মহাজাগতিক বিস্ময়: আসছে রক্তিম চন্দ্রগ্রহণ
২০২৫ সালের মার্চ মাসে একটি অত্যাশ্চর্য মহাজাগতিক ঘটনা ঘটতে চলেছে, যা পৃথিবীর বহু অঞ্চলে দেখা যাবে। এটি ২০২৫ সালের পর প্রথম পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ, যেখানে চাঁদ সম্পূর্ণরূপে পৃথিবীর ছায়ায় ঢেকে যাবে এবং লালচে বা রক্তিম রঙ ধারণ করবে। এই দৃশ্যটি বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে সূর্যালোক প্রতিসরিত হয়ে চাঁদের উপর পড়ার কারণে ঘটে, যা এটিকে একটি লালচে আভা দেয়।
বাংলাদেশে রক্তিম চন্দ্রগ্রহণের সময়সূচি
বাংলাদেশ থেকে দুঃখজনকভাবে এই পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে না। তবে মহাজাগতিক এই দৃশ্যের সময়সূচি নিচে দেওয়া হলো:
- গ্রহণ শুরু: ১৪ মার্চ, ২০২৫ সকাল ৯:৫৯ মিনিট (বাংলাদেশ সময়)
- পূর্ণগ্রাস শুরু: সকাল ১১:২০ মিনিট (বাংলাদেশ সময়)
- পূর্ণগ্রাস সমাপ্তি: দুপুর ১২:৫৯ মিনিট (বাংলাদেশ সময়)
- গ্রহণ শেষ: বিকাল ৩:৫৯ মিনিট (বাংলাদেশ সময়)
রক্তিম চন্দ্রগ্রহণ কেন ঘটে?
চন্দ্রগ্রহণ তখন ঘটে যখন সূর্য, পৃথিবী এবং চাঁদ একই সরলরেখায় অবস্থান করে এবং পৃথিবী চাঁদের ওপর ছায়া ফেলে। সাধারণত, এই ছায়ার কারণে চাঁদ সম্পূর্ণ অন্ধকার হয়ে যেতে পারে। কিন্তু, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল সূর্যের আলোকে প্রতিসরিত করে এবং শুধুমাত্র লাল ও কমলা রঙের তরঙ্গদৈর্ঘ্য চাঁদের উপর পৌঁছায়। ফলে চাঁদ রক্তিম আভা লাভ করে, যা ‘ব্লাড মুন’ বা ‘রক্তিম চন্দ্রগ্রহণ’ নামে পরিচিত।
কোন কোন দেশ থেকে দেখা যাবে?
এই চন্দ্রগ্রহণ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যাবে, তবে কিছু জায়গায় এটি আংশিক দৃশ্যমান হবে।
✅ সম্পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে:
- উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা: যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকো, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, চিলি।
✅ আংশিক চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে:
- ইউরোপ: যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন।
- আফ্রিকা: মরক্কো, মিশর, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া।
- এশিয়া: জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, পূর্ব চীন।
- অস্ট্রেলিয়া: গ্রহণের শেষ পর্যায় দৃশ্যমান হবে।
❌ বাংলাদেশ, ভারত এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে এটি দেখা যাবে না।
রক্তিম চন্দ্রগ্রহণ দেখার উপায়
অন্যান্য মহাজাগতিক ঘটনার তুলনায় চন্দ্রগ্রহণ দেখার জন্য বিশেষ কোনো সরঞ্জামের প্রয়োজন নেই।
- কেবল আকাশের দিকে তাকালেই হবে।
- কোনো টেলিস্কোপ বা সানগ্লাসের প্রয়োজন নেই।
- গ্রহণ চলাকালীন সময়ে আকাশ মেঘমুক্ত থাকলে এটি আরও স্পষ্টভাবে দেখা যাবে।
- খোলা জায়গায় অন্ধকার পরিবেশে বসে থাকলে দৃশ্যমানতা আরও ভালো হবে।
রক্তিম চন্দ্রগ্রহণের বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব
বিজ্ঞানীরা চন্দ্রগ্রহণকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার বিষয় হিসেবে বিবেচনা করেন। কারণ:
- এটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের গঠন বুঝতে সহায়তা করে।
- এটি চাঁদের পৃষ্ঠে সূর্যের আলো কিভাবে প্রতিফলিত হয়, তা পর্যবেক্ষণ করা যায়।
- নাসা ও অন্যান্য মহাকাশ গবেষণা সংস্থাগুলি চন্দ্রগ্রহণের সময় বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চালায়।
রক্তিম চন্দ্রগ্রহণ ও সংস্কৃতি
বিভিন্ন সংস্কৃতিতে রক্তিম চন্দ্রগ্রহণ একটি রহস্যময় এবং গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বলে বিবেচিত হয়। কিছু প্রাচীন সভ্যতা এটিকে দেবদেবীর ক্রোধের প্রতীক মনে করত, আবার কিছু সংস্কৃতিতে এটি নতুন শুরুর প্রতীক হিসেবে গণ্য হয়।
২০২৫ সালের ‘রক্তিম চন্দ্রগ্রহণ’ হতে চলেছে একটি বিরল মহাজাগতিক দৃশ্য, যা উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার অনেক জায়গা থেকে দেখা যাবে। যদিও বাংলাদেশ থেকে এটি দেখা যাবে না, তবে বিভিন্ন অনলাইন লাইভ স্ট্রিমের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে মানুষ এই অভূতপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করতে পারবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।