স্পোর্টস ডেস্ক : কার্লো আনচেলত্তি; যাঁকে বলা হয় কোচ জগতের ডন। এই বলাটা শুধুই বলার জন্য নয়! তিনি যে কোচদেরও কোচ। জিদান-গার্দিওলারা তাঁকে মানেন আইডল। সেই আনচেলত্তি কোচ হয়ে আসার পর রিয়াল মাদ্রিদ যে তাদের রাজত্ব ফিরে পেতে বেশি সময় লাগবে না, সেটা অনুমেয় ছিল। শেষ পর্যন্ত সেটাই হয়েছে। তরুণদের নিয়ে নতুন একটা দল গড়েছেন এই ইতালিয়ান। ভুলগুলো কোথায় ছিল, সেটা তিনি ভালো করেই জানতেন।
যাঁর শরীরে রিয়ালের ডিএনএ, তাঁর তো আর হতাশ হওয়ার কিছু নেই। ডাগআউট থেকে পাখির চোখে সেসব ভুল শুধরে দেন দ্রুত। নিখুঁত কৌশলে মুহূর্তে পাল্টে দেন সব সমীকরণ। এই পথে তাঁকেও পোহাতে হয় বহু ঝামেলা, ডিঙাতে হয় অনেক বাধা। কখনও চোটের ঝাপটা, কখনও তারকাদের অফফর্ম আবার কখনও সমর্থকদের চাপ। সবকিছু বুদ্ধির জালে আর চোখের ইশারায় বদলে দিয়েছেন এই মাস্টারমাইন্ড কোচ। আর রিয়ালের ৩৬তম লা লিগা জেতার লগ্নেও আনচেলত্তিকে নিয়ে হবে অনেক কথা। তবে সেসব ইতিবাচক, সেসবে থাকবে বাহবার বাহার। কারণ বছর ঘুরতেই এই রিয়ালকে আপন কক্ষে ফেরাতে তাঁর অবদান কোনো অংশে কম নয়। এটাও ঠিক, তাঁর ছাত্ররাও তাঁর দেখানো পথেয় চলতে শিখে যান দ্রুত। সে জন্যই তো এমন অর্জন ঘরে তোলা গেল।
বেলিংহাম ফ্যাক্টর
চোখের জল ফেলতে ফেলতে বরুশিয়া ডর্টমুন্ড থেকে বিদায় নিয়েছিলেন জুড বেলিংহাম। রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর দারুণ একটা সুযোগ পেয়ে যান তিনি। করিম বেনজেমা রিয়াল ছাড়ার পর পারফেক্ট নাম্বার নাইন ছিল না তাদের। সেই শূন্যতাই যেন পূরণ করে দেন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডে খেলা বেলিংহাম। নিয়মিত গোল করে দলকে একের পর এক পয়েন্ট তুলে দেন। সেই সঙ্গে অন্যান্য প্রতিযোগিতায়ও চলে বেলিংহামের দাপট। সব মিলিয়ে এরই মধ্যে ৩৮ ম্যাচে ২২ গোল করে ফেলেছেন তিনি, যেখানে অ্যাসিস্ট রয়েছে ১০টি।
রদ্রিগো-ভিনির রসায়ন
রিয়াল আক্রমণভাগে সর্বদা নিখুঁত খেলোয়াড়দেরই রাখে। সেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, বেল ও বেনজেমাদের পর অনেকটা সময় এখানটায় অগোছাল ছিল। তবে কার্লো আনচেলত্তি কোচ হয়ে আসার পর আক্রমণে একটা সমন্বয় আনার চেষ্টা করেন। তিনি দুই ব্রাজিলিয়ানকে এক সুতায় গাঁথেন। তারাও বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে ম্যাচ বের করতে পারেন। প্রতিপক্ষ যতই শক্তিশালী হোক না কেন, ম্যাচের অন্তিম সময়ে হলেও গোল করে দলকে জেতানোর সক্ষমতা রাখেন এই রদ্রিগো ও ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। তাদের মধ্যে হয়ে যায় চমৎকার বোঝাপড়া। তবে দু’জন একসঙ্গে না থাকলেও বদলিরা সেই অভাব অনেকটাই মেটাতেন। সব মিলিয়ে আনচেলত্তি জোড়ায় জোড়ায় আক্রমণের ত্রয়ী বানিয়ে চমক দেখিয়ে দেন।
ইনজুরিকে বুড়ো আঙুল
ইনজুরিতে ভীষণ বেকায়দায় পড়ে যায় রিয়াল; একজন ভালো তো আরেকজন চোটে। একটা সময় তো চোটের সংখ্যা একসঙ্গেই পাঁচ থেকে ছয়জন হয়। গোলকিপার থিবো কুর্তোয়া, ডিফেন্ডার মিলিতাও; আবার ভিনির ছোটখাটো চোট, বেলিংহামের ইনজুরিতে পড়া– এভাবে নিয়মিত চোটের সঙ্গে লড়াই করেই স্কোয়াড নিয়ে পরিকল্পনা সাজাতে হয়েছিল আনচেলত্তিকে। তবে এই কাজটা বেশ বুদ্ধিমত্তার সঙ্গেই করেন তিনি। আলাবা না থাকায় তাঁর বদলি কে হবেন, সেটা আগেই যেন ঠিক করে নেন। এর পর আক্রমণভাগে আবার মাঝমাঠে কেউ চোটে পড়লে তাঁর বদলি হিসেবে সবচেয়ে বেটার অপশনটাই বেছে নেন এই কিংবদন্তি কোচ।
মিডফিল্ড নিয়ে মুনশিয়ানা
মিডফিল্ড নিয়ে রিয়াল বরাবরের মতো পারফেক্ট। তাদের কাছে সর্বদা একাধিক অপশন থাকে। লুকা মডরিচ, টনি ক্রুসের মতো অভিজ্ঞরা থাকার পরও বেলিংহাম, চুয়েমেনি, কামাভিঙ্গা আবার ভালভার্দেকে প্রস্তুত রাখতেন। সবাইকে যে সমান সুযোগ দিতে হবে, এমন নয়। দলের প্রয়োজন অনুযায়ী কিংবা প্রতিপক্ষ বিবেচনা করে আবার ফরমেশনের খাতিরে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে রিয়াল কোচ মিডফিল্ডকে সাজিয়েছেন। যেটা পুরোপুরি সফল বলাই যায়। মূলত আক্রমণে বল বানিয়ে দেওয়া কিংবা মাঝমাঠ ব্লক করে প্রতিপক্ষের সুযোগগুলো নষ্ট করার কাজ এই ক’জন মিডফিল্ডারের সবাই মন দিয়েই করেছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।