জুমবাংলা ডেস্ক : আমদানির হুঁশিয়ারিতে মাঝে কয়েকদিন পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা করে কমলেও তিন দিনের মাথায় আগের অবস্থায় ফিরে গেছে।
স্বল্প সময়ের এই দরপতনের প্রভাব খুচরা বাজারে পড়েনি, আগের মতই প্রতিকেজি ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে রান্নার উপকরণটি।
শুক্রবার ঢাকার বেশ কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, আলু, আদা, রসুনের দরও একইভাবে বাড়তি। চিনি এখনও সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। সবজির দাম কেবল খানিটা কমেছে।
ঢাকায় মুদিপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজারে এদিন এক পাল্লা (৫ কেজি) পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৬০ টাকা থেকে ৩৮০ টাকায়। প্রতি কেজির দাম দাঁড়ায় ৭২ টাকা থেকে ৭৬ টাকা।
এই দরে নিতে হলে কিনতে হবে কমপক্ষে পাঁচ কেজি। এক কেজি করে নিতে গেলে ৮০ টাকার বেশি গুনতে হয়। পাড়ার দোকানে দাম আরও বেশি।
কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা রফিক জোয়ার্দার বলেন, “ফরিদপুর, রাজবাড়ীতে পেঁয়াজের দাম কমেনি। মোকামে দাম না কমলে কারওয়ান বাজার বা খুচরা দোকানে দাম কমবে কীভাবে?”
এক মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়ার পর গত প্রায় ২০ দিন ধরে পণ্যটির আমদানি উন্মুক্ত করার বিষয়ে বলে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমদানির অনুমতি দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে কৃষিতে চিঠি পাঠানোর পর গত শুক্রবার পাবনাসহ আরও কয়েকটি জেলায় পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা করে কমার খবর এসেছিল।
কৃষি মন্ত্রণালয়কে দেওয়া চিঠিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা মনে করে আমদানি করা ছাড়া বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। তবে এই চিঠি দেওয়ার পরে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক আরও পর্যবেক্ষণের কথা বলেছিলেন।
এক সপ্তাহ আগে কৃষিমন্ত্রী বলেছিলেন, “৮০ টাকা কেজি পেঁয়াজ কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। বাজার অল্প সময়ের ব্যবধানে ওঠানামা করছে। আমরা পেঁয়াজের বাজার গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।”
সরকার পেঁয়াজের ‘সিন্ডিকেটকে’ নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ভেতরে ভেতরে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পেঁয়াজের দামটা প্রতি কেজি ৪৫ টাকার বেশি হওয়া উচিৎ না।”
আদার কেজি ৩০০ টাকা
চীন থেকে আসা আদার সরবরাহ কমে যাওয়ায় এই পণ্যটির দাম প্রতিকেজি ৩০০ টাকা ছুঁয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন খুচরা বাজারে, কেরালা, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা আদা এখন প্রতিকেজি ৩০০ টাকা থেকে ৩৪০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
আদার মতই আমদানি করা রসুন ও দেশি রসুনের দাম এখন প্রতিকেজি ১৬০ টাকা। সাধারণ বছরের এই সময়ে দেশি রসুন প্রতিকেজি ৮০ টাকা থেকে ৯০ টাকা ও আমদানি করা রসুন প্রতিকেজি ১২০ টাকার মধ্যে থাকে।
মিরপুর পীরেরবাগের মুদি দোকানি আল আমিন বলেন, “গত এক মাস ধরে আদার দামটা বাড়তি। প্রতি কেজি ৩০০ টাকার ওপরে কেনা পড়ে যাচ্ছে। তবে দাম ৫০০ টাকায় উঠেছে বলে যেই খবর ফেইসবুকে দেখেছি এর সত্যতা নেই। এত দামের আদা চোখে পড়েনি।”
শৃঙ্খলা ফেরেনি চিনির দামে
প্রায় এক মাস ধরে অস্থির চিনির বাজারে গত ১০ মে হস্তক্ষেপ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রতি কেজি খোলা চিনি ১২০ টাকা আর প্যাকেট চিনি ১২৫ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে চলছে নিজের গতিতে।
ঢাকার মহল্লার দোকানগুলোতে এখনও প্রতিকেজি ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে চিনি। আর কারওয়ান বাজারে প্রতিকেজি চিনি ১৩০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এই বাজারের একজন মুদি দোকানি বলেন, “এখনও প্রতি বস্তা চিনি ছয় হাজার ২২০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। প্রতিকেজি চিনির দাম ১২৫ টাকা পড়ে যাচ্ছে, আমরা ১৩০ টাকা করে বিক্রি করছি।”
ভোজ্যতেলের বাজারে কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে বলে জানান এই বিক্রেতা। বলেন, “সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে লিটারে ২/৪ টাকা কমে পাম তেল ও খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করা যাচ্ছে।
“কেনা দাম কম হওয়ায় আমরা কম দামে বিক্রি করতে পারছি। প্রতি কেজি সয়াবিন তেল ১৭০ টাকা এবং পাম তেল ১৩০ টাকায় বিক্রি করছি।”
সর্বশেষ গত ৪ মে নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী, প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৭৬ টাকা এবং পাম তেল ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সবজির দাম কমেছে
প্রায় একমাস ধরে দাম চড়া থাকার পর চলতি সপ্তাহে সবজির দাম কিছুটা কমে এসেছে বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন।
চলতি সপ্তাহে মহল্লার দোকানগুলোতে প্রতিকেজি ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকার মধ্যে ঝিঙা, চিচিঙ্গা, ঢেঁড়শ, করলাসহ আরও কয়েকটি সবজি পাওয়া যাচ্ছে। যদিও গত তিন সপ্তাহ ধরে এসব সবজির অধিকাংশ বিক্রি হচ্ছিল প্রতি কেজি ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকায়।
কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম জানান, গত সপ্তাহের তুলনায় চলতি সপ্তাহে সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা করে কমেছে।
চলতি সপ্তাহে পটল ৪০ টাকা, ঢেঁড়শ ৪০ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, টমেটো ৬০ টাকা, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল ৪০ টাকা করে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে।
গত সপ্তাহের মতই গরুর মাংসা প্রতিকেজি ৭৮০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৯৫ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩৪০ টাকা এবং সোনালি মুরগি ২৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।