জুমবাংলা ডেস্ক: রাজধানীর এক ব্যবসায়ী সম্প্রতি তার পরিচিত কারওয়ান বাজারের এক ব্যবসায়ীর মাধ্যমে ম্যাগনেটিক কয়েন কেনার প্রস্তাব পান। লোভে পড়ে ‘অতি মূল্যবান’ মুদ্রা কিনতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন তিনি।
ভেবেছিলেন এসব বিক্রি করে বিপুল অর্থের মালিক হবেন। তাই খরচ করেন ৭৫ লাখ টাকা।
যাদের হাতে তিনি টাকাগুলো দেন, তারা বরিশালের ঠিকানায় যেতে বলেন ওই ব্যবসায়ীকে। ঠিকানায় গিয়ে তিনি প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারেন। উপায় না পেয়ে ঢাকা ফেরেন, মামলা দায়ের করেন খিলক্ষেত থানায়।
ভুক্তভোগীর মামলা তদন্তে নামে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) গুলশান বিভাগ। তদন্তের ধারাবাহিকতায় কথিত ম্যাগনেটিক কয়েন বিক্রির নামে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের দায়ে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। মূলত তারা প্রতারণাকারী একটি চক্র।
গ্রেফতাররা হলেন- মো. ইউসুফ আলী, মো. খবির চৌকিদার, মো. শামীম, মো. নাসির উদ্দিন আকন ও মো. জসিম গাজী। শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডি লেকপাড় এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে ডিবি। এ সময় তাদের কাছ থেকে কথিত ১০টি ম্যাগনেটিক কয়েন জব্দ করা হয়।
রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) এসব তথ্য নিশ্চিত করেন ডিবি গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার এস এম রেজাউল হক। জানান, কারওয়ান বাজারের এক পরিচিত ব্যবসায়ীর মাধ্যমে ভুক্তভোগীর সঙ্গে আলাপ হয় কয়েকজন ম্যাগনেট কয়েন কারবারির। ভুক্তভোগীকে তারা নিজেদের কাছে থাকা একটি বিশেষ কয়েনের কথা জানান। তাকে বলা হয়, কয়েনটি কিনে দেশে বা বিদেশে বিক্রি করতে পারলে তিনি বহু অর্থের মালিক হতে পারবেন।
ম্যাগনেট কয়েন কেনার জন্য অর্থ বিনিয়োগ করেছেন এমন এক ব্যক্তির নামও বলা হয় ভুক্তভোগীকে। তাদের কথায় আশ্বস্ত হতে খিলক্ষেত থানার নিকুঞ্জ এলাকায় মিন্টু নামে ওই ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করতে যান ভুক্তভোগী।
সেখানে ইঞ্জিনিয়ার ইউসুফ নামে অপর এক ব্যক্তির সঙ্গে তার দেখা হয়। পরে তাদের দু’জনকে পরস্পরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় কথিত ম্যাগনেট কয়েন ব্যবসায়ীরা।
পরিচয়ের এক পর্যায়ে ওই ব্যবসায়ীকে ম্যাগনেট কয়েন কিনতে উৎসাহিত করেন ইউসুফ। তিনি ইঞ্জিনিয়ার এবং ম্যাগনেট কয়েন সম্পর্কে তার ধারণা থাকায় ভুক্তভোগীর আস্থা হয়। পরে গত ২৮ আগস্ট মিন্টুর দেওয়া ঠিকানায় কয়েন কেনার জন্য নগদ ৭৫ লাখ টাকা টাকা পরিশোধ করেন ওই ব্যবসায়ী। তার কাছ থেকে টাকা নেন ইউসুফ আলী, খবির চৌকিদার, শামীম, নাছির, জসিম ওরফে জুয়েল।
এস এম রেজাউল হক আরও জানান, টাকা পাওয়ার কয়েকদিন পর ইঞ্জিনিয়ার ইউসুফ ভুক্তভোগীকে কল করেন। জানান, কয়েকদিনের মধ্যে তাকে বরিশাল যেতে হবে। পরে গত ৩ সেপ্টেম্বর প্রাইভেটকারযোগে ভুক্তভোগী বরিশাল যান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার ইউসুফ। সেখানে তারা একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান করেন। হোটেল রুমে থেকেই ইউসুফ কয়েন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
বার বার ফোন দিলেও প্রতারক চক্রের সদস্যরা আসবো-আসি বলে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। পরে গত ৪ সেপ্টেম্বর সকালে ভুক্তভোগীকে হোটেল কক্ষে রেখে ইঞ্জিনিয়ার ইউসুফ ম্যাগনেট কয়েনের মালিকদের সঙ্গে দেখা করতে যান।
তিনি চলে যাওয়ার পর সময় অতিবাহিত হতে থাকলে ভুক্তভোগী তার সঙ্গে কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এ সময়-ই মূলত তিনি প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে ঢাকা ফিরে আসেন।
ডিবি গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জানান, খিলক্ষেত থানায় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর দায়ের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তদন্ত করা হয়। এর ভিত্তিতে প্রতারক চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করে ডিবি। চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আসামিদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।