আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সম্প্রতি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ইউরেশিয়ান জেস পাখির মধ্যে ব্যাপক আত্মসংযমী ক্ষমতা রয়েছে; আবার মানুষের মতোই বুদ্ধিমান। ‘মার্শম্যালো পরীক্ষা’-এর মাধ্যমে পাখি গোত্রটির ওপর পরীক্ষাটি চালানো হয়। আশ্চর্যজনকভাবে বুদ্ধিমত্তা যাচাইয়ের পরীক্ষায় পাস করতে সক্ষম হয়েছে তারা।
বলা হচ্ছে, এটিই প্রথমবার প্রমাণিত হলো- কোনো পাখির মধ্যে একসঙ্গে সর্বোচ্চ বুদ্ধিমত্তা ও আত্মসংযম ক্ষমতা থাকতে পারে। আত্মসংযম এমনই একটি ক্ষমতা, যেটি তাৎক্ষণিক লোভকে সংবরণ করে বিলম্বিত পুরস্কারের আশায়। খুবই গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা, যেটি সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় ভূমিকা রাখে।
জেস হলো কাক পরিবারভুক্ত একটি পাখি, নীলকণ্ঠ পাখির মতোই দেখতে। পাখিটিকে ‘পালকযুক্ত বানর’ বলেও ডাকা হয়। কারণ, কেবল বুদ্ধিমত্তা দিয়েই আদিম সময় থেকে মানুষের মতোই প্রতিযোগিতা করে টিকে আছে এরা। পাখিটি তাদের খাবার পরবর্তী সময়ের জন্য লুকিয়ে রাখতে পারে বা এর উপায় খুঁজে বের করতে সক্ষম। অন্যভাবে বললে, জেস তাৎক্ষণিক লোভ সামলে ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষা করতে পারে। গবেষকরা মনে করছেন, এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে পাখিটির মাঝে বুদ্ধিমত্তার সমান আত্মসংযম অভ্যাসের বিবর্তন গড়ে উঠেছে।
আত্মসংযমের বিষয়টি যে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত, তা দেখা যায় মানুষ এবং শিপাঞ্জির মধ্যে। এর পাশাপাশি সম্প্রতি আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, কাটলফিশও এ ক্ষমতার অধিকারী। বলা হচ্ছে, যাদের মধ্যে বুদ্ধিমত্তা যত বেশি, তাদের আত্মসংযম তত বেশি। কাছাকাছি বৈশিষ্ট্যের আরও কিছু প্রাণীর মধ্যে বুদ্ধিমত্তা ও আত্মসংযমের ক্ষমতা থাকতে পারে, তা প্রকাশিত নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে। কাক গোত্রের অন্যান্য পাখির চেয়ে জেস বেশ আলাদা। বিশেষ করে কোনো কিছু আগে থেকে না দেখে বা শুনে ধরে ফেলা এবং শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করার মতো বিরল আত্মসংযমী ক্ষমতা এই পাখিদের মধ্যে রয়েছে।
‘ফিলোসফিক্যাল ট্রানজ্যাকশন অব দ্য রয়্যাল সোসাইটি বি.’ সাময়িকীতে গত ৩১ অক্টোবর গবেষণার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। গবেষণাটির অনুমোদন দিয়েছে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এনিমাল ইথিকস’ রিভিউ কমিটি। এবং অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্ট্যাডি অব এনিমাল বিহ্যাভিয়ারের (এএসএবি) নির্দেশনা অনুযায়ীই গবেষণাটি পরিচালিত হয়।
গবেষকরা ১৯৭২ সালের স্ট্যানফোর্ড মার্শম্যালো টেস্টের আলোকে ১০টি ইউরোশিয়ান জেসের ওপর আত্মসংযমের এ পরীক্ষা চালান। গবেষণায় বাচ্চা জেসও নমুনা হিসেবে রাখা হয়। পরীক্ষায় খাদ্য হিসেবে নমুনা পাখিদের কৃমি, রুটি এবং পনির দেওয়া হয়। প্রিয় খাবার হিসেবে কৃমি এবং দ্বিতীয় পছন্দের খাবার হলো রুটি ও পনির। প্রথমে তাদের সামনে রুটি ও পনিরের মধ্যে একটি বেছে নিতে সুযোগ দেওয়া হলো। তারা কৃমি দেখতে পেল, কিন্তু প্রিয় ওই খাবারের দরজা তখনো বন্ধ থাকায় তারা অপেক্ষা করতে থাকল। ক্ষুধা থাকলেও তারা লোভ সংবরণ করে কখন কৃমি দেওয়া হবে, সে জন্য দাঁড়িয়ে রইল। পাঁচ সেকেন্ড থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে পাঁচ মিনিট পর্যন্ত তাদের এই অপেক্ষার পরীক্ষা করা হয়। আশ্চর্যজনকভাবে গবেষকরা দেখতে পান যে, সব পাখিই তাদের প্রিয় খাবার কৃমির জন্য অপেক্ষা করেছে। এর মধ্যে কোনো পাখিকে অল্প সময়, আবার কোনোটাকে অধিক সময় অপেক্ষা করানো হয় পরীক্ষায়।
এই গবেষণার প্রথম লেখক, ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. অ্যালেক্স স্কেনেল বলেন, ‘পরীক্ষাকালীন অত্যন্ত মনখারাপের ঘটনা ঘটেছিল, যখন দেখি পছন্দের খাবারের জন্য কিছু জেস দীর্ঘসময় অপেক্ষা করছে। কয়েক দফায় পরীক্ষা চালানো হয়েছে। আমি সেখানে বসে দেখছি জেইলো (একটি নমুনা জেসের নাম) পাঁচ মিনিট ধরে পনির সামনে থাকলেও তা ছুঁয়েও দেখেনি। আমি খুব বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু সে অত্যন্ত আগ্রহ এবং ধৈর্য নিয়ে প্রিয় খাবার কৃমির জন্য অপেক্ষা করে।’
গবেষণার পরীক্ষাকালে পাখিগুলো রুটি এবং পনির থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছিল, অধীর আগ্রহে তারা অপেক্ষা করতে থাকে। এর মাধ্যমে পরিষ্কার বোঝা যায়, জেস নিজেদের লোভ বা ক্ষুধা সংবরণ করে রাখার প্রখর ক্ষমতা রাখে। এর আগে একই দৃশ্য আমরা দেখতে পেয়েছিলাম শিম্পাঞ্জির পরীক্ষার সময়। – বলেন এই গবেষক।
একই সঙ্গে এই পাখিদের ওপর বুদ্ধিমত্তা যাচাইয়ের পাঁচ ধরনের পরীক্ষা চালিয়েছে গবেষক দল। সেই পরীক্ষাতেও দেখা যায়, জেস অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে পরীক্ষাগুলোয় পাস করতে সক্ষম হয়েছে। সেখানেও তারা তাদের প্রিয় খাবারের জন্য দীর্ঘসময় অপেক্ষার প্রমাণ রাখে। এর মধ্য দিয়ে গবেষকরা সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে, জেস নামের এই ইউরেশিয়ান পাখিরা বুদ্ধিমত্তার ঠিক সমান আত্মসংযমী।
তথ্যসূত্র : সায়েন্স ডেইলি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।