সৌদি আরবের প্রথম নারী হিসেবে মহাকাশে গিয়েছিলেন রাইয়ানাহ বারনাওয়ি। সঙ্গে ছিলেন আরও তিন নভোচারী—আলি আল ক্বারনি (সৌদি আরব), পেগি উইটসন (যুক্তরাষ্ট্র) ও জন শফনার (যুক্তরাষ্ট্র)। স্পেসএক্সএর তৈরি ফ্যালকন ৯ রকেটে করে মহাকাশে গিয়ে ইতিহাস করেছিলেন তাঁরা। গন্তব্য ছিলো আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন।
আলি আল ক্বারনি সৌদি পুরুষ হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো মহাকাশে যাচ্ছেন। ৩১ বছর বয়সী এ নভোচারী রয়্যাল সৌদি এয়ারফোর্সের একজন ক্যাপ্টেন। কিং ফয়সাল এয়ার একাডেমি থেকে অ্যারোনটিক্যাল সায়েন্সে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। চলতি বছর ১২ ফেব্রুয়ারি অ্যাক্সিওম মিশনের নভোচারী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা করে সৌদি স্পেস কমিশন।
এ মিশনের মাধ্যমে শুধু সৌদি আরব নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম নারী নভোচারী হিসেবে নাম লিখিয়েছেন রাইয়ানাহ বারানাওয়ি। ৩৩ বছর বয়সী এ নভোচারীর জন্ম ১৯৮৮ সালে, সৌদি আরবের জেদ্দা শহরে। পেশায় একজন বায়োমেডিকেল গবেষক। নিউজিল্যান্ডের ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জেনেটিকস, রিপ্রোডাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিষয়ে স্নাতক এবং সৌদি আরবের আল ফয়সাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োমেডিকেল সায়েন্সে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।
এখানে তিনি গবেষণা করেন স্তন ক্যান্সারের স্টেম কোষ নিয়ে। ক্যান্সারের স্টেম কোষ গবেষণায় প্রায় এক দশক ধরে কাজ করছেন বারানাওয়ি। অ্যাক্সিওম মিশন ২-এর নভোচারী হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার সময় তিনি সৌদি আরবের কিং ফয়সাল স্পেশালিস্ট হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারে কর্মরত ছিলেন। মিশন বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়ত্ব পালন করবেন এ অভিযানে।
মিশনের বাকি দুই নভোচারী পেগি উইটসন ও জন শফনার। এদের মাঝে মিশন কমাণ্ডারের দায়িত্ব পালন করবেন পেগি উইটসন। মার্কিন এ নভোচারী পেশায় প্রাণরসায়ন গবেষক। নাসায় ‘চীফ অ্যাস্ট্রোনট’ হিসেবে কাজ করেছেন জীবনের দীর্ঘ সময়। ১৯৬০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্টে জন্ম। এখন পর্যন্ত মোট ৬৬৫ দিনের মতো সময় তিনি মহাকাশে কাটিয়েছেন। মার্কিন নভোচারীদের মধ্যে মহাকাশে সবচেয়ে বেশি সময় কাটানোর রেকর্ডটি তাঁর। নারী হিসেবে তো বটেই, বলা বাহুল্য।
অ্যাক্সিওম ২ মিশনে পাইলটের দ্বায়িত্ব পালন করছেন জন শফনার। তিনি একাধারে রেসিং গাড়ির চালক, বিনিয়োগকারী ও পাইলট। যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা রাজ্যে জন্ম। পাইলট হিসেবে কাজ করছেন মাত্র ১৭ বছর বয়স থেকে। এখন পর্যন্ত সাড়ে ৮ হাজার ঘন্টারও বেশি সময় কাটিয়েছেন আকাশে। সম্পন্ন করেছেন ৩ হাজার স্কাইডাইভ এবং বেজ জাম্প। ছোটবেলাতেই তিনি নবীন নভোচারীদের জন্য ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন।
চার সদস্যের এই দল আইএসএসে থাকাকালে প্রায় ২০টি পরীক্ষা চালিয়েছিলেন। এর একটি হলো, ওজনহীন পরিস্থিতিতে স্টেম সেল কীভাবে কাজ করে, তা পর্যবেক্ষণ করা। বলে রাখা প্রয়োজন, আইএসএসের পরিবেশ আসলে পুরো ওজনহীন নয়। ইংরেজিতে এটাকে বলা হয় মাইক্রোগ্র্যাভিটি।
অর্থাৎ, আইএসএসের ভেতরে মহাকর্ষের প্রভাব এত কম অনুভূত হয় যে মনে হয় ওজনহীন পরিবেশ। এ পরিবেশেই তাঁরা এই এক্সপেরিমেন্টগুলো করে দেখবেন। রাইয়ানাহ বারনাওয়ি বিশেষজ্ঞ হিসেবে এ জন্যই এ মিশনের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁরা আইএসএসে বর্তমানে থাকা আরও সাত নভোচারীর সঙ্গে যোগ দেবেন।
ফ্যালকন ৯ রকেটের মাথায় বসানো স্পেসএক্সের ড্রাগন নভোযানে করে মহাকাশে গিয়েছিলেন এই নভোচারীরা। অ্যাক্সিওম মিশন ২ (অ্যাক্স-২) এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে গেলেন সৌদি আরবের কোনো নাগরিক। তা ছাড়া প্রথম নারী নভোচারী হিসেবে বারানাওয়ি এ অঞ্চলের নারীদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলেন। মহাকাশযাত্রার অপার সম্ভাবনাময় জগৎটি মেলে ধরেছিলেন সবার জন্য, এমনটাই মনে করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।