জুমবাংলা ডেস্ক : দেশে উৎপাদিত মোবাইল ফোনের ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট বাড়তে পারে। ফলে বাজারে মোবাইল ফোনের দাম বেড়ে যেতে পারে। আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের আগে বিভিন্নপক্ষের সঙ্গে রাজস্ব বোর্ডের প্রাক-বাজেট আলোচনায় হ্যান্ডসেটসহ আরও কিছু খাতে দেওয়া ভ্যাট সুবিধা যে কমিয়ে দেওয়া হবে; তার ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে।
বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, স্থানীয়ভাবে মোবাইল ফোন প্রস্তুত বা সংযোজন এবং এর কাঁচামাল আমদানিতে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ফলে এ পণ্যের দাম আরও বাড়বে। একইসঙ্গে, কাঁচামাল ও মাইক্রো পার্টস আমদানিতে বিদ্যমান কর অব্যাহতির কিছু সুবিধা কমানো হতে পারে।
কর্মকর্তারা বলেছেন, স্থানীয় উৎপাদকদের মূল্য সংযোজন বাড়াতে সরকার সেলুলার ফোনের কাঁচামাল আমদানিতে ভ্যাট ও শুল্ক বৃদ্ধির এ পরিকল্পনা করছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২০২৩–২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে দেশীয় কোম্পানির মোবাইল ফোনের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট বসানোর প্রস্তাব করা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে তিন স্তরে ভ্যাট বসতে পারে। যেমন যেসব প্রতিষ্ঠান যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ নিজেরাই বানাবে ও মোবাইল ফোন উৎপাদন করবে, সেগুলোর ওপর ৩ শতাংশ হারে ভ্যাট বসতে পারে। আর যেসব প্রতিষ্ঠান মোবাইল ফোন সংযোজন করে, তাদের ক্ষেত্রে দুইভাবে ভ্যাট আরোপ হতে পারে। যেমন কমপক্ষে দুটি যন্ত্রাংশ নিজেরা বানিয়ে মোবাইল ফোন তৈরি করলে এখন ৩ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হয়। তা বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হতে পারে।
অন্যদিকে যারা সব যন্ত্রাংশ আমদানি করে শুধু দেশে সংযোজন করে, সেসব প্রতিষ্ঠানের ওপর সাড়ে ৭ থেকে ১০ শতাংশ ভ্যাট বসতে পারে। এখন ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট বসে। এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশীয় উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় চাহিদার বেশির ভাগই জোগান দেয়। এখন ধীরে ধীরে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে যাচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠান। তাই ভ্যাটের পরিমাণ কিছুটা বাড়ানো হতে পারে।
তবে সংশ্লিষ্ট শিল্পের ব্যবসায়ীরা বলেছেন, এতে স্থানীয় প্রস্তুতকারক এবং অবৈধ আমদানিকারকদের মধ্যে অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হবে। বর্তমানে এই ধরনের আমদানিকারকদের দখলে দেশের বাজারের প্রায় ৪০ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, চলতি ২০২২–২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার সময় ব্যবসা পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়। ফলে গ্রাহক পর্যায়ে মোবাইল ফোনের দাম কিছুটা বাড়ে। আগামী অর্থবছরে এই দাম আরও বাড়তে পারে।
জানা গেছে, বর্তমানে স্থানীয় মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো তাদের অবস্থার ওপর ভিত্তি করে ভ্যাট দিচ্ছে—শুধু সংযোজনকারীরাই ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিচ্ছে। কিন্তু, যেসব কোম্পানির সারফেস মাউন্ট টেকনোলজি (এসএমটি) অ্যাসেম্বল প্রক্রিয়ার সুবিধা রয়েছে সংযোজনসহ তাদের ভ্যাট হার ৫ শতাংশ, এই বছরের ১ জুন থেকে যা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হবে। এসএমএটির পাশাপাশি যেসব কোম্পানির পাওয়ার সার্কিট বোর্ড (পিসিবি) সংযোজন, ব্যাটারি চার্জার সংযোজন ব্যবস্থা রয়েছে—তাদের বর্তমান ভ্যাট হার ৩ শতাংশ, যা ৫ শতাংশ হবে।
এছাড়া যেসব কোম্পানির অতিরিক্ত পিসিবি সংযোজন এবং মোবাইল হাউজিং প্রস্তুত প্রক্রিয়া রয়েছে, তাদের ভ্যাট হার শূন্য থেকে ২ শতাংশ হবে। এনবিআরের কর্মকর্তাদের অভিমত, প্রধান কিছু কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রেও ফোন প্রস্তুতকারকদের ৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হতে পারে, বর্তমানে যা ১ শতাংশ। কিছু কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান ১০ শতাংশ আমদানি শুল্কহার বেড়ে হতে পারে ১৫ শতাংশ।
জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে স্মার্ট ও ফিচার ফোনসেট-সহ দেশে মোবাইল ফোন বিক্রি হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি। ভ্যাট ও শুল্ক বাড়লে চলতি বছর তা ২ কোটিতে নেমে আসার আশঙ্কার কথা জানান এই খাতের ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয়ভাবে প্রস্তুতকৃত মোবাইল হ্যান্ডসেটের ওপর বর্তমানে সার্বিক কর ১৮-২২ শতাংশ; আর আমদানিকৃত মুঠোফোনের ক্ষেত্রে তা ৫৭ শতাংশ। এ খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, কাঁচামালের দাম বাড়ার পাশাপাশি নানা কারণে দেশে উৎপাদিত বা সংযোজন করা মোবাইল হ্যান্ডসেটের দাম অনেক বেড়েছে। এতে মোবাইল বিক্রিও কমে গেছে। একই সঙ্গে বাজারে প্রচুর অবৈধ হ্যান্ডসেট ঢুকেছে।
এ অবস্থায় ভ্যাট বাড়ানো হলে মোবাইলের দাম আরও বেড়ে যাবে। এতে করে মোবাইল বিক্রি কমে যাওয়ার পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে অবৈধ মোবাইল দেশে প্রবেশের আশঙ্কা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ—এর সহ-সভাপতি রেজওয়ানুল হক বলেন, সরকার স্থানীয় উৎপাদন ও সংযোজনে ভ্যাট ও শুল্ক আরোপ করলে স্থানীয় মোবাইল ফোন প্রস্তুতকারকরা বিপদে পড়ে যাবেন। তার মতে, নতুন করে ভ্যাট ও ট্যাক্স আরোপ করা হলে এই শিল্প হুমকির মুখে পড়বে। সরকারও এ খাত থেকে রাজস্ব হারাবে।
বর্তমানে ১৪টি দেশি ও বহুজাতিক লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে মোবাইল ফোন উৎপাদন করছে। দেশে স্মার্টফোনের বার্ষিক চাহিদা এক কোটির মতো। এই চাহিদার অধিকাংশই মেটায় দেশীয় মোবাইল ফোন উৎপাদকেরা। দেশে এখন যেসব প্রতিষ্ঠান মোবাইল ফোন উৎপাদন করছে সেগুলো হলো- স্যামসাং, অপো, বিভো, টেকনো, সিম্ফনি, ওয়ালটন, লাভা, শাওমি, নকিয়া ও রিয়েলমি।
জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে মোবাইল হ্যান্ডসেট বিক্রি হয়েছে (স্মার্ট ও ফিচার ফোন সেটসহ) প্রায় সাড়ে ৩ কোটি। দেশে ১৫ হাজার কোটি টাকার স্মার্টফোনের বাজার রয়েছে। এ খাতে বিনিয়োগ রয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।