বিনোদন ডেস্ক: বিয়ে মানেই পালকিতে চড়ে বরের সঙ্গে নববধূ যাবে শ্বশুর বাড়ি। নব দম্পতির নতুন স্বপ্নের যাত্রা শুরু হয় বিশেষ এই বাহনে করে। বিয়ের আসরে নতুন মাত্রা যুক্ত করা পালকির বেহাদের চোখ আনন্দে জ্বল জ্বল করে ওঠে। একসময়ের চির চেনা এই দৃশ্যের এখন দেখা মেলে কালেভদ্রে।
রাজধানী ঢাকায় তো বটেই প্রায় সর্বত্র যেন পালকির জায়গা দখল করেছে প্রাইভেটকার! তবুও বরিশালের মোসলেম উদ্দিন এবং কালাচানের মতো সহজ সরল মানুষগুলো রীতিমতো লড়াই-সংগ্রাম করে চলছেন পালকির জন্য। কারণ তারা পালকি বহন করে শুধু পেশা হিসেবে তা নয়, এর মধ্যে রয়েছে অকৃত্রিম ভালোবাসা ও আনন্দ।
এবার আবহমান বাংলার হারিয়ে যেতে বসা ঐতিহ্যবাহী পালকির কসরত দেখা মিলবে খোদ রাজধানীতেই। হবে তা শীততাপনিয়ন্ত্রিত কক্ষে।
ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ২২তম আসরের পর্দা উঠেছে ২০ জানুয়ারি। এতে খ্যাতিমান নির্মাতা ঝুমুর আসমা জুঁই’র প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘পালকি’র প্রিমিয়ার শো হতে যাচ্ছে আজ (২৬ জানুয়ারি)। বিকাল ৫টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত ও নৃত্য ভবনে। হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য পালকির না বলা কথা নিয়ে প্রামাণ্য চলচ্চিত্র পালকি (Flying An Emotion) দর্শকদের সামনে আনা হবে এখানে।
গ্রাম-বাংলার ইতিহাস ও সংস্কৃতির একটি বড় অংশ জুড়ে আছে পালকি। বহু যুগ ধরে বিশেষ এই বাহন সময় পরিবর্তনের ইতিহাসকে ধারণ করে এগিয়ে চলছে আজও। বর্তমানে সার্কাস ও যাত্রার মতো বিলুপ্তির পথে পালকিও। তবুও পালকির সাথে যুক্ত মানুষেরা এটিকে আকড়ে ধরেই বাঁচতে চান, বাঁচাতে চান পালকিকেও। তাই শত দরিদ্রতা আর নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও মোসলেম উদ্দিন এবং কালাচানের মতো সহজ সরল মানুষগুলো পালকিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন, এগিয়ে নিয়ে চলছেন ভবিষ্যতের পথে।
বরিশালে জন্ম নেয়া গৃহস্থ ঘরের ছেলে মোসলেম উদ্দিন। রঙিন স্বপ্ন নিয়ে মুন্সিগঞ্জে এসে পালকি চালানো শুরু করে। অনেক বছর এই পেশা নিয়েই জীবিকা নির্বাহ করেছিলো মোসলেম উদ্দিন। কিন্তু বিগত বছর গুলোতে শুধু এই পেশার উপর ভিত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করা সম্ভব হয় না। তাই বিভিন্ন ক্ষেতে খামারে কাজ করতে হয় তাকে। তাই বলে এই স্বপ্নের পেশা থেকে সরে যায়নি মোসলেম উদ্দিন।
বাংলার লোকজো ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসে চলচ্চিত্র পরিচালক ঝুমুর আসমা জুঁই। তার নির্মিত প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘পুতুল পুরাণ’ এর জন্য বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার এবং একি চলচিত্রের জন্য ভারতের dream international film festival থেকে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের সম্মাননা অর্জন করেন। এই প্রামাণ্য চলচ্চিত্রটি বিশ্বের অনেক গুলো ফেস্টিভ্যালে ইতোমধ্যে প্রদর্শিত হয়েছে। তার নির্মিত সরকারি অনুদান প্রাপ্ত চলচ্চিত্র “দ্যা লক্ষণ দাস সার্কাস” ইতিমধ্যেই দর্শক মহলে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
এছাড়া তার প্রামাণ্য চলচ্চিত্র মধ্যে উল্লেখ যোগ্য, রথ যাত্রার বাকি ইতিহাস, ভাস্কর্য ও মাটির ময়না। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ধোঁয়াশা, ভাড়াটিয়া ও বাড়িওয়ালা। তার নির্মাণাধীন প্রামাণ্য চিত্র – কবিরাজের একদিন, সংগ্রাম, রুপকথা, দ্যা সিলভার স্ক্রিন, যাত্রা রানী মালতী সরকার।
এছাড়া ঝুমুর ২০২২-২৩ অর্থ বছরে অনুদান প্রাপ্ত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত ‘দুই পয়সার মানুষ’ এবং বাণিজ্যিক ধারা চলচ্চিত্র ‘বদলা (দ্যা রিভেন্স)’ এর কাজ চলমান।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনিস্টিউট থেকে চলচ্চিত্র পরিচালনার উপর স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা কোর্স সাফল্যের সাথে শেষ করেন ঝুমুর আসমা জুঁই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।