সাজ্জাদ গনি খাঁন রিমন, বাসস: যশোরের কেশবপুরের মাছ বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে মাছ রপ্তানি করে ২০২১ সালে আয় হয়েছে প্রায় ৭৫৭ কোটি টাকা। চলছি বছরে এই আয় বৃদ্ধি পেয়ে ৮৫০ কোটি টাকায় উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা দেখছে উপজেলা মৎস্য অফিস।
কেশবপুর উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় ঘের ও পুকুর থেকে উৎপাদিত মাছ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এবং বিদেশে রপ্তানি করা হয়। এসব মাছ রপ্তানি করে এলাকার প্রায় সাড়ে ১১ হাজার মৎস্য চাষি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। মাছের খামারে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে আরও জানা গেছে, কেশবপুরে ৪ হাজার ৬৫৮টি মাছের ঘের (খামার) রয়েছে। যার আয়তন প্রায় ৭ হাজার ৪৪৯ হেক্টর। পুকুর রয়েছে ৬ হাজার ৬৪০টি। যার আয়তন প্রায় ৬৯৮ হেক্টর। ২০২১ সালে এসব জলাশয় থেকে রুই, মৃগেল, কাতল, পাবদা, বাটা, সিলভার কার্প, গ্লাস কার্প, পাঙ্গাস, তেলাপিয়া, টাকি, কৈ, শিং, বাইন, পুটিসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৩৩ হাজার ৮২০ টন সাদা মাছ উৎপাদিত হয়েছিল। এছাড়া, গলদা চিংড়ি দুই হাজার ১৮০ টন ও বাগদা চিংড়ির উৎপাদন হয়েছে ২৪৫ টন। পাশাপাশি শুটকি দেড় টন ও কুঁচিয়া (কুঁচে) শূন্য দশমিক এক উৎপাদিত হয়।এ উপজেলায় সাদা মাছের চাহিদা ছিল প্রায় ৬ হাজার ১০ টন। অপরদিকে ২৭ জন মাছ চাষি ৫৪ হেক্টর আয়তনের জলাশয়ে ২ দশমিক ২২ কোটি পোনা উৎপাদন করেছেন।
চলতি বছরে সাদা মাছ প্রায় ৩৪ হাজার ৫০০ টন, গলদা চিংড়ি ২ হাজার ২৫০ টন, বাগদা চিংড়ি ২৮০ টন ও শুটকি ৫ টন উৎপাদিত হতে পারে।
কেশবপুর শহরের পাইকারি মৎস্য আড়ৎ, কাটাখালি ও পাঁজিয়া আড়তে বিক্রির জন্য নেয়া হয় উৎপাদিত এসব মাছ। এর বাইরে যশোরের বারোবাজার, মণিরামপুর, কপালিয়া, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর, আঠারো মাইলসহ বিভিন্ন আড়তে কেশবপুরের মাছ পাইকারি বিক্রি করা হয়। সেখান থেকে এসব মাছ ঢাকা, কক্সবাজার, চট্রগ্রাম, সিলেট, রংপুর, বগুড়া, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের এবং ভারতে রপ্তানি করা হয়। অপরদিকে, স্থানীয়রা পাইকারি আড়ৎ থেকে মাছ কিনে খুচরা বাজারে বিক্রি করেন।
কেশবপুর খুচরা মাছ বাজারের সভাপতি আতিয়ার রহমান জানান, আড়তের শ্রমিকদের মাধ্যমে মাছ বাজারজাতকরণের উপযোগী করে চাহিদা অনুযায়ী ট্রাকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। এছাড়া আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে সপ্তাহে পাঁচ দিন প্রায় দুইশ’ মণ করে মাছ ভারতে পাঠানো হয়।
কেশবপুর পাইকারি মৎস্য আড়তের সভাপতি হান্নান বিশ্বাস বলেন, প্রতিদিন এখানকার পাইকারি আড়তের ২২ ব্যবসায়ীর কাছে বিভিন্ন ঘের ও পুকুরের প্রায় ২ হাজার মণ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আসে। প্রায় দেড় থেকে ২ কোটি টাকার মাছ প্রতিদিন বিক্রি হয়। উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা আলমগীর কবীর জানান, এ উপজেলায় চার হাজার ৬৫৮টি মাছের ঘের ও ৬ হাজার ৬৪০টি পুকুর রয়েছে। মাছ রপ্তানি করে গত বছর আয় হয়েছে প্রায় ৭৫৭ কোটি টাকা। চলতি বছরে প্রায় ৮৫০ কোটি টাকার মাছ বিক্রি হতে পারে। এ উপজেলায় মৎস্য চাষি রয়েছে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার। মাছের খামারে খন্ডকালীন কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের। এছাড়া, উপজেলার তিনটি মৎস্য আড়তে প্রায় সাতশ’ শ্রমিক জীবিকা নির্বাহ করছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সজীব সাহা বলেন, চলতি বছরে এ উপজেলায় মাছ চাষের জন্য ঘের ও পুকুরের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়নি। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে মৎস্য চাষিদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদান করে তাদের নীবিড় পর্যবেক্ষণ করায় মাছের উৎপাদন বেড়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।