জুমবাংলা ডেস্ক : করোনা সংক্রমণ কমাতে দেশব্যাপী কঠোর লকডাউনের অষ্টম দিন বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস হওয়ায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে গ্রাহকদের চাপ ছিল চোখে পড়ার মতো। ছিল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যানজট। গত সাত দিনের তুলনায় কঠোর লকডাউনের অষ্টম দিনে ঢিলেঢালাভাবেই পালিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (০৮ জুলাই) রাজধানীতে লকডাউন বাস্তবায়নে সড়কের মোড়ে মোড়ে পুলিশ, বিজিবি ও র্যা ব সদস্যরা টহল দিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল থাকলেও তা ছিল অনেকটা ঢিলেঢালা। তাই ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বিনা প্রয়োজনে মানুষ ঘর ছেড়ে বাইরে বের হয়েছেন। তবে বিনা কারণে বের হয়ে অনেকে আবার পুলিশের হাতে আটকও হয়েছেন। দিয়েছেন জরিমানা।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় করোনা সংক্রমণ কমানোর চলমান কঠোর লকডাউন অমান্য করায় ১ হাজার ৭৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। ৩১৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছে ১৬ লাখ ৭৯০ টাকা। এছাড়া ৯৩৭টি গাড়ির বিরুদ্ধে ট্রাফিক বিভাগের মামলায় জরিমানা হয়েছে ২১ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ টাকা। রাজধানীতে ডিএমপি এবং ট্রাফিক বিভাগ আজ রেকর্ড ৩৭ লাখ ৫৪ হাজার ২৯০ টাকা জরিমানা করেছে।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) ইফতেখায়রুল ইসলাম বলেন, কঠোর লকডাউনের অষ্টম দিনে ডিএমপির ৮টি বিভাগে সরকারি নিয়ম অমান্য করে বাইরে বের হওয়ায় ১ হাজার ৭৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর সড়কে যানবাহন নিয়ে বের হওয়ায় ডিএমপি পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ট্রাফিক বিভাগ ৯৩৭টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা এবং জরিমানা করেছে ২১ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ টাকা।
তিনি আরও বলেন, রাজধানীতে অকারণে ও নানা অজুহাতে ঘর থেকে বের হওয়ায় এবং লকডাউনের মধ্যে প্রতিষ্ঠান খোলা রাখায় ৩১৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ১৬ লাখ ৭৯০ টাকা জরিমানা করা হয়। লকডাউনের আট দিনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীতে মোট গ্রেপ্তার করা হয়েছে পাঁচ হাজার ২৬৪ জন।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কে পুলিশের টহল গাড়ি, পণ্যবাহী ট্রাক, রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহৃত সীমিত সংখ্যক যানবাহন ছাড়া তেমন যানবাহন চোখে পড়েনি। তবে রাজপথ ছিল রিক্সার দখলে। যানবাহন নিয়ন্ত্রণে বাঁশ দিয়ে অনেক সড়কের প্রবেশ পথ আটকে দিয়েছে পুলিশ।
শিল্পকারখানা, ব্যাংক, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের পরিচয়পত্র নিয়ে বের হতে দেখা গেছে। তবে যারা রিকশায় চলাচল করেছেন তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। গার্মেন্টস কারখানা খোলা রাখা এবং গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখায় ভোগান্তিতে পড়েছিলেন শ্রমিকরা। মাইলের পর মাইল হেঁটে যান শ্রমিকরা।
তাছাড়া যারা অফিস কিংবা জরুরি প্রয়োজনে বের হয়েছেন তাদের পড়তে হয়েছে দুর্ভোগে। গণপরিবহন না থাকায় অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে রিক্সা কিংবা ভ্যানে গাদাগাদি করে যেতে দেখা গেছে অনেককে। তাছাড়া রাজধানীর বেশিরভাগ সড়কেই ছিল তীব্র যানজট। প্রাইভেট গাড়ির সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো।
মূল সড়ক ও অলিগলিতে জনসমাগম: রাজধানীর মূল সড়কে যেমন লোকজনের আনাগোনা দেখা গেছে তেমনি অলিগলিতে কিছু চায়ের ও মুদি দোকান খোলা থাকায় মানুষ ঘর ছেড়ে বের হয়েছে। তবে অনেকের মুখেই মাস্ক ছিলনা। খিলগাঁও, বাসাবো, শনিরআখড়া, মাতুয়াইল, পশ্চিম রামপুরা হাজীপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার অলিগলিতে মুদি দোকানগুলো সার্টার অর্ধেক খোলা রেখে চলতে দেখা গেছে। যেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি টের পান সঙ্গে সঙ্গে শাটার নামিয়ে কিছু সময়ের জন্য উধাও হয়ে যান মালিকরা।
পরিবহণ বন্ধে চরম ভোগান্তি: জরুরি পরিসেবা খোলা রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খোলা থাকায় গণপরিবহনের অভাবে বাধ্য হয়েই মানুষকে পায়ে হেঁটে কিংবা রিকশায় কর্মস্থলে যেতে হয়েছে। বিশেষ করে শিল্প-কারখানায় কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকদের কর্মস্থলে যেতে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
কাঁচাবাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা: লকডাউনের প্রথম দিকে কাঁচাবাজারগুলোতে ক্রেতা খুব একটা দেখা না গেলেও দিন যত যাচ্ছে বাজারে জনসমাগম ততই বাড়ছে। তবে মুখে মাস্ক পড়ে দোকানদারদের পণ্য বিক্রি করতে দেখা গেছে। অনেকে স্যানেটাইজারও ব্যবহার করছেন।
এদিকে টিসিবির ন্যায্যমূল্যের ট্রাকে পণ্য কিনতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় চোখে পড়েছে। টিসিবির পণ্য কিনতে এসে মানুষ মানছেন না সামাজিক দূরত্ব। গাদাগাদি করে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনতে দেখা গেছে। তীব্র গাদাগাদির কারণে বাড়ছে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিও।
চট্টগ্রাম, সিলেটের প্রবেশদ্বার যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, মাতুয়াইল মেডিক্যাল, সাইনবোর্ড, চিটাগাংরোডে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এর মধ্যে সাইবোর্ড চেকপোস্টে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ, র্যাব, বিজিবিকে সমন্বিতভাবে দায়িত্বপালন করতে দেখা গেছে।
হোটেল-রেস্তোরাঁ: পুরান ঢাকার বাবুবাজার, নয়াবাজার, বংশাল, গুলিস্তান, পল্টন, বিজয়নগর, শান্তিনগর, মালিবাগসহ বিভিন্ন এলাকার বেশিরভাগ হোটেল ও রেস্তোরাঁ বন্ধ ছিল। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেসব হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলো খোলা ছিল সেগুলোতেও বেচা বিক্রি নেই। কর্মচারীরা অলস সময় পার করছেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের দেয়া কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে যৌক্তিক কারণ ছাড়া যারা বাইরে বের হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছে।
কঠোর লকডাউনের অষ্টম দিনে বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ১৯৯ জন মারা গেছেন। এটি দেশে করোনায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু। করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা ১৫ হাজার ৭৯২ জন হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হিসেবে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ১১ হাজার ৬৫১ জন। দেশে করোনায় এখন পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছেন ৯ লাখ ৮৯ হাজার ২১৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন পাঁচ হাজার ৮৪৪ জন। তাদের নিয়ে দেশে করোনা থেকে সুস্থ হলেন আট লাখ ৫৬ হাজার ৩৪৬ জন। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।