জুমবাংলা ডেস্ক: ৬ ফেব্রুয়ারি ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল সিরিয়া এবং তুরস্ক। রিখটর স্কেলে মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। তারপর প্রায় ১০০ বার আফটার শকে কেঁপে উঠেছে তুরস্ক আর সিরিয়া। মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৪১ হাজার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হুর আশঙ্কা, এই সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। তুরস্কে ভূমিকম্প নতুন নয়। বার বার হয়। কেন বার বার কেঁপে ওঠে এই অঞ্চল? ২০২০ সালে এই অঞ্চল ৩৩ হাজার বার কেঁপে উঠেছে।
আমেরিকার জিওলজিক্যাল সার্ভে (ভূতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ) জানিয়েছে, ৬ ফেব্রুয়ারি ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল গাজ়িয়ানতেপের থেকে ৩৩ কিলোমিটার দূরে ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৮ কিলোমিটার গভীরে। তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াৎ ওৎকে জানিয়েছেন, এই গাজিয়ানতেপ এবং কাহরামানমারাস এলাকায় ৯০০টি বাড়ি মাটির সঙ্গে মিশে গিয়েছে। এতোটাই ছিল সেই ভূমিকম্পের তীব্রতা। সিরিয়ার জাতীয় ভূমিকম্প কেন্দ্রের প্রধান রায়েদ আহমেদ জানিয়েছেন, ইতিহাসে এর থেকে তীব্র ভূমিকম্প হয়নি তাদের দেশে। অন্তত যবে থেকে ভূমিকম্পের মাত্রা নথিভুক্ত করা হচ্ছে, তারপর থেকে এতো তীব্র ভূকম্প সে দেশ দেখেনি।
ভূমিকম্পের ফলে তুরস্কের ১০টি শহর প্রবল ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। সরকারি হিসাবে ভেঙে পড়েছে দুই হাজার ৮১৮টি বাড়ি। যদিও বেসরকারি হিসাব বলছে, এর থেকে কয়েক গুণ বেশি বাড়ি ধ্বংস হয়েছে ভূমিকম্পে। প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েথে গাজিয়ানতেপের ২২০০ বছরের পুরনো প্রাসাদ। কিন্তু তুরস্কে এই ভূমিকম্প প্রথম নয়। ভূমিরূপের কারণে বার বার কেঁপে ওঠে তুরস্ক। ২০২০ সালে এই অঞ্চল ৩৩ হাজার বার কেঁপে উঠেছে। ডিজাস্টার অ্যান্ড এমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট অথরিটি জানিয়েছে, এর মধ্যে ৩৩২টি ভূমিকম্পের মাত্রা রিখটার স্কেল চার বা চার বেশি ছিল।
যে টেকটনিক পাতের উপর তুরস্ক অবস্থিত, তার কারণেই বার বার ভূমিকম্প হয় সে দেশে। পৃথিবী ১৫টি বড় টেকটনিক পাতের উপর রয়েছে। এই পাতগুলো একে অপরকে ধাক্কা দিলে বা সংঘর্ষ হলে ঘটে ভূমিকম্প। তুরস্ক আনাতোলীয় টেকটনিক পাতের উপর অবস্থিত। ইউরেশীয় এবং আরবীয় পাতের মাঝে চ্যুতি বরাবর রয়েছে এই আনাতোলীয় টেকটনিক পাত। যে চ্যুতিরেখা বরাবর ইউরেশীয় এবং আনাতোলীয় টেকটনিক পাতের মিলন হয়েছে, তাকে বলে উত্তর আনাতোলিয়া চ্যুতিরেখা (এনএএফ)। এই উত্তর আনাতোলীয় চ্যুতিরেখা ইস্তানবুলের দক্ষিণ থেকে উত্তর-পূর্ব তুরস্ক পর্যন্ত বিস্তৃত। অশান্ত এই চ্যুতিরেখার কারণে বার বার ভূমিকম্প হয়েছে তুরস্কে।
১৯৯৯ সালে এই চ্যুতিরেখা বরাবর দুই পাতের ঘর্ষণের কারণে দুইটি বড় বড় ভূমিকম্প হয়েছিল তুরস্কে। একটি গোলসুক এবং একটি ডুজসে প্রদেশে। রিখটর স্কেলে মাত্রা ছিল যথাক্রমে ৭ দশমিক ৪ এবং ৭ দশমিক ০। ঐ দুই ভূমিকম্পে মারা গিয়েছিলেন ১৮ হাজার জন। জখম হয়েছিলেন ৪৫ হাজার জন। ২০১১ সালে তুরস্কের ভানে আরো একটি ভূমিকম্প হয়েছিল। রিখটর স্কেলে মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ১। মারা গিয়েছিলেন অন্তত ৫০০ জন। আনাতোলিয়া টেকটনিক পাত এবং আরবীয় পাত যে চ্যুতিরেখা বরাবর মিলিত হয়েছে, তাকে বলে পূর্ব আনাতোলীয় চ্যুতিরেখা। এই চ্যুতিরেখার দৈর্ঘ্য ৬৫০ কিলোমিটার। পূর্ব তুরস্ক থেকে ভূমধ্যসাগরের তলদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে চ্যুতিরেখাটি। আরবীয় পাতটি ক্রমেই উত্তরের দিকে সরে যাচ্ছে। সে কারণে এই পূর্ব আনাতোলীয় চ্যুতিরেখা বরাবর বার বার ভূমির স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়। এর ফলে হয় ভূমিকম্প।
এ ছাড়াও এই অঞ্চলে আরও একটি পাতের নড়াচড়ার কারণে বার বার হয় ভূমিকম্প। ভূমধ্যসাগরের অতলে দক্ষিণ গ্রিস থেকে পশ্চিম তুরস্ক পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে একটি পাত। নাম এজিয়ান পাত। এর সঞ্চালনের কারণেও কেঁপে ওঠে এই অঞ্চলের ভূমি। একটি গবেষক সংস্থা জানিয়েছে, তুরস্কের ৯৫ শতাংশ জমি ভূমিকম্পপ্রবণ। পুরো দেশের এক তৃতীয়াংশ এলাকায় ভূমিকম্পের ঝুঁকি অনেক বেশি। পূর্ব আনাতোলনিয়া এবং ইস্তানবুলের মতো বড় শহরও এর মধ্যেই পড়ে। ২০১৩ সাল থেকে ২০২২ সালে তুরস্কে ৩০ হাজার ৬৭৩টি ভূমিকম্প হয়েছে। তার মধ্যে দুইটির মাত্রা রিখটর স্কেলে ৬ ফেব্রুয়ারির মতো। এর আগে এত তীব্র ভূমিকম্প তুরস্কে হয়েছিল ১৯৩৯ সালে। তখন ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৮ দশমিক ০। সেখানে মারা গিয়েছিলেন ২০ হাজার জন। এক লাখ ১৬ হাজার ৭২০টি বাড়ি ধসে পড়েছিল।
১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত তুরস্কে পাঁচটি বড়সড় ভূমিকম্প হয়েছিল। ১৯০০ সাল থেকে সে দেশে ৭৬টি বড় ভূমিকম্প হয়েছিল। তাতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৯০ হাজার মানুষ। গত শতকে তুরস্কে এই ভূমিকম্পের জন্য ক্ষতি হয়েছে ২৫০০ কোটি ডলার।
সূত্র: আনন্দবাজার
ছবির ধাঁধাঁ: ছবিটিতে লুকিয়ে আছে একটি ব্যাঙ, ৯৫% মানুষই খুঁজে পেতে ব্যর্থ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।