জুমবাংলা ডেস্ক : বিশ্ববন্দিত বিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক নিয়ে পৃথিবীর সমস্ত বিশেষজ্ঞদের অদম্য কৌতূহল । ২০০৫ সালে প্রকাশিত বই ‘পোস্টকার্ডস ফ্রম দ্য ব্রেন মিউজিয়াম“-এ ব্রায়েন বারেল লিখেছেন যে আইনস্টাইন নিজের মরদেহের বিষয়ে খুব স্পষ্ট কিছু নির্দেশ জীবদ্দশাতেই দিয়ে গিয়েছিলেন । বলে গিয়েছিলেন তার দেহ দাহ করে অবশিষ্ট ছাই যেন কোনও গোপন স্থানে ছড়িয়ে দেওয়া হয় ।
১৯৫৫ সালে এপ্রিল মাসের ১৮ তারিখে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিয়াত্তর বছর বয়সে নিউ জার্সির প্রিন্সটন হাসপাতলে আইনস্টাইনের মৃত্যু হয় । ডাক্তাররা তাকে জানিয়েছিলেন একটি অস্ত্রোপচার করলেই তার বাঁচার সম্ভাবনা রয়েছে । কিন্তু তিনি জানান কৃত্রিমভাবে নিজের আয়ু বাড়িয়ে বেঁচে থাকতে চান না । নিজের যা কাজ তা তিনি সম্পন্ন করেছেন । এবারে তিনি চান স্বাভাবিকভাবেই তার মৃত্যু হোক । মৃত্যুর ঠিক আগে নিজের মাতৃভাষা জার্মানে সেবিকা নার্সটিকে কিছু কথা বলেছিলেন তিনি । কিন্তু সেই নার্সটি জার্মান ভাষা না জানায় সে বিশ্ববন্দিত বিজ্ঞানী আইনস্টানের শেষ বাক্যের কিছুমাত্র বুঝতে পারেননি । তাই মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই পৃথিবী থেকে চিরতরে অবলুপ্ত হয়ে যায় আইনস্টাইনের বলা শেষ কথাগুলি ।
আইনস্টাইনের পক্ষ থেকে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া ছিল যেন তার স্বাভাবিক শবদাহ করা হয় । কিন্তু তার ইচ্ছার বিরূদ্ধে গিয়ে প্রিন্সটন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের প্যাথোলজিস্ট ড. থমাস হার্ভিকে আইনস্টাইনের মৃত্যুর কারণ খুঁজে বের করার দায়িত্ব দিয়েছিল । আইনস্টাইনের মৃতদেহ পেয়ে যেন হাতে চাঁদ পাওয়ার মত দশা হয়েছিল থমাসের । এই সুযোগ কোনওভাবে হাতছাড়া করতে চাননি থমাস ।
কারও অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন বোধ না করেই আইনস্টাইনের মৃত্যুর প্রায় সাত থেকে আট ঘন্টা পর তার মাথা থেকে ১২৩০ গ্রামের মস্তিষ্কটি বের করে নেন তিনি । কোনও বিশেষজ্ঞ নয়‚ কেবলমাত্র একজন প্যাথলজিস্ট হওয়া সত্ত্বেও এ কাজ করেন থমাস । আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক চুরি করার দায়ে অভিযুক্ত থমাস । এবং শুধুমাত্র আইনস্টানের মস্তিষ্ক বের করেই ক্ষান্ত হননি । সঙ্গে বের করে নিয়েছিলেন তার দুটি চোখও যা প্রিজারভেশন জারে ভরে পরবর্তীকালে ড. হেনরি আব্রামসের কাছে হস্তান্তরিত করেছিলেন । আজও পাওয়া যায়নি সেই চোখজোড়া ।
চুরি করলেও থমাস আইনস্টাইনের পরিবারের সদস্যদের একথা বোঝাতে সফল হন যে চুরি নয়‚ বৈজ্ঞানিক পরীক্ষানিরীক্ষা করার জন্যই আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক নিয়েছেন তিনি । আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক নিজের আওতায় এনে থমাস তার অনেকরকম ভাবে ছবি তোলেন । এবং তারপরে ২৪০ টি টুকরো করে কেটে ফেলেন সেটি । আরও নিখুঁতভাবে সেই টুকরোগুলিকে কেটে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠাতে থাকেন । অর্থাৎ থমাসের রুজির এক সহজ পন্থায় পরিণত হয় আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের অংশ বিশেষজ্ঞদের কাছে বিক্রি করা ।
পৃথিবীব্যাপী বিশেষজ্ঞদের কাছে আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের যেসব টুকরোগুলি থমাস পাঠিয়েছিলেন সেগুলি থেকেই আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের কিছু কিছু বিশেষত্ব উদ্ঘাটিত হয় ।
একজন সাধারণ মানুষের আইকিউ যেখানে থাকে ৯০ থেকে ১১০ সেখানে আইনস্টাইনের আই.কিউ ছিল ১৬০ থেকে ১৯০ । কিন্তু মস্তিষ্কের আইকিউ বেশি হলে কী হবে‚ আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের আকার কিন্তু ছিল সাধারণ মানুষের মস্তিষ্কের আকারের তুলনায় ছোট । সাধারণ মানুষের মস্তিষ্কের ওজন যেখানে হয় ১৪০০ গ্রাম সেখানে আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের ওজন ১২৩০ গ্রাম ।
মস্তিষ্কের যে অংশটি মানুষের ভাষা ও গাণিতিক দক্ষতা নিয়ন্ত্রণ করে সাধারণ মানুষের তুলনায় আইনস্টাইনের মস্তিষ্কে সেটি প্রায় পনেরো শতাংশ বেশি বড় । মানুষের মস্তিষ্কে একটি বড় খাঁজের মত অংশ থাকে যার নাম প্যারেটাল ওপারকুলাম । আইনস্টাইনের মস্তিষ্কে সেটি অনুপস্থিত ছিল ‚ যার ফলে তার মস্তিষ্কের লোয়ার প্যারেটাল লোবের আকার ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় কুড়ি শতাংশ বড় । তার সেরিব্রাল কর্টেক্স অন্যান্য অংশগুলির তুলনায় অনেকটা পাতলা । এবং সবথেকে বিশেষ যে বৈশিষ্ট্যটি তার মস্তিষ্কে দেখা গিয়েছে তা হল কম বয়স প্রদর্শন । অর্থাৎ তার মস্তিষ্কের আদতে যা বয়স‚ তার অবস্থা দেখে মনে হয় আসল বয়সের থেকে কম । অন্য মানুষদের তুলনায় আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের নিউরন ও গ্লিয়ান কোষের অনুপাতও ছিল অনেক বেশি । হয়ত এসব কারণের জন্যই এই মস্তিষ্ক থেকেই আবিষ্কৃত হয়েছিল বিজ্ঞানের আমূল পরিবর্তন ঘটানো তাবড় তাবড় সূত্রগুলি ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।