জুমবাংলা ডেস্ক : অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র শিগগিরই বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে সহায়তা বাড়াবে। দেশটির শর্ত মানলে তারা আবার বাংলাদেশকে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা বা জিএসপি সুবিধাও দেবে। গতকাল রবিবার ঢাকায় সচিবালয়ে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত হেলেন লা ফ্যাভের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কথা জানান উপদেষ্টা।
তাজরীন ফ্যাশনসে আগুন এবং রানা প্লাজা ধসের পর কলকারখানায় কাজের পরিবেশ উন্নত না হওয়াসহ নানা কারণে ২০১৩ সালে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্র।
দেশটির বাজারে জিএসপির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের এত দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো এই সুবিধা ফিরিয়ে আনতে পারেনি বাংলাদেশ।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘তারা বলেছে এত দিন নেগোশিয়েশন একটু স্লো ছিল। আমরা তাদের বলেছি, আমরা বিরাট একটা ঋণে আছি। তবে ইউএসএর (যুক্তরাষ্ট্র) সঙ্গে আমাদের ঋণ নেই।
তারা যেসব সাহায্য করেছে সবই কিন্তু ঋণ নয়, সবই গ্র্যান্ট। সে জন্য তাদের বলেছি সাহায্য করতে। তারা দ্রুতই কৃষি খাতে সাহায্য করবে। আর কিছু কিছু বিষয়ে তাদের হাইলেভেলের ভিজিটর আসবে। তাদের সঙ্গে আলোচনা হবে। তবে কে আসবে সেটা এখনই বলা যাবে না। এলে জানতে পারবেন।’
অর্থ উপদেষ্টা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া শর্ত পূরণ হলে জিএসপি সুবিধা ফিরে পাওয়া যাবে এমন আশ্বাস পেয়েছেন। তবে শ্রমিক অধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু পর্যবেক্ষণ ছিল, সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
এ বিষয়ে দ্রুত সমাধান হবে বলে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতকে আশ্বস্ত করেছেন অর্থ উপদেষ্টা। তাদের শর্ত পালন করলে জিএসপি সুবিধা আবারও পাওয়া যাবে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘উপকূলীয় এলাকার উন্নয়নে অর্থায়ন নিয়েও আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনৈতিকভাবে তারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাগেরহাট, পিরোজপুরসহ বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বড় বিনিয়োগ রয়েছে। তারা কৃষি খাতসহ বিভিন্ন জায়গায় সহায়তা করছে। মূল কথা হচ্ছে কৃষি, জ্বালানি, জলবায়ু খাতসহ অন্যান্য খাতে আরো বেশি বিনিয়োগ করার কথা বলেছি। বিশেষ করে বন্যার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বলেছি। সবচেয়ে বেশি বেসরকারি খাতে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায়, বিশেষ করে বিজিএমইএ ও জিএসপি নিয়ে তাদের কিছু শর্ত আছে, সেগুলো পালনে তাগিদ দিয়েছে। এ ছাড়া আমাদের রপ্তানি, বিনিয়োগ বা সরাসরি বিনিয়োগ এবং যৌথ বিনিয়োগ যদি করতে চায় তাহলে তারা করবে। বিশেষ করে বেসিসসহ যেসব টেকনিক্যাল খাত রয়েছে, সেখানে কী করা যায় সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
উপদেষ্টাদের সঙ্গে দেবপ্রিয়র সাক্ষাৎ
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির কাজকর্ম নিয়ে আলোচনা করতে গতকাল অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে দেখা করেছেন কমিটির প্রধান ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদের সঙ্গেও আলোচনা করেছেন তিনি।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসেছিলেন কেন জানতে চাইলে সালেহউদ্দিন বলেন, ‘তিনি এসেছেন, অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’ শ্বেতপত্র বিষয়ে কিছু বলেছেন কি না এমন প্রশ্নে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘শ্বেতপত্র নিয়ে তাঁরা যা করার করবেন। সেখানে আমি কী করব।’
সচিবালয়ে আলোচনার পর দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা যে কমিটি গঠন করেছেন, সে বিষয়ে আলাপ করতে এসেছিলাম। এখন কমিটির বাকি সদস্যের নাম প্রধান উপদেষ্টাকে দেব। তিনি অনুমোদন দিলেই কাজ শুরু হবে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে দেবপ্রিয় বলেন, এই কমিটির সদস্য হবে ১০ জনের মতো। কমিটির কাজের পরিধি সম্পর্কে তিনি বলেন, কাজের পরিধি সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, তা নির্দেশনামূলক, বাধ্যতামূলক নয়। পরিস্থিতি অনুযায়ী আলাপ-আলোচনা ও তথ্য-উপাত্তের সঠিকতার ভিত্তিতে কমিটি কাজ করবে। কমিটির বাকি যে সদস্যরা আসবেন, তাঁদের পছন্দ-অপছন্দও বিবেচনায় নেওয়া হবে।
শ্বেতপত্র প্রকাশে গত বুধবার কমিটি গঠনের কথা জানায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। তারা বলেছে, শ্বেতপত্রে দেশের বিদ্যমান অর্থনীতির সামগ্রিক চিত্র থাকার পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিষয়ে সরকারের কৌশলগত পদক্ষেপ, জাতিসংঘের টেকসই অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়ন ও স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে করণীয় বিষয়ের প্রতিফলন থাকবে।
কমিটি ৯০ দিনের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।