আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পার্লামেন্টে পাশ হওয়ার পরে সারা দেশেই বিক্ষোভ শুরু হলেও সেই সব প্রতিবাদ মিছিল সবথেকে বেশি সহিংস হয়ে উঠেছিল উত্তরপ্রদেশের নানা জেলায়। খবর বিবিসি বাংলার।
সে সময় উত্তরপ্রদেশের কট্টর হিন্দু মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ মন্তব্য করেছিলেন তিনি ঐ সহিংসতার ‘বদলা’ নেবেন।
তিনি বলেছিলেন, “সহিংসতায় জড়িত প্রত্যেকের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে। আর তা দিয়েই সরকারী সম্পত্তির যা কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ করা হবে। উপদ্রব করেছিল যারা, তারা চিহ্নিত ব্যক্তি – ভিডিও আর সিসিটিভি ফুটেজে তাদের চেহারা দেখা গেছে। প্রত্যেকের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে এর বদলা নেওয়া হবে।”
মুখ্যমন্ত্রীর ওই ঘোষণার পরেই সরকারীভাবে নষ্ট হওয়া সরকারী সম্পত্তির হিসাব কষা যেমন শুরু হয়, অন্যদিকে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের খুঁজে বার করা হতে থাকে।
ইতিমধ্যেই প্রায় চারশো ব্যক্তিকে নোটিস পাঠানো হয়েছে সরকারী সম্পত্তি ধ্বংস করার জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে। তাদের সিংহভাগই মুসলিম।
রামপুর জেলার পুলিশ বাড়ি গিয়ে ক্ষতিপূরণের নোটিস দিচ্ছে – এরকমই একটি ছবি সম্প্রতি ধরা পড়েছে বিবিসি-র ক্যামেরায়।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে এক পুলিশ-কর্মী একটি পরিবারের লোকজনকে বলছে, নোটিসটি তারা যেন সই করে গ্রহণ করে এবং পরের দিন থানায় গিয়ে দেখা করে । কিন্তু পরিবারের একাধিক নারী সদস্য নোটিসটি নিতে চাইছেন না।
এক নারী সদস্য বলছিলেন, “পুলিশ এসে ভাঙচুরের জন্য ক্ষতিপূরণের নোটিস দিচ্ছে। না দিলে স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার ভয়ও দেখাচ্ছে!”
পাশ থেকে আরেক প্রতিবেশী বলছিলেন, ওই নারী দুধ বিক্রি করে সংসার চালান। তিনি কীভাবে দাঙ্গায় যুক্ত থাকতে পারেন!
রামপুরের বিক্ষোভের ঘটনায় মোট ২৮ জনকে নোটিস পাঠানো হয়েছে সরকারী সম্পত্তি ভাঙচুরের অভিযোগে।
জেলা শাসক অঞ্জন কুমার সিং বিবিসিকে বলছিলেন, “২১ ডিসেম্বরের বিক্ষোভে কারা জড়িত ছিলেন, তাদের একটা নামের তালিকা পুলিশ দিয়েছে। আবার কত টাকার সরকারী সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে, সেই হিসাবও করা হয়েছে।”
“এখন বাড়ি বাড়ি নোটিস পাঠানো হচ্ছে ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য। তারা জবাব না দিলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
বাবরি মসজিদ মামলার সূত্রে পরিচিত নাম সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জাফরিয়াব জিলানির। তিনি বলছিলেন যে তার কয়েকজন মক্কেলের কাছেও এরকম নোটিস গেছে।
মি. জিলানির কথায়, “বহু মানুষকে এরকম নোটিস পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এলাহাবাদ হাইকোর্টের যে রায়ের ওপরে ভিত্তি করে এই নোটিসগুলি পাঠানো হচ্ছে সেই রায় অনুযায়ী এরকম নোটিস পাঠানো যায় কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তবে নোটিস যখন দিয়েছে, জবাব দিতেই হবে।”
“তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল কিছু অমুসলিমকে নোটিস পাঠানো হলেও সিংহভাগ নোটিসই দেওয়া হচ্ছে মুসলমানদের। মুসলমানদেরই নিশানা করা হচ্ছে,” বলছেন জাফরিয়াব জিলানি।
একদিকে যখন ক্ষতিপূরণ চেয়ে নোটিস পাঠাচ্ছে সরকার, তখন এরকম ছবিও সংবাদমাধ্যমে এসেছে যেখানে পুলিশকর্মীদেরই ভাঙচুর করতে দেখা যাচ্ছে।
বিবিসি এরকম অন্তত একটি বাড়িতে গিয়েছিল যার বাসিন্দা হুমায়েরা নামের এক নারী বলছিলেন যে রাতের অন্ধকারে পুলিশ বাড়িতে ঢুকে কীভাবে গয়না আর নগদ অর্থ লুটে নিয়ে গেছে।
হুমায়েরা কিছু খালি গয়নার বাক্স দেখিয়ে বলেন গয়নাগুলো পুলিশ নিয়ে গেছে। “আরেকটা বাক্সে নগদ অর্থ রাখা ছিল, সেটাও খালি। পুলিশ এসে প্রতিটা ঘরে ভাঙচুর চালায় – এমনকি রান্নাঘর বা বাথরুমও বাদ যায় নি। তারপরে বলে যে বাড়িটা পুলিশ দখল করছে। আমাদেরকে বার করে দেওয়া হয়।”
উত্তরপ্রদেশ থেকে বিবিসির সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, একদিকে যেমন সম্পত্তি ভাঙচুরের অভিযোগে নোটিস পাঠানো হচ্ছে, তেমনই ভবিষ্যতে কোনোরকম সহিংস বিক্ষোভে জড়িত থাকবেন না, এরকম মুচলেকাও আদায় করা হচ্ছে।
আর সেই সব মুচলেকার জন্য নোটিস গেছে এমন এক ব্যক্তির কাছেও – যিনি ছ’বছর আগেই মারা গেছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।