আপনি হয়তো নানা সময়ে ভেবেছেন, আকাশের এত এত তারাকে আলাদা করা যায় কীভাবে? আসলে প্রতিটি তারারই একটা নাম আছে। আপনি চাইলেই সেসব নাম জেনে নিতে পারেন এবং আকাশে কোনো একটা তারাকে একা একাই খুঁজে বের করতে পারেন। খালি চোখেই আকাশে অনেক আকর্ষণীয় তারা, গ্রহ, উল্কা, গ্যালাক্সির মতো জিনিস দেখা সম্ভব, এমনকি গ্যালাক্সিও।
তারা দেখার জন্য গ্রাম কিংবা মাঠে যেতে হবে, তেমন নয়। আপনার বাসার ছাদ থেকে এমনকি জানালা দিয়েও অনেক তারা খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। তারা দেখার মূল ব্যাপারটা হলো আশপাশ অন্ধকার রাখা। সব বাতি নিভিয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। আপনার চোখে অন্ধকার সয়ে যাবে। ১৫-৪০ মিনিট প্রয়োজন অন্ধকারে চোখ সয়ে নিতে। এরপর কোনোভাবেই ফ্ল্যাশ জ্বালানো কিংবা মুঠোফোনের দিকে তাকানো যাবে না। এখন স্থির হয়ে বসে আকাশের তারা দেখতে শুরু করতে পারেন।
আপনি যদি বাইনোকুলার দিয়ে চাঁদ দেখতে চান, তাহলে সেরা সময় হলো পূর্ণিমার কিছু আগে বা পরের সময়। আর যদি শুধু তারা দেখতে চান, তবে সবচেয়ে ভালো সময় হলো, যখন আকাশে চাঁদ নেই অথবা অমাবস্যার আশপাশে যখন চাঁদ খুব অল্প আলো দিচ্ছে। যদি খুব আবছাভাবে কোনো তারা দেখতে পান এবং আরও ভালো করে দেখতে চান, তবে চোখের কোনা দিয়ে আড়চোখে তাকাতে পারেন তারাটির দিকে। তখন আরেকটু ভালো করে দেখতে পাবেন।
রাতের যেকোনো সময় তারা দেখতে পাওয়া যাবে। কিন্তু তারা ও গ্রহগুলো পূর্ব দিকে উঠে পশ্চিমে অস্ত যায়। তাই কোন তারাটি দেখতে চান, সেটি কতক্ষণ আকাশে থাকবে, সেটা আগেই বুঝে নেওয়া ভালো। একটু রাত করে যখন আশপাশের সব বাতি নিভিয়ে দেওয়া হয়, তখন তারা দেখতে শুরু করতে পারেন। তবে শীতকালে শেষ রাতে কুয়াশা পড়লে আবার তারা দেখা কঠিন হয়ে ওঠে।
যখন আপনি প্রথম তারা দেখা শিখছেন, তখন আসলে বাইনোকুলার বা টেলিস্কোপের একদমই প্রয়োজন নেই। পুরো আকাশে অসম্ভব আকর্ষণীয় অনেক কিছুই আছে, যা খালি চোখেই দেখা যায়। এর মধ্যে আছে গ্রহ, তারা, কৃত্রিম উপগ্রহ, উল্কাপাতসহ অনেক কিছুই।
দশ গুণ বর্ধন করে এমন একটি বাইনোকুলার দিয়ে আপনি দেখতে পাবেন চাঁদের ক্র্যাটার। এ ছাড়া দেখতে পাবেন ক্র্যাটার (বিশাল আকারের), বৃহস্পতি গ্রহের চাঁদ এবং ধূমকেতু (যখন সেটি আকাশে থাকে)। ২৫ থেকে ৫০ গুণ বর্ধন করে, এমন ছোট আকারের টেলিস্কোপ দিয়ে শনির বলয় দেখা সম্ভব। প্রয়োজনে ছোট বাইনোকুলার বা টেলিস্কোপ কিনতে পারেন কিংবা খালি চোখেই উপভোগ করতে পারেন আকাশের সৌন্দর্য।
ভালো কোয়ালিটির ছবি পেতে চাইলে কখনোই জুম করা যাবে না। ISO ১০০–এর কাছাকাছি রাখতে পারেন। একটু লম্বা সময় ধরে শাটার চালু রাখলে ভালো ছবি পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু ২০ সেকেন্ড ধরে শাটার খোলা রাখলে ছবি আবার ঝাপসা হয়ে যাবে। কারণ, পৃথিবীটা ঘুরছে। তাই খুব দ্রুতগতিতে তারা আর গ্রহগুলো সরে যায়।
আপনি নিশ্চয়ই মাঝেমধ্যে অন্ধকারে বসে থাকলে আকাশে উল্কাপাত দেখতে পান। উল্কাপাত যেকোনো সময়ই দেখা যেতে পারে। তবে বছরের নির্দিষ্ট কিছু দিনে উল্কাবৃষ্টি হয়। যখন একদিকে তাকিয়ে আপনি মিনিটে কয়েকটি উল্কাপাত দেখতে পাবেন। সাধারণত উল্কাবৃষ্টি দেখা যায় মধ্যরাতের পর।
উল্কাপাত নিশ্চয়ই আপনি চেনেন। যখন একটা আলোর ঝলক আকাশের একদিক থেকে অন্যদিকে খুব দ্রুত ছুটে যায় এবং একটু পরই নিভে যায়, সেটাকে বলে উল্কা। এগুলো আসলে গ্রহাণু কিংবা ধূমকেতু থেকে ছুটে আসা ছোট ছোট টুকরা। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢুকে যাওয়ায় খুব দ্রুত এটা নিচের দিকে পড়তে থাকে এবং বাতাসের সঙ্গে ঘর্ষণে উত্তপ্ত হয়ে আগুন ধরে যায়। এটা পুড়ে যাওয়ার সময়টুকুতেই আমরা একে উল্কাপাত হিসেবে দেখতে পাই।
গ্রহাণু হলো পাথরের পিণ্ড। এগুলো আসে মঙ্গল আর বৃহস্পতি গ্রহের মাঝামাঝি অঞ্চলের অ্যাস্টেরয়েড বেল্ট থেকে। আর ধূমকেতু আরও দূরের বস্তু। ধূমকেতুতে প্রচুর পরিমাণে বরফ থাকে। যখন এটি সূর্যের একটু কাছে আসে, তখন বরফগুলো বাষ্পে পরিণত হতে থাকে এবং ঝাড়ুর মতো লম্বা লেজ তৈরি করে।
তারা দেখার জন্য কিছু অ্যান্ড্রয়েড ও অ্যাপল অ্যাপ আছে। Star Chart, Sky Walk 2 কিংবা Sky Map ব্যবহার করতে পারেন। প্লে স্টোর থেকে অ্যাপসটি ডাউনলোড করে লোকেশন পারমিশন দিন। এরপর আকাশের যেদিকে মোবাইল তাক করবেন, সেদিকের তারাগুলো নামসহ দেখা যাবে অ্যাপসে। শুরু করার জন্য একদম বেসিক ফিচারের Sky Map ব্যবহার করা ভালো।
আকাশের অন্যতম আকর্ষণীয় মণ্ডল এটি। উত্তর দিকে বিশাল এক প্রশ্নবোধক চিহ্ন দেখা যায় সাতটি তারা মিলিয়ে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি বা শেষ দিকে এসে আকাশে সপ্তর্ষিমণ্ডল দেখা যাবে রাত ৯টা-১০টার দিকে। প্রথমে একে দেখা যাবে উত্তর-পূর্বে। রাত গড়ালে এটি চলে আসবে উত্তর-পশ্চিমে। বেশ বড় অংশজুড়ে দেখা মিলবে এই মণ্ডলের।
আপনি নিশ্চয়ই জীবনে কখনো না কখনো আকাশে খুব কাছাকাছি তিনটি তারা একসঙ্গে এক সারিতে দেখেছেন। এটি আসলে কালপুরুষ শিকারির কোমরের বেল্ট। সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গেই প্রায় মাথার ওপর দেখা যাবে এই মণ্ডল। মধ্যরাতের ভেতর এটি হেলে পড়বে পশ্চিমে। মধ্যরাতের পর আর এই মাসে দেখা যাবে না।
বেল্টের উত্তর দিকে শিকারির শরীরের ওপরের অংশ আর দক্ষিণে শরীরের নিচের অংশ। বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেই হাতে তরবারিযুক্ত এক শিকারির আকৃতি খুঁজে পাবেন আপনি। আর বেল্টের ঠিক নিচেই দেখতে পাবেন আবছা কিছু তারা। এগুলো কালপুরুষ নেবুলার অংশ। বাইনোকুলারে এই নেবুলাকে অসাধারণ দেখা যায়।
কৃত্তিকা হলো একটি তারকাগুচ্ছ। একসঙ্গে খুব কাছাকাছি ছয়–সাতটি তারা খালি চোখে দেখা যায়। একে পাওয়া যাবে কালপুরুষের পশ্চিমে। কালপুরুষের বেল্টের তিনটি তারা থেকে পশ্চিমে সরলরেখায় দৃষ্টি বাড়ালে দেখা মিলবে অনেক উজ্জ্বল একটি তারার। সেটির নাম রোহিণী (Aldabran)। সরলরেখায় আরও সামনের দিকে গেলে দেখা মিলবে কৃত্তিকার। এগুলো বৃষ রাশির অন্তর্ভুক্ত। ফেব্রুয়ারি মাসে রাত ১১টার পর এদের আর দেখা যাবে না।
সব তারাই পূর্ব থেকে পশ্চিমে যায়। একটি তারা শুধু নড়চড় করে না। একটি জায়গায়ই থাকে বছরজুড়ে প্রতিটি রাতেই। একে দেখা যাবে ঠিক উত্তর দিকে মাটি থেকে প্রায় ২৩ ডিগ্রি ওপরে। একে খুঁজে পেতে চাইলে আপনি সপ্তর্ষিমণ্ডলের দ্বিতীয় তারা থেকে প্রথম তারার দিকে একটি সরলরেখা কল্পনা করুন। সেটিকে সোজা সামনে বাড়ালে কিছু দূরেই দেখা মিলবে একটি তারার। সেটিই ধ্রুবতারা।
আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারার নাম লুব্ধক। এর দূরত্ব মাত্র ৮.৬ আলোকবর্ষ। এই মাসে রাতের প্রথমার্ধে একে আপনি খুঁজে পাবেন সহজেই। কালপুরুষ থেকে কিছুটা পূর্বে দেখা মিলবে লুব্ধকের। কালপুরুষের বেল্ট থেকে একদিকে সরলরেখা বাড়ালে পাওয়া যায় রোহিণী। অন্যদিকে সরলরেখা বাড়ালে সহজেই পেয়ে যাবেন আকাশের উজ্জ্বলতম তারা লুব্ধককে। এর আশপাশের তারাগুলো নিয়ে একটি কুকুরের আকৃতি কল্পনা করা যায় বলে একে বলা হয় বৃহৎ কুকুরমণ্ডল (Canis Major)।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।