জুমবাংলা ডেস্ক : আমাদের দেশের অর্থনৈতিক চাকার অন্যতম রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়। এই রেমিট্যান্স প্রবাসীরা দেশে পাঠান। রেমিট্যান্সের পাশাপাশি গার্মেন্ট শিল্পও অর্থনৈতিক চাকার অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হলেও, এত বছরেও দেশের তরুণদের বড় একটি অংশ বিদেশে শ্রমিক হিসেবে কেন যাবেন- তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
সুশাসন এই রাষ্ট্রে কখনো আসেনি। লুটপাটতন্ত্র বলবৎ ছিল। সেলাইয়ের কাজ করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা- এটিও এত পুরনো স্বাধীন হওয়া দেশের জন্য একটি লজ্জাজনক ব্যাপার। রাষ্ট্র নাগরিকদের জন্য যথেষ্ট কর্মসংস্থান দিতে পারেনি। রাষ্ট্র নিজে চলার জন্য অর্থনৈতিক ভালো উৎসও তৈরি করতে পারেনি। নাগরিকদের উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগও দেয় না। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ঘুষের কারখানা। ব্যাংকগুলোতে লুটপাট। এ জন্য তরুণদের বড় একটি অংশ বিদেশে যাচ্ছেন।
জাতীয় অর্থনীতিতে প্রবাসীরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় তাদের এয়ারপোর্টে ভিআইপি মর্যাদা দেয়ার কথা শুনছি। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রবাসী কল্যাণবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বাংলাদেশের অনেকের কাছে সুপরিচিত। একজন উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি। একই সাথে একাডেমিশিয়ান। কয়েক বছর আগে তার লেখা এক কলাম পড়েছিলাম প্রবাসীদের নিয়ে। সেই কলামটি পড়ে মনে হয়েছিল, আসিফ নজরুল প্রবাসীদের ভালোবাসেন। এখন তিনি আইনের পাশাপাশি প্রবাসী কল্যাণবিষয়ক উপদেষ্টা। আশা করি, তিনি কল্যাণে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নেবেন।
বেশির ভাগ প্রবাসী পরিবারে অশান্তি চলছে। কোনো কোনো পরিবারে একজন বিদেশে থাকেন। তার আয়-রোজগারে সংসারে অনেকের খরচ চলে। একজনের আয়ের অর্থ দিয়ে জমি কিনেন বাবার নামে। পরে সেই জমির মালিক হন পরিবারের সবাই। এ রকম জমি কেনা নিয়ে প্রবাসী বহু পরিবারে অশান্তি চলছে। কোনো কোনো পরিবারে প্রবাসীর স্ত্রী তাদের পরিবারে থাকেন উপেক্ষিত এবং অবহেলিত।
অনেক প্রবাসী বিয়ে করে নিজের বৃহৎ পরিবারে স্ত্রীকে রেখে যান। এক বছর দুই বা তিন বছর পরপর দেশে আসেন। এ সময়ে বিপুলসংখ্যক প্রবাসীর স্ত্রীকে চরম নির্যাতন সইতে হয় শ্বশুরবাড়ির লোকজনের হাতে। এ রকম একটি ঘটনা ঘটেছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে। একজন যুবক থাকেন কুয়েতে। রূপক নাম সামাদ। সামাদ বিয়ের বহু আগে থেকে কুয়েতে থাকেন। সেখানে গাড়ি চালান। বিয়ে করে স্ত্রীকে রেখে গেছেন বৃহৎ পরিবারে। সেই পরিবারে মা-বাবা একাধিক ভাইবোন, ভাবী আছেন।
এই প্রবাসীর স্ত্রী অত্যন্ত নম্র-ভদ্র এবং পর্দানশীন। এই প্রবাসী যুবক লেখাপড়া তেমন জানেন না। স্ত্রী অনার্স পড়েন। তিনি যখন বিয়ে করেন তখন স্ত্রী মাত্র এসএসসি পাস করেছেন। বিয়ের আগে কথা হয়েছিল যে, বিয়ের পর স্ত্রী লেখাপড়া চালিয়ে যাবেন। স্ত্রীর বয়সের তুলনায় প্রবাসী স্বামীর বয়স অনেক বেশি। তারা আগে থেকে একে অপরের দূর সম্পর্কের আত্মীয়। তার স্ত্রী তার মা-বাবা এবং অন্যদের সাথে থাকেন। এভাবে বছরের পর বছর চলে যায়। তাদের ছেলে সন্তানও হয়েছে। সেই সন্তান তার বাবাকে চেনে না। এক বছর দুই বছর পর দেশে এসে স্ত্রী সন্তানকে সময় দেন না। বাইরে আড্ডা দেন। ভাইদের সময় দেন। ভাইয়েরা তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে জমিও কিনেছেন।
ভাইদের নাতিও হয়েছে; এমন অবস্থাও প্রবাসী ভাইয়ের টাকা নিয়ে চলেন। সামাদ কুয়েতে থাকাকালীন তার স্ত্রীর ওপর অমানবিক নির্যাতন হয়েছে অনেকবার। শ্বশুর-শাশুড়ি, ভাসুর, দেবর-ননদ সবাই নির্যাতন চালান। এমনকি সামাদ বাড়িতে এলে তার সামনেও স্ত্রীকে তার পরিবারের লোকজন গালিগালাজ করেন। তাদের সাথে তালমিলিয়ে সামাদও স্ত্রীকে গালি দিতে দ্বিধা করেন না। ভদ্র পর্দানশীন এই নারী অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে কিছু দিন আগে ডিভোর্স দিয়েছেন স্বামীকে। ডিভোর্সের পর সন্তান মায়ের কাছে থাকে। বাবা-মায়ের বিচ্ছেদে সারা জীবনের জন্য চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলো ওই দম্পতির শিশুসন্তানটি, যা অপূরণীয়।
দেশের বেশির ভাগ প্রবাসী পরিবারে নানান সমস্যা বিদ্যমান। তবে উল্টো ঘটনাও আছে। প্রবাসীর অনেক স্ত্রী হয়ে ওঠেন অত্যাচারী-প্রবাসীর মা-বাবার প্রতি। পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। প্রবাসী স্বামীর সম্পদ লুটে নিয়ে অন্য পুরুষের হাত ধরে ঘর ছাড়েন। প্রবাসীদের সন্তানদের অনেকে অতি বেপরোয়া হয়। এ জন্য রাষ্ট্রের উচিত নিজ দেশে যথেষ্ট কর্মসংস্থান তৈরি করা। উদ্যোক্তা হতে সহযোগিতা করা। একই সাথে প্রবাসে বসবাস করা শ্রমিকদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো প্রয়োজন। যাতে বছরে কয়েকবার ছুটি নিয়ে দেশে আসা যায়। বিয়ে করে স্ত্রীকে দেশে রেখে যাওয়ার কালচার বন্ধ করা উচিৎ।
আমাদের সমাজে অনেকে দায়িত্বশীল নন। অর্থ বৈধপথে আয় করলেও সঠিকপথে ব্যয় করার সক্ষমতা খুব কম মানুষের রয়েছে। কিন্তু পরিবারের কার কী হক বোঝেন না। ভারসাম্য বজায়ে রাখতে পারেন না। মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তান ও ভাইবোনের হক সঠিকভাবে বুঝতে পারলে তেমন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। মহান আল্লাহ আসমানি কিতাবে এসব হকের ব্যাপারে সুস্পষ্ট জানিয়ে রেখেছেন।
এই আধুনিক যুগেও বহু নারী চরম নির্যাতনের শিকার। অথচ দেশে নারী নেতৃত্বের জয়জয়কার পরিস্থিতি। অন্তর্বর্তী সরকারেও কয়েকজন নারী উপদেষ্টা রয়েছেন।
মূল কথা হলো- আসমানি কিতাব কুরআনের বিধান ছাড়া নারী অধিকার এবং অন্যান্য কোনো অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব নয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।