১৯৬৯ সালের জুলাই মাসে অ্যাপোলো ১১ মিশনে প্রথমবারের মতো চাঁদে পা রাখেন নীল আর্মস্ট্রং ও বাজ অলড্রিন। পৃথিবীর বাইরের গ্রহ-উপগ্রহ-গ্রহাণু—সব মিলে এটাই মানুষের প্রথম অবতরণ। উল্লেখ্য, এ সময় অ্যাপোলো ১১ নভোযানে চাঁদের কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করছিলেন মাইকেল কলিন্স। তবে চন্দ্রজয়ের এই সফলতা একবারে আসেনি।
এ জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে অনেক প্রাণীকে। মানুষ প্রথম মহাকাশে যাওয়ার আগে বেশ কিছু প্রাণীকে মহাকাশে পাঠানো হয়েছে। এর পরেও বারেবারে মহাকাশ অভিযানের আগে বিভিন্ন প্রাণীকে পাঠানো হয়েছে মহাকাশে। মূলত মহাকাশে প্রাণীদের বাসযোগ্যতা পরীক্ষা করার জন্যই এ কাজ করা হয়েছে নানা সময়। অর্থাৎ এসব প্রাণী ছিল, যাকে বলে, ‘গিনিপিগ’। এগুলোর বেশির ভাগই মারা গেছে। চলুন, সেসব প্রাণীর সঙ্গে পরিচিত হওয়া যাক।
নেমাটোডা
কলাম্বিয়া স্পেস শাটল ২০০৩ সালে উৎক্ষেপণ করা হয়। সে মিশনে ৭ নভোচারীর সঙ্গে পরীক্ষা করার জন্য ৮০টি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দিয়ে দেওয়া হয় সঙ্গে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে পৃথিবীতে ফেরার পথে দুর্ঘটনা ঘটে। এতে মারা যান ৭ নভোচারী। কিন্তু নেমাটোডার একটা দল (গোলকৃমি) এই প্রচণ্ড উত্তাপেও বেঁচে ছিল। বর্তমানে মহাকাশে প্রায়ই এই নেমাটোডা বা গোলকৃমি পাঠানো হয় গবেষণার জন্য।
টার্কিগ্রেড
২০০৭ সালে প্রথম টার্কিগ্রেড মহাকাশে পাঠানো হয়। এটি একটি অমেরুদণ্ডী প্রাণী। এরা জলজ ভালুক নামেও পরিচিত। মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে দেখতে হয়। এই প্রাণীর পৃথিবীর যেকোনো পরিবেশে টিকে থাকার ক্ষমতা আছে। এমন একটা প্রাণী মহাকাশে কীভাবে টিকে থাকবে, তা পরীক্ষার করার জন্যই টার্কিগ্রেড পাঠানো হয়েছিল মহাকাশে। মহাকাশ থেকে ফেরার পর দেখা গেছে, ৬৮ শতাংশ টার্কিগ্রেড মহাকাশীয় বিকিরণ থেকে বেঁচে ছিল।
মাছ
১৯৭৩ সালে মামিচোগ নামে একটা মাছ পাঠানো হয়েছিল মহাকাশে। সঙ্গে ছিল ৫০টি মাছের ডিম। এ মাছটা ছিল লবণাক্ত জলাভূমির। এরপর ২০১২ সালে জাপানি স্পেস এজেন্সি (জাক্সা) মেডাকা নামে আরও একটি মাছ পাঠায় মহাকাশে। অ্যাকুয়ারিমে মাছের সঙ্গে ছিল খাবার ও একটা এলইডি লাইট। মাছ মহাকাশে স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে পারে কি না এবং বিকিরণ মাছের ওপর কেমন প্রভাব ফেলে, তা পরীক্ষা করাই ছিল মিশনের উদ্দেশ্য। পরীক্ষায় দেখা গেছে, মহাকাশে যাওয়ার পর মেডাকা মাছের হাড়ের ঘনত্ব কমে গেছে। শেষদিকে এদের চলার গতিও কমে যায়। এ ছাড়া শারীরবৃত্তিয় কিছু পরিবর্তনও দেখা গেছে। মানুষের ওপর মাইক্রোগ্রাভিটি যেমন প্রভাব ফেলে, এ মাছের ওপরও তেমন প্রভাব পড়েছিল।
মাকড়সা
১৯৬৯ সালে চাঁদে প্রথম মানুষ পাঠানোর পর মহাকাশে প্রাণী পাঠানোর দিকে আরও জোর দেওয়া হয়। প্রাণীদের ওপর মাইক্রোগ্র্যাভিটি কেমন প্রভাব ফেলে, তা বোঝার জন্য আরও প্রাণী মহাকাশে পাঠানোর উদ্যোগ নেয় নাসা। ১৯৭৩ সালে অনিতা ও আরাবোলা নামে দুটি মাকড়সা পাঠানো হয় মহাকাশে। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখতে চেয়েছিলেমন, মহাকাশেও মাকড়সা জাল বুনতে পারে কি না। এ পরীক্ষা করার বুদ্ধিটা এসেছিল যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস হাই স্কুলের ছাত্র জুডিথ মাইলসের মাথা থেকে। সে পরীক্ষায় পাস করেছিল মাকড়সা দুটি। তবে মহাকাশে বোনা জাল পৃথিবীর চেয়ে কিছুটা সূক্ষ্ম ছিল।
ব্যাঙ
মহাকাশে ব্যাঙ পাঠানোর জন্য গবেষণা শুরু হয় ১৯৫৯ সালে। তবে মহাকাশে ব্যাঙ পাঠানো হয় ১৯৭০ সালে। নাসা সেবার দুটি ব্যাঙ পাঠিয়েছিল। পরীক্ষা-নিরিক্ষা চালানোর জন্য ব্যাঙের শরীরে নানা যন্ত্র লাগানো হয়েছিল। গবেষণা শেষে দেখা গেছে, ৬ দিন পর ব্যাঙগুলো মহাকাশের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছিল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।