গত বছর কোরবানির ঈদে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যানজট ভুগিয়েছিল যাত্রী ও চালকদের। দীর্ঘক্ষণ যানজটে আটকা পড়ে ঈদের আনন্দ ফিকে হয়ে আসছিল অনেকের। কিন্তু এ বছর সেই চিত্র আর নেই। বদলে গেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সেই চিরাচরিত চিত্র। দ্বিতীয় কাঁচপুর, মেঘনা ও মেঘনা- গোমতী সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার পর থেকে যানজট পরিস্থিতি বদলে গেছে। মাত্র তিন মাস আগেও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের কারণে কাঁচপুর সেতুর পশ্চিম পাড় থেকে মেঘনা সেতুর টোল প্লাজা পর্যন্ত যেতে সময় লাগত ৩-৪ ঘণ্টা। আর ঢাকা থেকে কুমিল্লা যেতে সময় লাগত ৫-৬ ঘণ্টা। কিন্তু তিনটি সেতু খুলে দেয়ায় ঢাকা থেকে এখন কুমিল্লা যেতে সময় লাগছে মাত্র ২ ঘণ্টা। নেই চিরচেনা যানজট। ট্রাফিক পুলিশের ব্যস্ততাও চোখে পড়ে না মহাসড়কে।
গতকাল সকালে কাঁচপুর সেতুর পশ্চিম পাশে শিমরাইল মোড়ে বাসের জন্য অপেক্ষমাণ কুমিল্লা সদর উপজেলার যাত্রী রাশেদ আহমেদ বকুল জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নতুন তিনটি সেতু দ্বিতীয় কাঁচপুর, দ্বিতীয় মেঘনা ও দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী সেতু উদ্বোধনের পর এ মহাসড়কে যানজটের চিত্র পাল্টে গেছে।
তিনি বলেন, আগে ঢাকা থেকে কুমিল্লা যেতে সময় লাগত ৫-৬ ঘণ্টা। এখন সময় লাগে মাত্র ২ ঘণ্টা।
শিমরাইলে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ ইন্সপেক্টর মো. শরফুদ্দিন জানান, সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড থেকে কাঁচপুর সেতুর পশ্চিম পাশে আগে প্রতিনিয়তই যানজট লেগে থাকত। কিন্তু কাঁচপুর সেতু খুলে দেয়ায় এখন আর আগের মতো যানজট হয় না। রোজার ঈদের চেয়ে কোরবানির ঈদে ঘরমুখো মানুষের চাপ বেশি থাকে। এছাড়া রোজার ঈদে আগের তিনদিন এবং পরের তিনদিন পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকে। ঈদুল আজহার সময় পণ্যবাহী ট্রাক বন্ধ থাকলেও পশুবাহী ট্রাক চলাচল করবে। এ কারণে মহাসড়কে গাড়ির চাপ বেশি থাকবে। ঈদে যানবাহনের চাপ বাড়লেও যানজটের কোনো শঙ্কা নেই।
স্টার লাইন বাসের যাত্রী আহমেদ হুমায়ুন কবির জানান, ঈদুল আজহার সময় কোরবানির পশুবাহী ট্রাক মহাসড়কে চলাচল করবে। সে কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানবাহনের চাপ কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। তবে দুটি সড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে রাস্তা কোনো ধরনের ভাঙাচোরা বা খানাখন্দ না থাকায় রাস্তার যানজট হবে না বলে আশা করা যায়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কাঁচপুর পয়েন্ট, মেঘনা সেতুর সামনে ও পেছনে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের ওসি কার্যালয় থেকে কাঁচপুর পয়েন্টের যানজট বা যানবাহন বিকল হলে দ্রুত সরানোর নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া মেঘনা সেতুর পূর্বপাশে হাইওয়ে পুলিশের জন্য তৈরি করা হয়েছে হাইওয়ে পুলিশ কমান্ড অ্যান্ড মনিটরিং সেন্টার। ওই সেন্টার থেকে কাঁচপুর, মেঘনা ও মেঘনা গোমতী সেতুসহ মহাসড়কে নজরদারি করা হয়।
মেঘনা সেতুর পূর্বপাশে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবল আজগর আলী জানান, আগে এ সেতুতে ১ মিনিটের জন্য রাস্তা ছেড়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। সারা দিন মাইক নিয়ে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে হতো। কিন্তু বর্তমানে তেমন কোনো চাপ নেই। রাস্তার পাশে বসে বসে ডিউটি করছি।
এদিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতা ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তা ভালো থাকলেও সরু ও বাঁকের কারণে ওই জায়গায় গাড়ির গতি কমে যায়। এ কারণে কিছুটা যানজটের সৃষ্টি হয়।
কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের ওসি আব্দুল কাইয়ুম আলী সরদার জানান, ঈদুল আজহার সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের কোনো শঙ্কা নেই। মহাসড়কে যদি থ্রি-হুইলার, ইজিবাইক, সিএনজি চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা যায়, তাহলে কোনো যানজট সৃষ্টি হবে না।
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, ঈদের সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে নিরাপত্তার জন্য নারায়ণগঞ্জ অংশে ১ হাজার ১৭৫ জন পুলিশ সদস্য কাজ করছেন। তিন শিফটে তারা দায়িত্ব পালন করবেন। জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করবেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।