরে সে সামলে নিলো নিজেকে, আবেদন করলো ৪০তম বিসিএসের জন্য। এরপর একদিনের সিদ্ধান্তে ওর প্রাইভেট ব্যাংকের চাকচিক্যময় চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে আবার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করলো। আমার স্ত্রী আসলে এই পুরো সময়টাতে দু’টো পরীক্ষা দিয়েছে। একটি হলো বিসিএস, আরেকটি সংসার ও পরিবার সামলানোর পরীক্ষা।’
আসিফ ইমতিয়াজের বাবা ড. এস এম মান্নান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার বিভাগের অধ্যাপক। মা শাহানারা খাতুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব। নুসরাত নওশীনের বাবা ছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা, মা শিক্ষিকা। দুইজনই অবসরে। অসুস্থ বাবা গত তিনবছর ধরে শয্যাশায়ী। সবকিছু মিলিয়ে পরিবার ও সংসার সামলে চাকরি চালিয়ে যাওয়া আর বিসিএসের প্রস্তুতি নেওয়ার কাজটা মোটেও সহজ ছিল না।
তবে নওশীন মনে করেন, তাঁর গড়ে ওঠার ভীত তৈরি হয়েছে পরিবার থেকে। যেই নওশীন ভেবেছিলেন বিসিএসে আর বসবেন না, সেই তিনি এখন শাশুড়ির পদাঙ্ক অনুসরণ করছেন৷ শাশুড়ির চেয়ে যার সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক বেশি, তার মতো হওয়ার পথে এগিয়ে যাওয়াটা নিঃসন্দেহে আনন্দের।
নওশীন বলেন, ‘বিসিএস-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার হলে সময়মতো পৌঁছাতে পারিনি, এটা বড়ধরনের মানসিক ধাক্কা। ওই ঘটনার পর প্রচণ্ড ভেঙে পড়ি। কিছুদিন বাদে শীর্ষস্থানীয় একটি বেসরকারি ব্যাংকে ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি অফিসার হিসেবে যোগ দিই। সেসময়টায় ৩৮তম বিসিএসের জন্য আবেদন করিনি। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে চাকরি করেছি তিনটি প্রতিষ্ঠানে। এখন কর্মরত আছি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সহকারী পরিচালক হিসেবে। ২০১৮ সালে আসিফের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পর ৪০তম বিসিএসে আবেদন করি। আসিফ ও তাঁর বাবা-মা আমাকে সবসময় সাহস দিয়েছেন, সহযোগিতা করেছেন। শাশুড়ি আমার দ্বিতীয় মা, আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। আর শ্বশুর বাবার বিশ্বাস ছিল উনার বৌমা পারবেই। তাদের কারণেই প্রস্তুতি সহজ হয়ে গেছে।’
সফলতার পেতে হলে কী করতে হবে, সে ব্যাপারে নুসরাত নওশীনের সাদামাটা জবাব— ‘পরিশ্রম করতে হবে। বিসিএস দেওয়ার ইচ্ছে থাকলে অলসতা দূর করতে হবে। সখ্যতা গড়তে হবে বইয়ের সাথে। বিসিএসের সিলেবাস অনেক বড়, কিন্তু গোছানো। তবে বিসিএস-ই শেষ কথা নয়। জীবনে সবসময় প্ল্যান বি রেডি রাখাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।’
আসিফ ইমতিয়াজ ও নুসরাত নওশীন বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই ভালো বন্ধু। অর্থনীতি বিভাগে পড়েছেন, পাশাপাশি ঠিক রেখেছেন জীবনের নীতি। ভবিষ্যৎ ভাবনায়ও নিদারুণ মিল। উভয়ের চাওয়া, বাবা-মায়েদের দেখানো পথে হেঁটে সততা ও নিষ্ঠার সাথে দেশ ও দশের সেবা করা। সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষের উপকারে এগিয়ে আসা। দিনশেষে একজন ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টা করা, যাকে গুণের জন্য সবাই মনে রাখবে। আসিফ ইমতিয়াজ ও নুসরাত নওশীনের বাবা-মায়েরা নিশ্চয়ই তাদের সোনালি সময়ে ফিরে গেছেন উত্তরসূরীদের সাফল্যে। প্রজন্মের পথ ধরে হাঁটা বোধহয় একেই বলে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।