প্রতিদিনই কাগজ ব্যবহার করি আমরা নানা কাজে। এটাও জানি যে গাছ থেকে কাগজ তৈরি হয়। প্রশ্ন হলো, কীভাবে? আর এর সূচনাই-বা কীভাবে হলো? প্রথমবারের মতো গাছ থেকে কাগজমতন একটা জিনিস বানিয়েছিল মিসরীয়রা। এটাকে আদিকাগজও বলতে পারেন। নামটি তার প্যাপিরাস। প্যাপিরাস গাছের কাণ্ডের আঁশ দিয়ে দিয়ে এই আদিকাগজ বানাত তারা। এই গাছ প্রায় সাড়ে ১৬ ফুট লম্বা হতে পারে।
প্রাচীন মিসরের অধিবাসীরা এসব আঁশের স্তর পানিতে ভিজিয়ে রেখে, সেটাকে চাপ দিয়ে কাগজ মতন তৈরি করে নিত। এটাই ছিল প্যাপিরাস। এই প্যাপিরাসে তারা বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় দলিলাদি, গল্প বা ধর্মীয় বার্তা কিংবা চিঠি—নানা কিছু লিখে রাখত। আজ আমরা পেপার বা কাগজের প্রস্তুতপ্রণালী বলতে যা বুঝি, এর কাছাকাছি ধরনের একটি প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেছিল চীনারা, আজ থেকে প্রায় ২ হাজার বছর আগে।
হেম্প বা শণগাছ সেদ্ধ করে মণ্ড বানাত তারা। এই মণ্ড শুকিয়ে বানানো হতো কাগজ। প্রায় ১ হাজার ৪০০ বছর আগে কাগজ তৈরির এ প্রক্রিয়া ব্যবসায়ী ও ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে ইরাকের বাগদাদে এসে পৌঁছায়। ধীরে ধীরে বাগদাদ সে সময় কাগজ তৈরি এবং কাগজ ও বই বিক্রির জন্য প্রসিদ্ধ হয়ে ওঠে।
এরপর কাগজ ইউরোপে পৌঁছায়। মধ্যযুগের ইউরোপীয়রা সে সময় লিনেন ও তুলা ভিজিয়ে, প্রক্রিয়াজাত করে কাগজ বানাত। প্রথমবারের মতো এ প্রক্রিয়ায় কাগজ তৈরির কারখানা উত্তর আমেরিকায় আসে ইউরোপীয় কলোনিতে, ১৬৯০ দশকে।
এরপর কালের আবর্তে আরও কম খরুচে ও সহজলভ্য পদার্থ হিসাবে শুরু হয় কাঠের ব্যবহার। যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবারের মতো কাঠ থেকে তৈরি কাগজে পত্রিকা প্রকাশিত হয় ১৮৬৩ সালের জানুয়ারিতে—বোস্টন উইকলি জার্নাল।
বর্তমানে কীভাবে গাছ থেকে কাগজ তৈরি হয়? প্রথমে কাঠুরেরা গাছ কেটে নিয়ে আসেন কাগজ তৈরির কারখানায়। এগুলো সফটউড বা নরম কাঠের গাছ হতে পারে। যেমন পাইন, স্প্রুস বা ফার। আবার শক্ত কাঠের গাছ, যেমন ওক বা বার্চগাছও হতে পারে। যন্ত্র এগুলো কেটে টুকরো টুকরো করে ছোট ছোট খণ্ডে, তারপর এগুলো থেকে বানানো হয় মণ্ড। ঠিক কীভাবে এই পাল্প বা মণ্ড বানানো হবে, তা নির্ভর করে কাগজটা কেমন হবে, তার ওপর।
এ ক্ষেত্রে গাছের কোষ প্রাচীর গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ভূমিকা রাখে। এসব কোষ প্রাচীরে থাকে সেলুলোজ নামে একধরনের জৈব যৌগ। রসায়নবিদেরা এটিকে চেনেন লিনিয়ার পলিস্যাকারাইড হিসেবে। এসব অণু খুবই টেকসই এবং দারুণ ফ্লেক্সিবল—মানে ইচ্ছেমতো বাঁকানো যায়। সেলুলোজের আঁশ পানি শুষে নিলেও শক্ত থাকে দীর্ঘসময়। এ সবই কাগজ তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
মণ্ড বানানোর পর সেগুলো পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়। পরে ফিল্টার করে বানানো হয় কাগজ। সেটাকে পরে যথেষ্ট চাপ দিয়ে সমতল করা হয়, শুকিয়ে ফেলা হয় পানি। আগে এরকম প্রতিটি পৃষ্ঠা একটি একটি করে বানানো হতো। যন্ত্রের কল্যাণে এখন কারখানায় এসব কাজ হয় অনেক দ্রুত।
কাগজ কেমন হবে, তার ওপর নির্ভর করে মণ্ডের ধরন যে ভিন্ন হয়, সে কথা তো আগেই বলেছি। মণ্ড কতটা প্রক্রিয়াজাত করা হয়েছে, পরিশুদ্ধ করা হয়েছে বা অন্যান্য পদার্থ কতটা মেশানো হয়েছে, তার ওপর নির্ভর করে কাগজের পুরুত্ব কতটা হবে।
তবে এই যে গাছ কাটা হচ্ছে, বাষ্প ও কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হচ্ছে—এ সবই পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। আবার যেসব বর্জ্য তৈরি হয়, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর সেগুলোও। ফলে কাগজের পুনর্ব্যবহার বাড়াতে চাচ্ছেন বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদেরা। পাশাপাশি ডিজিটাল দুনিয়ায় কাগজের ব্যবহার কমিয়ে আনার চেষ্টাও করা হচ্ছে। পৃথিবীটাকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের। আর সে জন্য গাছ বাঁচানোর গুরুত্ব নিয়ে আলাদা করে বলার বোধ হয় কোনো প্রয়োজন নেই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।