ফারেনহাইট স্কেল ব্যবহারকারীদের জন্য খুব একটা সহজবোধ্য নয়, খুব একটা যুক্তিগ্রাহ্যও নয়। পানি জমে বরফ হয়ে যাওয়ার তাপমাত্রা কেন ৩২ ডিগ্রি হবে, আর গরম হয়ে ফুটতে শুরু করবে কেন ২১২ ডিগ্রিতে? এর কোনো সদুত্তর নেই। ১৭৪২ সালে সুইডেনের বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী অ্যান্ডার্স সেলসিয়াস ফারেনহাইটের স্কেলকে সহজ করার ব্যবস্থা করলেন। তিনি পানির গলনাঙ্ককে ১০০ ডিগ্রি এবং স্ফুটনাঙ্ককে শূন্য ডিগ্রি ধরে একটি স্কেল চালু করলেন।
এই সেলসিয়াস স্কেল সহজ হলেও কেমন যেন উল্টো মনে হলো সবার কাছে। তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিগ্রির পরিমাণ বাড়া উচিত। সেলসিয়াস তাঁর স্কেল ঠিক করার আগেই ১৭৪৪ সালে মারা যান মাত্র ৪৩ বছর বয়সে। সেলসিয়াসের মৃত্যুর পর উদ্ভিদবিজ্ঞানী কার্ল লিনিয়াস সেলসিয়াস স্কেলকে উল্টে দিয়ে ঠিক করে দেন।
নতুন স্কেলে শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পানি জমে বরফ হয়ে যায়, আর ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পানি ফুটতে শুরু করে। তখন কিন্তু ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বলা হতো। কিন্তু কোণের পরিমাণও ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড হিসাবে মাপা হয় বলে ১৯৪৭ সালে তাপমাত্রা মাপার একককে ‘ডিগ্রি সেলসিয়াস’ হিসেবে প্রচলন করা হয়।
বিজ্ঞানীরা গ্যাসের আয়তনের ওপর তাপ ও চাপের প্রভাব এবং তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক খুঁজে বের করেন। ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জেমস জুল তাপগতিবিদ্যার আলোকে তাপমাত্রার আধুনিক সংজ্ঞা দেন। তাপমাত্রা হলো পদার্থের মধ্যস্থিত কণাগুলোর গড় গতিশক্তির পরিমাপ। কণাগুলোর গতিশক্তি যত বেশি, তার তাপমাত্রাও তত বেশি।
অর্থাৎ বস্তু তাপ শোষণ করে গরম হওয়ার অর্থ হলো বস্তুর কণাগুলোর গতি বেড়ে যাওয়া। আবার ঠান্ডা হওয়ার অর্থ হলো কণাগুলোর গতি কমে যাওয়া। যেমন পানি স্বাভাবিক তাপমাত্রায় তরল। পানিকে ঠান্ডা করতে থাকলে পানির অভ্যন্তরীণ কণাগুলোর গতি ক্রমেই কমে যায় এবং পানি জমে বরফ হয়ে যায়। আবার যখন অনেক বেশি গরম করা হয়, তখন কণাগুলোর গতি বেড়ে যেতে যেতে তারা বাষ্প হয়ে গ্যাসে পরিণত হয়।
১৮৬২ সালে স্কটল্যান্ডের পদার্থবিজ্ঞানী উইলিয়াম থমসন লর্ড কেলভিন ‘পরম শূন্য’ তাপমাত্রার ধারণা দেন। তিনি দেখান যে -২৭৩ দশমিক ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পদার্থের কণাগুলোর গতি একেবারে থেমে যায়। গতিশক্তি শূন্য হয়ে যাওয়ার কারণে তখন পদার্থের চাপও শূন্য হয়ে যায়।
এই তাপমাত্রাকে পরমশূন্য তাপমাত্রা ধরে তাপমাত্রার নতুন একটি স্কেল চালু হয়, যা কেলভিন স্কেল নামে পরিচিত। পরমশূন্য তাপমাত্রাকে শূন্য ডিগ্রি কেলভিন ধরা হয়। এই তাপমাত্রার নিচে আর কিছুতেই যাওয়া সম্ভব নয়, কারণ এই তাপমাত্রায় পদার্থের তাপ, চাপ, পারমাণবিক গতি সব শূন্য হয়ে যায়।
সাধারণ পারদ-থার্মোমিটার দিয়ে আমরা শরীরের তাপমাত্রা মাপি। কিন্তু পারদ-থার্মোমিটার ব্যবহারে অনেক বিপদও আছে। মুখের ভেতর থার্মোমিটার ঢুকিয়ে তাপমাত্রা পরিমাপ করার সময় যদি থার্মোমিটার ভেঙে যায়, তবে খুব ক্ষতি হতে পারে। তাই আস্তে আস্তে থার্মোমিটারের অনেক বিবর্তন ঘটেছে।
এখন ডিজিটাল থার্মোমিটার ব্যবহার করা হচ্ছে প্রায় সবখানে। ডিজিটাল থার্মোমিটারে কোনো পারদ থাকে না। তাপমাত্রার পরিবর্তনের সঙ্গে পদার্থের রেজিস্ট্যান্সের পরিবর্তন ঘটে। ডিজিটাল থার্মোমিটারে রেজিস্ট্যান্সের পরিবর্তনে বিদ্যুৎ-প্রবাহের যে পরিবর্তন ঘটে, তার হিসাব করে তাপমাত্রার পরিমাপ করা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।