প্রয়াত শিল্পপতি রতন টাটাকে কোটি কোটি মানুষ নিজেদের আইডল বলে মনে করেন। তার ব্যক্তিত্বকে ভালোবাসেন না এমন মানুষ প্রায় নেই বললেই চলে। এই শিল্পপতির কিছু উক্তি রয়েছে যেগুলো মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কেউ যদি জীবনে তার উক্তিকে গ্রহণ করেন তাহলে উন্নতি করতে সহজ হবে।
শিল্পপতি রতন টাটার উক্তিগুলোর মধ্যে যেগুলো মানুষকে জীবনে উন্নতি করতে উৎসাহিত করবে তা হলো—
উত্থান-পতন গ্রহণ করুন
রতন টাটা বলতেন জীবনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য উত্থান-পতন দুটোই দরকার। ইসিজি সরল রেখা মানে আমরা বেঁচে নেই। রতন টাটার এই উক্তি অনুসারে, আপনাকে উত্থান-পতন মেনে নিতে হবে। ব্যর্থতার জন্য দুঃখ না করে সেখান থেকে শিখুন এবং এগিয়ে চলুন।
নিজেকে বিশ্বাস করা উচিত
রতন টাটা বলেছিলেন যে তিনি আগে সিদ্ধান্ত নেন এবং তারপরে সেগুলিকে সঠিক প্রমাণ করেন। তার উদ্ধৃতি অনুসারে আপনার নিজের ওপর আস্থা থাকা উচিত। আপনি যদি আপনার নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী হন তবে আপনি অবশ্যই সাফল্য পাবেন, আজ না হলেও আগামীকাল।
সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলুন
রতন টাটা বলতেন, আপনি যদি দ্রুত ভ্রমণ করতে চান তবে আপনার একা ভ্রমণ করা উচিত। তবে আপনি যদি অনেক দূর যেতে চান তবে সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে ভ্রমণ করতে হবে।
রতন টাটা বলতেন যেকোনো চ্যালেঞ্জকে সরাসরি সুযোগে পরিণত করা উচিত। রতন টাটার এই মূল্যবান চিন্তা থেকে আগামী বহু প্রজন্ম অনেক কিছু শিখতে পারবে। এ ধরনের ধারণা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আপনি শুধু আপনার পেশায় সফলতাই অর্জন করতে পারবেন না, মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিতেও সক্ষম হবেন।
উল্লেখ্য, বুধবার (৯ অক্টোবর) রাতে মারা যান ভারতের টাটা গ্রুপের কর্ণধার রতন টাটা। ১৯৩৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর মুম্বাইয়ে পারসিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাবা নভল টাটার জন্ম গুজরাটের সুরাটে। পরে টাটা পরিবার তাকে দত্তক নেয়। রতন টাটার মা সুনি টাটা আবার সরাসরি জামশেদজি টাটার পরিবারের অংশ। রতন টাটার পিতামহ হরমসজি টাটা জন্মসূত্রেই ওই পরিবারের সদস্য। রতন টাটার যখন ১০ বছর বয়স, সেই সময় তার মা-বাবা আলাদা হয়ে যান। রতন টাটার নিজের এক ভাইও রয়েছেন, জিমি টাটা। সৎ ভাই নোয়েল টাটা। নভল টাটা দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন সিমোন টাটাকে। নোয়েল তাদেরই সন্তান।
মুম্বাই, শিমলা হয়ে নিউইয়র্কের রিভারডেল কান্ট্রি স্কুলে পড়তে যান রতন টাটা। ১৯৫৯ সালে স্থাপত্য নিয়ে স্নাতকস্তরে ভর্তি হন কর্নেল ইউনিভার্সিটিতে। সাতের দশকে টাটা গ্রুপে ম্যানেজার পদে দায়িত্ব পান রতন টাটা। ১৯৯১ সালে জেআরডি টাটা দায়িত্ব ছাড়লে রতন টাটাকে নিজের উত্তরাধিকারী ঘোষণা করেন। প্রথমে তাকে নিয়ে আপত্তি ছিল গ্রুপের ভেতরে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে তার।
যে ২১ বছর রতন টাটার হাতে টাটা গ্রুপের দায়িত্ব ছিল, তাতে গ্রুপের আয় বেড়ে হয় ৪০ গুণ, মুনাফা বাড়ে ৫০ গুণ। মধ্যবিত্তকে চার চাকার স্বপ্ন দেখান রতন টাটাই। পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানা গড়ে ওঠে। যদিও রাজনৈতিক টানাপড়েনে পরে গুজরাটে কারখানা সরিয়ে নিয়ে যেতে হয়।
৭৫ বছর বয়সে ২০১২ সালে টাটা গ্রুপের নির্বাহী ক্ষমতা ছেড়ে দেন রতন টাটা। সেই জায়গায় পারিবারিক আত্মীয় সাইরাস মিস্ত্রিকে আনা হয়। কিন্তু ২০১৬ সালে সাইরাসকে টাটা সন্সের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ফের অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্বে ফেরেন রতন টাটা।
এরপর ২০১৭ সালে নটরাজন চন্দ্রশেখরণকে অন্তর্বর্তীকালীন চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে সমাজসেবামূলক কাজে আরও বেশি করে যুক্ত হয়েছিলেন রতন টাটা।
২০০০ সালে ‘পদ্মভূষণ’ সম্মান পান রতন টাটা। ২০০৮ সালে পান ‘পদ্ম বিভূষণ সম্মান’। মহারাষ্ট্র, আসাম সরকারও তাকে সম্মান প্রদান করে। ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজ, লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্স, আইআইটি বম্বে, ইয়েল ইউনিভার্সিটি, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, রাজা তৃতীয় চার্লসের থেকেও বিশেষভাবে সম্মানিত হন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।