জুমবাংলা ডেস্ক: বড়দিন বা ক্রিসমাস একটি বাৎসরিক খ্রিস্টীয় উৎসব। ২৫ ডিসেম্বর তারিখে যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন উপলক্ষে এই উৎসব পালিত হয়।
এই দিনটিই যিশুর প্রকৃত জন্মদিন কি না, তা জানা যায় না। আদিযুগীয় খ্রিস্টানদের বিশ্বাস অনুসারে এই তারিখের ঠিক ৯ মাস পূর্বে মেরির গর্ভে প্রবেশ করেন যিশু। সম্ভবত, এই হিসাব অনুসারেই ২৫ ডিসেম্বর তারিখটিকে যিশুর জন্মতারিখ ধরা হয়।
অন্যদিকে, একটি ঐতিহাসিক রোমান উৎসব অথবা উত্তর গোলার্ধের দক্ষিণ অয়নান্ত দিবসের অনুষঙ্গেই ২৫ ডিসেম্বর তারিখে যিশুর জন্মজয়ন্তী পালনের প্রথাটির সূত্রপাত হয়। বড়দিন বড়দিনের ছুটির কেন্দ্রীয় দিন এবং খ্রিস্টধর্মে বারো দিনব্যাপী খ্রিস্টমাসটাইড অনুষ্ঠানের সূচনাদিবস।
ষোড়শ শতাব্দীতে পর্তুগিজ ব্যবসায়ী ও ধর্মপ্রচারকদের মাধ্যমে খ্রিস্টধর্ম বাংলাদেশে আসে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার ০.০৩ শতাংশ খ্রিস্টান। তবে বাঙালিদের কাছে এই দিনটির পরিচয় বড়দিন হিসেবে।
এর কারণ কী? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেছেন, মর্যাদার দিক থেকে এটি একটি বড়দিন।
তিনি বলেন, যিশু যেহেতু বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য ধর্ম ও দর্শন দিয়ে গেছেন, বিশ্বব্যাপী বিশাল অংশের মানুষ তার দেয়া ধর্ম ও দর্শনের অনুসারী। যিনি এতো বড় ধর্ম ও দর্শন দিলেন ২৫ ডিসেম্বর তার জন্মদিন। সে কারণেই এটিকে বড়দিন হিসেবে বিবেচনা করে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ।
অধ্যাপক ঘোষ বলেন, ১৮ ও ১৯ শতকে ইউরোপীয়রা এসে এ অঞ্চলে খ্রিস্টধর্ম প্রচার করে। যারা ধর্মটি গ্রহণ করেছেন তাদের কাছে এটি আরও মহিমান্বিত বিষয়।
তিনি আরও বলেন, বাঙালি যারা খ্রিস্টান তাদের অধিকাংশই এই ধর্মে রূপান্তরিত হয়েছেন। তারা ভাবেন যিশু এমন একজন যিনি তাকে ধর্ম দিয়েছেন। তাই তার জন্মদিনটাই তারা সব আবেগ দিয়ে পালন করেন। এ কারণেই দিনটি তাদের কাছে বড়দিন হিসেবে বিবেচিত।
তার মতে বাঙালি সমাজে ১৮ শতকের শেষের দিকে এই বড়দিন পালনের চর্চা শুরু হয়েছিল। একই সময়ে এই অঞ্চলের মানুষ ইউরোপীয়দের অনুকরণে জন্মদিন পালনও শুরু করে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বড়দিনের প্রধান আকর্ষণের অন্যতম হলো লাল সাদা পোশাক আর সাদা চুল দাড়ির সান্টা ক্লজ। এই রাতেই বল্গা হরিণে টানা স্লেজে চেপে পুরো দুনিয়া চষে বেড়ান। ঝুলিতে থাকে উপহার। সব শিশুর হাতে সেই উপহার দিয়ে যান সান্টা ক্লজ।
বড়দিনের অন্যতম আকর্ষণ সান্টা ক্লজ আসলে কী, তা জানেন? কীভাবে এলেন এই সাদা দাড়ি লাল টুপির মানুষটি। কেনই বা শিশুদের উপহার দিয়ে বেড়ান।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, যিশু খ্রিস্টের মৃত্যুর ২৮০ বছর পরে রোমের মাইরাতে জন্ম হয় সেইন্ট নিকোলাসের। এশিয়ার মাইনর বর্তমান তুরস্কের পাতারা নামক অঞ্চলে তার জন্ম। ছোটবেলায় বাবা-মাকে হারান তিনি। তার জীবনের একমাত্র ভরসা ও বিশ্বাস ছিল যিশু খ্রিস্টের ওপর। নিজে ছোটবেলায় অনাথ হয়ে যান। তাই গরিব শিশুদের অত্যন্ত ভালোবাসতেন।
তিনি খুবই মহৎ ও দানশীল ব্যক্তি ছিলেন। দান-দক্ষিণায়ও সুনাম ছিল তার। মহানুভবতার জন্য তিনি সবার প্রিয় ছিলেন। তিনি মানবরক্ষক হিসেবে বেশ পরিচিত ছিলেন। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, নিকোলাস ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ও মধ্যরাতে ছেলেমেয়েদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে উপহার দিতেন। গরিব শিশুদের উপহার দিয়ে বেড়াতেন। আকাশে অর্ধেকটা চাঁদ থাকলে নিজেকে আড়াল করে উপহার দিতেন সেইন্ট নিকোলাস। এতেই নিজের আনন্দ খুঁজে পেতেন। সেই থেকে সান্টা নামেই পরিচিতি পেতে থাকেন নিকোলাস।
কিন্তু নিকোলাস তো লাল পোশাক পরে উপহার দিয়ে বেড়াতেন না। তবে সান্টা ক্লজের পোশাক লাল কেন? এর পেছনেও কারণ রয়েছে।
ইতিহাস বলে, নিকোলাসকে দেখা যেত বাদামী এবং আরও অন্য রঙের পোশাকে। এর মধ্যে রয়েছে বেগুনি, সাদা, কালোসহ আরও বেশ কিছু রঙের পোশাক।
তবে বর্তমান সময়ে যে সান্টাকে দেখা যায় তার চেহারা আর গড়ন তৈরি করেন আমেরিকান কার্টুনিস্ট থমাস নাস্ট। ১৮৮১ সালে তিনিই হারপার উইলকি নামে এক পত্রিকায় লাল রঙের পোশাকে সান্টাকে আঁকেন। সেখানে সান্তা হরিণটানা গাড়িতে চড়ে কাঁধে উপহারভর্তি ঝোলা নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাচ্চাদের উপহার দেওয়ার চিত্র ফুটে ওঠে। এরপরই সান্টার পোশাক হয়ে যায় লাল-সাদা। আর ক্রিসমাসের উদযাপনেও এই রং প্রাধান্য পেতে থাকে।
থমাস নাস্ট সান্টাকে সবুজ পোশাকেও আঁকেন। তবে লাল-সাদা পোশাকেই সান্টা বেশি জনপ্রিয়তা পায়। সান্টার চেহারাকেও বড় করে আঁকেন থমাস। কারণ নিকোলাসের চেহারা খুব অল্পই দেখা যেত। বাড়ি বাড়ি ঘুরে চিমনি দিয়ে শিশুদের উপহার পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিকোলাসের চেহারা অনেকটাই আড়ালে থাকতো। তাই পরে থমাসের আকা সেই সান্টার আদলেই গড়ে উঠে বর্তমান সময়ের শিশুদের প্রিয় সান্টা ক্লজ।
বড়দিন বাংলাদেশের জাতীয় ছুটির দিন। বাংলাদেশের খ্রিস্টানরা ক্রিসমাসে একে অপরকে উপহার দেয় এবং দেখা করে। বড়দিন বাংলাদেশের জাতীয় ছুটির দিন। এ দিনে বাচ্চারা বড়দের কাছ থেকে টাকা বা খেলনা উপহার পায়। লোকেরা একে অপরকে ‘শুভ বড় দিন’ (মহান দিবসের শুভেচ্ছা) বলে শুভেচ্ছা জানায়।
গ্রামাঞ্চলে সাজানোর জন্য কলাগাছ এবং পাতা ব্যবহার করা হয়, তবে শহরে ক্রিসমাস ট্রি, ব্যানার এবং বেলুন ব্যবহার করা হয়। এ দিনে হোটেলগুলোতে বিশেষ অনুষ্ঠানগুলো অনুষ্ঠিত হয় এবং বড়দিনের বিশেষ অনুষ্ঠানগুলো টিভিতে দেখানো হয়।
ক্রিসমাসে ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে রয়েছে ক্রিসমাস কেক, পিঠা এবং কুকিজ। খ্রিস্টানরা গির্জা পরিদর্শন করে এবং বড়দিনের কেক তৈরি করে। গির্জা আলো এবং ক্রিসমাস ট্রি দিয়ে সাজানো হয়। গির্জার গায়করা বাংলা ক্রিসমাস গান পরিবেশন করেন। বড়দিনের সকালে গির্জায় বড়দিনের ভোজকে প্রীতিভোজ বলা হয় এবং কীর্তন বলা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।