না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন অভিনেত্রী ও মডেল রিশতা লাবনী সীমানা আর নেই। হাসপাতালে ১৪ দিনের লড়াইয়ের পর মঙ্গলবার (০৪ জুন) সকাল ৬টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন সীমানার ছোট ভাই এজাজ বিন আলী। সীমানা স্বামী ও দুই ছেলে রেখে গেছেন।
সীমানার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন সংগঠন। এমনই একটি শোকবার্তার পোস্টারের নিচে সীমানার দুই সন্তান শ্রেষ্ঠ ও স্বর্গকে দেখা গেল। তারা ছোটাছুটি করছে, খেলছে। কিন্তু তারা উপলব্ধি করতে পারছে না তাদের মাথার ওপর থেকে সবচেয়ে বড় ছাদটা সরে গেছে, গভীর মমত্ববোধ থেকে তারা চিরবঞ্চিত হলো।
এদিকে এই অভিনেত্রীর প্রথম নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয় মঙ্গলবার (৪ জুন) দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল প্রাঙ্গণে। তার মরদেহ সেখানে নিয়ে এলে সেখানে তৈরি হয় শোকাবহ পরিবেশ। দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা অভিনেত্রীকে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সে সময় অভিনেত্রীর দুই ছেলে শ্রেষ্ঠ ও স্বর্গ সেখানে ছিল।
সেখানে স্বর্গ ও শ্রেষ্ঠ্য খেলাধুলা করছিল। মায়ের শোকবার্তার পোস্টারের নিচে দুজনের খুনসুটিতে মেতে ওঠার একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। এই ছবি দেখে নেটিজেনরা চোখের জল ধরে রাখতে পারছেন না।
সেখানে শ্রেষ্ঠ বলছিল, মা আমাকে অনেক ভালোবাসতো, আমিও মাকে অনেক ভালোবাসতাম। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন। আমার মায়ের অনেক ইচ্ছা ছিল আমাকে ক্যাডেটে পড়ানোর। কিন্তু মা তো চলে গেল। আমার মায়ের জন্য সবাই দোয়া করবেন।
একটু দূরে সীমানার মা নাট্য পরিচালক সালাউদ্দিন লাভলুকে জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, আমার মেয়ে এতো অল্প বয়সে চলে যাবে বুঝতে পারেনি। এতো কম বয়সে কেউ এভাবে যেতে পারে। তারপরে মেয়ের ছবি ধরে অঝোরে কেঁদে উঠেন।
চিত্রনায়ক নিরব লিখেছেন, অনেক ভেবেও কিছু এলো না মাথায়… কি লিখবো। সিমানা। ইন্না-লিল্লাহ ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন।
অভিনেত্রী খুশি লিখেছেন, সীমানা……..!তুই কি দেখতে পাচ্ছিস তোর প্রানের বাচ্চা দুইটাকে?! এত পাহাড় সম বেদনায় ভারী ছবি আমি কখনও দেখেছি বলে মনে পড়ে না! পাখির বাচ্চা দুইটা আজ হয়ত বুঝতে তেমন পারছে না যে, আসলে কি হয়েছে! কিন্তু সময়ের নিষ্ঠুরতা ওদের শুন্যতা, ওদের হিসেব কষে বলে দেবে?! মা! কিছুতে পুরন না হওয়া একটা আশ্রয়, একটা নিশ্চিত নির্ভরতা!কত স্বপ্ন ছিল তোর বাচ্চাদের নিয়ে! আল্লাহ যেন কোন সন্তান এমন বয়সে/ এমন করে মা হারা না করে।
সীমানার পিতা সেকান্দার আলী অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা। দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে সীমানা সবার বড় ছিলেন। ঢাকায় জানাজা শেষে এই অভিনেত্রীর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার গ্রামের বাড়ি নকলা পৌরসভাধীন কায়দা বাজারদী এলাকায়। মঙ্গলবার (৪ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নকলার কায়দা বাজারদী গোরস্থান মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর জারদী গোরস্থানে দাফন করা হয়।
জানা গেছে, গত ২০ মে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। তাকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে আট দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন সীমানা। অবস্থার অবনতি হলে ২৯ মে এই অভিনেত্রীকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে এই অভিনেত্রীকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ভেন্টিলেশনে শেষ চেষ্টা হিসেবে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। মঙ্গলবার ভোরে তিনি মারা যান।
প্রসঙ্গত, নকলা ললিতকলা একাডেমি, খেলাঘর, কোর্টফিল্ড, কমল ওস্তাদজী, শিল্পকলায় অভিনয় চর্চা করতেন। এরপর বিটিভিতে কাজ করা শুরু করেন। তারপর ২০০৬ সালে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শোবিজে পা রাখেন সীমানা।
এরপর থেকে তিনি নাটক, বিজ্ঞাপনে নিয়মিত কাজ করেন। তৌকির আহমেদ পরিচালিত ‘দারুচিনি দ্বীপ’ তার প্রথম সিনেমা। ‘রোশনী’ নামের একটি সিনেমাতে অভিনয় করেছেন। সীমানার উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে সাকিন সারিসুরি, কলেজ টুডেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।