জুমবাংলা ডেস্ক: বর্তমানে সিক্স প্যাক অ্যাবসই পৌরুষের সেরা প্রতীক। পুরুষদের কাঠ-কাঠ চাবুক চেহারা বরাবর নারী হৃদয়ে দোলা দেয়। কিন্তু পৃথিবীতে এমনও উপজাতি রয়েছে যেখানে সুঠাম চেহারা নয়, বরং মেদবহুল পুরুষেরাই সৌন্দর্য এবং পৌরুষের প্রতীক।
ইথিওপিয়ার দক্ষিণে ওমো উপত্যকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাস বোদি উপজাতির। সেই উপজাতির নারীদের পছন্দ গোল ভুঁড়িযুক্ত পুরুষেরা। আর নারীদের মনের মতো চেহারা অর্জন করতে নির্দিষ্ট সময় দিনের পর দিন গরুর দুধ এবং রক্ত মিশ্রিত একটি তরল পান করেন বোদি পুরুষেরা। সেই সময়ে ঐ পুরুষেরা নিজেদের সঙ্গম থেকেও বিরত রাখেন।
নতুন বছর উদ্যাপনের জন্য প্রতি বছর কায়েল উৎসব পালন করেন বোদি উপজাতির মানুষেরা। সেই উৎসবে সুদর্শন পুরুষ বেছে নিতে একটি বিশেষ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগিতায় নিজেদের মেদবহুল শরীর প্রদর্শন করেন পুরুষেরা। যে পুরুষের উদর যত স্ফীত এবং নিটোল, তিনিই জিতে নেন সেরার তকমা। বোদি উপজাতির নারীরা স্থূল পুরুষদের দ্বারা আকৃষ্ট হন। এই উৎসবে অনেক নারীই নিজেদের মনের মতো সঙ্গীকে খুঁজে পান।
যৌবনে বিশাল বপুর অধিকারী হওয়া বোদি উপজাতির প্রতিটি কিশোরের স্বপ্ন। মোটা হওয়ার জন্য কী করেন বোদি পুরুষেরা? প্রচলিত রয়েছে, স্থূল চেহারা পেতে ছয়মাস ধরে গরুর দুধে রক্ত মিশিয়ে পান করেন বোদি পুরুষেরা। এই ছয়মাস যাবৎ বোদি পুরুষেরা ছোট্ট কুঁড়েঘরের মধ্যে থাকেন। শুধু খাওয়া আর ঘুম ছাড়া তাদের কোনো কাজ থাকে না। এমনকি, এই সময়ে নাকি পুরুষদের সঙ্গমও করতে দেওয়া হয় না।
এই ছয়মাস উপজাতির অনেক নারী পুরুষদের বিশেষ যত্নআত্তি করেন। কুঁড়েঘরের ভেতরে পুরুষদের মদ পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হয়। পুরুষদের জন্য গান গাওয়া এবং সকালে গরুর দুধ এনে দেওয়ার দায়িত্বও নারীরা কাঁধে তুলে নেন। বোদি পুরুষদের যে গরুর দুধ খেতে দেওয়া হয়, তাতে নাকি রক্ত মিশিয়ে দেওয়া হয়। বর্শা বা কুড়ুল দিয়ে গরুর শিরায় গর্ত করে সেখান থেকে রক্ত নিয়ে, সেই রক্ত দুধে মেশানো হয়। পরে মাটির প্রলেপ দিয়ে চাপা দেওয়া হয় গরুর দেহের ক্ষত।
ছয়মাসের প্রস্তুতি চলাকালীন সারাদিন ঐ দুধ এবং রক্ত মিশ্রিত তরল পান করেন পুরুষরা। দিনের আলো ফুটতেই রক্ত এবং দুধের ঐ মিশ্রণ পান করেন বোদি পুরুষেরা। প্রায় এক থেকে দুই লিটার মিশ্রণ পান করেন তারা। রক্ত জমাট বেঁধে মিশ্রণ যাতে থকথকে না হয়ে যায়, তার জন্য খুব দ্রুত ঐ তরল পান করা হয়। অনেকেই ঐ তরল পান করে বমি করে ফেলেন। অনেকে আবার কোনো উচ্চবাচ্য না করেই ঢকঢক করে ঐ তরল পান করে নেন।
চিত্রশিল্পী এরিক লাফর্গ জানিয়েছেন, কিছু বোদি পুরুষ এত মোটা হয়ে যান যে তারা আর হাঁটতে পারেন না। তার কথায়,‘বোদি উপজাতির যে পুরুষের উদর যত বড় হয়, তার খ্যাতি তত বেশি।’ তবে এই উৎসবের শেষে অনেক পুরুষই আবার শরীরচর্চায় মন দিয়ে স্থূল চেহারা কমানোর চেষ্টা করেন বলেও এরিক জানিয়েছেন। বোদিদের কায়েল উৎসব শেষ হয় একটি মোষ বলি দিয়ে। বোদি উপজাতির মানুষেরা একটি পবিত্র পাথর দিয়ে উৎসব শেষে মোষটিকে হত্যা করেন।
এই উৎসবে সাধারণত পর্যটকদের অংশ নিতে দেওয়া হয় না। মূলত ঐতিহ্য ধরে রাখতেই বোদি উপজাতির মানুষদের মধ্যেই এই উৎসবকে সীমাবদ্ধ রাখা হয়। কায়েল উৎসবের দিনে, প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া পুরুষরা মাটি এবং ছাই দিয়ে তাদের নগ্ন দেহ ঢেকে রাখেন। নিজেদের সুন্দর দেখাতে কিছু পুরুষ নিজেদের মাথায় উটপাখির পালক দিয়ে তৈরি মুকুট পড়েন।
সূত্র: আনন্দবাজার
Own the headlines. Follow now- Zoom Bangla Google News, Twitter(X), Facebook, Telegram and Subscribe to Our Youtube Channel