আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বহু মানুষ সংস্কারের বশে সাপকে দুধ-কলা দিয়ে পূজা করেন। মহাদেব বা মনসার সঙ্গে সাপের নিবিড় সম্পর্ক থাকার কারণে গৃহস্থের সুখ-শান্তির জন্য সাপের পুজো করেন তারা।
কিন্তু জ্যান্ত সাপ যদি মানুষের সামনে ফনা তুলে দাঁড়ায়। শরীরের ঘাম ছুটে যায়। প্রাণে বাঁচতে এদিক-ওদিক পালাতে হয়, বা লাঠিপেটা করে করুণ মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয় সেই বিষধর সাপকে।
তবে ভারতের মহারাষ্ট্রের শ্বেতফল গ্রাম অনন্য এক নজির গড়েছে। এ গ্রামে মানুষ আর সাপেদের মধ্যে অবাক করা সম্পর্ক। এখানে সাপ এবং মানুষ, কেউই একে অপরকে ভয় পায় না। অত্যন্ত বিষধর সাপও যখন-তখন গৃহস্থের বাড়িতে ঢুকে পড়ে। এটাই ভারতের একমাত্র গ্রাম যেখানে এমন নজির গড়ে উঠেছে। এখানে সাপের কামড়ে এখন পর্যন্ত কোনো মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেনি!
পুণে থেকে মাত্র ২০০ কিলোমিটার দূরে শ্বেতফল গ্রাম। এটি প্রায় ১,৭০০ হেক্টর এলাকা জুড়ে রয়েছে। ২০১১ আদমসুমারি অনুযায়ী, এই গ্রামে মোট ৫১৭ পরিবারের বাস। জনসংখ্যা ২৩৭৪। শুষ্ক জলবায়ুর কারণে নানা প্রজাতির সাপেদের বসবাসের আদর্শ জায়গা এই গ্রাম।
এই গ্রামের প্রায় সবারই সাপের প্রতি অগাধ ভক্তি। এখানে কেউটে, চন্দ্রবোড়া, শাখামুটি-সহ নানা প্রজাতির বিষধর সাপ রয়েছে। গ্রামের বড়রাই শুধু নয়, বাচ্চারাও সাপকে ভয় পায় না। সাপ নিয়েই তারা খেলা করে, ঠিক যেন তাদের খেলনা।
এখানকার প্রতিটা বাড়িতেই সাপদের থাকার আলাদা ব্যবস্থাও রয়েছে। সাপ ইচ্ছামতো সময়ে ঘরে ঢুকে বিশ্রাম নেয়। আবার ইচ্ছা হলে বেরিয়েও যায়। বিশ্রামাগারে সব সময়ই সাপের খাবারও (দুধ) মজুত রাখা হয়। তবে এটা একদমই কুসংস্কার। সাপ সরীসৃপ প্রাণী। আর দুধ সরীসৃপদের জন্য বিষ।
এই গ্রামবাসীদের দাবি, এখানে সাপে কাটার ঘটনা ঘটেছে। গ্রামে সিদ্ধেশ্বরের একটি মন্দির রয়েছে। যেখানে সাতমুখো কেউটে সাপ সিদ্ধেশ্বরের মাথার উপর ফনা তুলে রয়েছে। তাদের মতে, তামার এই মূর্তিটি নাকি প্রতিবার সাপে কাটা রোগীর প্রাণ ফিরিয়ে দেন।
এদিকে সাপ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাপ কখনো পোষ মানে না। এরা নিজেদের বিষের প্রয়োগ মাত্র দুই কারণে করে থাকে। একটি হলো শিকারের সময় এবং অপরটি নিজেকে বিপদ থেকে বাঁচাতে। অনেক সময় বিষাক্ত সাপ কামড় দিলেও বিষ ঢালে না।
অন্যদিকে কবে থেকে এবং কীভাবে শ্বেতফলবাসীর মধ্যে এই অভ্যাস শুরু হয়েছিল, তা কারোরই জানা নেই। তবে মহারাষ্ট্রের এই গ্রামের কথা সামনে আসার পর পর্যটকরা এখানে ভিড় করতে শুরু করেছেন। সাপের সঙ্গে মানুষের সহাবস্থান কাছ থেকে তারা দেখতে চান।
তবে এখানকার কেউ কেউ মনে করেন, এই গ্রাম পর্যটন বান্ধব করার জন্য সাপদের উপরে নির্মম অত্যাচার চালানো হয়। সাপ যাতে কামড়াতে না পারে, তার বিষদাঁত ভেঙে ফেলা হয়, বিষগ্রন্থি পর্যন্ত ছিঁড়ে দেয়া হয়। অনেক সাপের মুখও নাকি সেলাই করে আটকে দেয়া হচ্ছে। ফলে না খেতে পেয়ে বা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অনেক সাপ। এর ফলে তারা মারাও যাচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।