আল্লামা আশরাফ আলী থানবি (রহ.) : মানুষের উচিত প্রথমে ধর্ম কাকে বলে তা বুঝে নেওয়া, নতুবা কোরআন ও হাদিসের অনেক বিধান ও নির্দেশ তাদের বোধগম্য হবে না। ধর্ম প্রকৃতপক্ষে কয়েকটি বিষয়ের সমষ্টি। যদিও বর্তমান সময়ে মানুষ ধর্ম বলতে কেবল নামাজ পড়াকে বোঝে। কেউ আবার নামাজও বাদ দিয়েছে।
তারা এ ক্ষেত্রে একটি হাদিসের মনগড়া ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে থাকে। তা হলো ‘যে বলে আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ আরো ভয়ংকর বিষয় হলো- একদল মানুষ এমন বের হয়েছে, যারা বলে- রাসুল (সা.)-কে স্বীকার করার ওপর পরকালীন মুক্তি নির্ভরশীল নয়।
প্রিয় বন্ধুরা! আলেমরা যে কান্নাকাটি করছে তার কারণ হলো- আপনার ঘরে আগুন লেগেছে, কিন্তু আপনি তা অনুধাবন করছেন না।
সত্যান্বেষী বিধর্মীরা ইসলামের প্রশংসায় পঞ্চমুখ আর মুসলিমরা ইসলাম থেকে বিমুখ—এটা আল্লাহর অভিশাপ ছাড়া আর কিছুই না।
প্রকৃতপক্ষে পাঁচটি জিনিসের সমষ্টি হলো ইসলাম বা দ্বিনে মুহাম্মদি। তা হলো— ১. আকিদা ও বিশ্বাস, ২. ইবাদত, ৩. লেনদেন, ৪. সামাজিক শিষ্টাচার, ৫. আধ্যাত্মিক চরিত্র ও গুণাবলি।
বর্তমান মুসলিম সমাজের বেশির ভাগ অনুসারী এই পাঁচটি বিষয়ের ওপর পুরোপুরি আমল করছে না।
তারা একাংশের ওপর আমল করছে, অন্য অংশের ব্যাপারে উদাসীন। প্রায় সবাই সামাজিক শিষ্টাচার ও আধ্যাত্মিক চরিত্র গঠনের ব্যাপারে অমনোযোগী। তা একপ্রকার ত্যাগ করেছে বলা যায়।ইসলাম আগমনের আগে পৃথিবীতে এই পাঁচটি বিষয়ের ওপর ভারসাম্যপূর্ণ আমল না থাকায় অথবা বিষয়গুলোতে ত্রুটি থাকায় পৃথিবীতে ফাসাদ ছড়িয়ে পড়েছিল। ইসলাম এসে পাঁচটি বিষয়ে সংস্কার করে পৃথিবীর ফাসাদ দূর করতে প্রয়াসী হয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে, ‘দুনিয়ায় শান্তি স্থাপনের পর তোমরা তাতে বিপর্যয় ঘটিও না। তাঁকে ভয় ও আশার সঙ্গে ডাকবে। নিশ্চয়ই আল্লাহর অনুগ্রহ সত্কর্মপরায়ণদের নিকটবর্তী।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৫৬)
এসব বিষয়ের ত্রুটি-বিচ্যুতি সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। কেননা শরিয়ত যেসব কল্যাণের প্রতি লক্ষ রাখে মানুষের বিবেক তার প্রতি লক্ষ রাখতে পারে না। একটা দৃষ্টান্ত দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। কেউ সময় হওয়ার আগেই গাছের ফল বিক্রি করল। অথচ শরিয়তে এমন বিক্রয় হারাম। কেননা গাছে ফল আসার আগে তা বিক্রি করলে অস্তিত্বহীন বস্তু বিক্রি করা হয়। এমন বিক্রয়ে যেকোনো এক পক্ষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হয়তো বাগানের মালিক উপযুক্ত মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়, নতুবা ক্রেতা আশানুরূপ ফল থেকে বঞ্চিত হয়, যা সামাজিক বিবাদ তৈরি করে। এভাবে উল্লিখিত পাঁচটি বিষয়ের সঙ্গে সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়টি জড়িত।
একইভাবে আকিদা ও বিশ্বাস পৃথিবীর শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যেমন মিথ্যা না বলা, সত্য বলা, সহানুভূতিশীল হওয়া, স্বার্থপরের মতো আচরণ না করা ইত্যাদি বিষয় চরিত্রের অন্তর্ভুক্ত। নাগরিক জীবনের রীতি-নীতিগুলোর মধ্যে এগুলো অন্যতম। পৃথিবীর শান্তি-শৃঙ্খলাও এসব চারিত্রিক গুণের ওপর নির্ভরশীল।
পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, এসব গুণাবলি দুই শ্রেণির মানুষের ভেতর পাওয়া যায়। ক. যারা আল্লাহর একত্ববাদ, রাসুলের রিসালাত ও পরকালে বিশ্বাসী, খ. যারা এগুলোতে বিশ্বাসী নয়। এই দুই শ্রেণির মানুষের ভেতর পার্থক্য হলো অবিশ্বাসী ব্যক্তি এ গুণাবলি ততক্ষণ রক্ষা করবে, যতক্ষণ না তার পার্থিব স্বার্থ ব্যাহত হয় এবং মানুষের চোখে লজ্জিত হওয়ার ভয় থাকে।
যদি কখনো এমন হয় যে এসব চরিত্র বিসর্জন দিলে তার স্বার্থও রক্ষা পাবে এবং সে মানুষের চোখেও লজ্জিত হবে না, তখন অবিশ্বাসী ব্যক্তি তা বিসর্জন দিতে কালবিলম্ব করবে না। বিপরীতে যে আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী, যে পরকালীন জবাবদিহিকে ভয় পায়, সে সর্বাবস্থায় চারিত্রিক গুণাবলি রক্ষা করে চলবে। এতে তার পার্থিব স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হলেও সে ভ্রুক্ষেপ করবে না।
মাওয়ায়েজে আশারিয়া থেকে মো. আবদুল মজিদ মোল্লার ভাষান্তর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।