জুমবাংলা ডেস্ক : কক্সবাজার মেরিনড্রাইভ সড়কের শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হ ত্যার আলোচিত মামলার রায় গত সোমবার (৩১ জানুয়ারি)।
ক্সবাজারের টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এবং তার অনুগত বাহিনীর নানা অপকর্ম জেনে ফেলেন সিনহা । এসব তথ্য ফাঁস হলে নিজের পেশাগত জীবনের ক্ষতি হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকেই সিনহাকে হ ত্যা র ছক তৈরি করেন ওসি প্রদীপ। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে মেজর সিনহাকে হ ত্যা করা হয়েছে। ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্রে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, সিনহা মো. রাশেদ খান দেশীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার লক্ষ্যে ‘জাস্ট গো’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এ চ্যানেলের ডকুমেন্টারি কনটেনট তৈরি করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে তথ্য সংগ্রহের জন্য তিনি ভিডিওচিত্র ধারণ করেন। টেকনাফেও একই ধরনের প্রামাণ্যচিত্র ধারণ শুরু করেন।
তখন লোকমুখে এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের জীবন-জীবিকার তথ্য সংগ্রহ করার সময় ওসি প্রদীপের মাদক নির্মূলের নামে টেকনাফ থানার নিরীহ মানুষের ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন-নিপীড়নের তথ্য জানতে পারেন। নির্যাতনের শিকার অনেক পরিবারের সদস্য সিনহা এবং তার সহযোগীদের কাছে প্রদীপের অত্যাচার-নীপিড়নের রোমহর্ষক বর্ণনা দেন। এসব শুনে সিনহা এবং তার সহযোগীরা ওসি প্রদীপ, পরিদর্শক মো. লিয়াকত আলী এবং তাদের পেটুয়া বাহিনীর নাম সংগ্রহের চেষ্টা করেন।
এসব কাজের এক পর্যায়ে ওসি প্রদীপের সঙ্গে সিনহা মো. রাশেদ, শিপ্রা দেবনাথ ও সাহেদুল ইসলাম সিফাতের দেখা হয়ে যায়। তখন তাদের সঙ্গে ক্যামেরাসহ ভিডিও ধারণের নানা সরঞ্জাম ছিল। তখন প্রদীপ তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এবং তাদের এসব কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন। ওসি প্রদীপ এ-ও বলেন, তিনি মেজর-টেজরের ধার ধারেন না। তিনি বহু সাংবাদিককে পিটিয়েছেন, জেলে পাঠিয়েছেন। তিনি তাদের ভয়ভীতি দেখান, হুমকি দেন এবং কক্সবাজার জেলা ছেড়ে যেতে বলেন। ওসি প্রদীপ তাদের হুমকি দিয়ে বলেন, ইন্টারভিউ, ভিডিওচিত্র বানিয়ে ইউটিউবে প্রচার করে তার কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে এবং কর্তৃপক্ষকে জানালে মেজর সাহেব ও তাদের ধ্বংস করে দেবেন।
ওসি প্রদীপের হুমকির বিষয়টিকে খুব বেশি গুরুত্ব না দিয়ে সিনহা এবং তার সঙ্গীরা নীলিমা রিসোর্টে অবস্হান করেই প্রামাণ্যচিত্রের কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। তারা কক্সবাজার না ছাড়ায় ওসি প্রদীপের সন্দেহ হয় সিনহা মো. রাশেদ সেনাবাহিনীর সাবেক অফিসার পরিচয় দিয়ে টেকনাফে তার থানা এলাকায় তার নানা কুকর্মের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজনের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ করছে।
এসব অপকর্মের বিষয়গুলো প্রচার হলে চাকরির ক্ষতি হবে অনুধাবন করে বিষয়টি ওসি প্রদীপ বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দে র পরিদর্শক মো. লিয়াকত আলীকে জানান। ২০২০ সালের জুলাই মাসের মাঝামাঝি ওসি প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকত আলী তাদের সোর্স মো. নুরুল আমিন, মোহাম্মদ আইয়াজ এবং আসামি মো. নিজাম উদ্দিনের মাধ্যমে সিনহা এবং তার সঙ্গীদের সম্পর্কে খবরা-খবর নেওয়ার চেষ্টা করেন। সিনহা এবং তার সঙ্গীদের দেখা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রদীপ ও থানাপুলিশকে তাত্ক্ষণিকভাবে খবর দেওয়ার জন্য সোর্সদের বলেন। জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহের দিকে মো. লিয়াকত আলী পুলিশের সোর্সদের সিনহা এবং তার ভিডিও দলকে তাড়াতাড়ি খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় পরিকল্পিত হ ত্যা কা ণ্ডের শিকার হন সিনহা মো. রাশেদ। তথ্য সূত্র : ইত্তেফাক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।