জুমবাংলা ডেস্ক : শুরু হয়েছিল ৭-৮ বছর বয়স থেকে। তখন তারা ঢাকার কারওয়ান বাজার, মিরপুরসহ, সংসদ ভবনের আশপাশের এলাকায় টোকাইগিরি করত। বাসা-বাড়ির ছাদে রোদে দেয়া জামাকাপড়, জুতা, টুকরা রড, সবজি চুরি করে বিক্রি করতো। চোরাই মাল বিক্রি করতে গিয়ে একে অন্যের সঙ্গে পরিচিত হয়। তারপর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠলে একসঙ্গে চুরি করা শুরু করে। বিগত ২০ থেকে ২২ বছর ধরে তারা দরজা ভেঙে বাসায় ঢুকে চুরি করা শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত তারা ছোট বড় প্রায় হাজারখানেক বাসায় চুরি করেছে। চুরির টাকায় বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছে। তবে রেহাই মিলেনি। ঢাকার খিলক্ষেত এলাকার একটি বাসায় চুরির ঘটনায় করা মামলার এই চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম।
ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিমের টিম লিডার এস এম রেজাউল হকের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে চক্রের মোঃ জব্বার মোল্লাহ (৬৭), আজিমুদ্দিন (৫২), মো. জামাল (৪৪), মোঃ আবুল (৫০), মো. আনোয়ার হোসেন (৪৪) এবং মো. আব্দুল ওহাবকে (৪৫) গ্রেপ্তার করে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চোরাইকৃত স্বর্ণালংকার ও টাকা উদ্ধার করা হয়।
ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার এস এম রেজাউল হক বলেন, গত ১৭ই আগস্ট খিলক্ষেত থানাধীন নিকুঞ্জ-২ এর ১৫ নং রোডে ডাক্তার দম্পতির বাসায় দিনের বেলায় দুর্ধর্ষ চুরি হয়। বাসায় দারোয়ান ও সিসিটিভি না থাকার সুযোগে চোর চক্রের সদস্যরা বাসায় নির্বিঘ্নে ঢোকে তৃতীয় তলার দরজা ভেঙে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে। আলমারি লক ভেঙে তারা ৪২ ভরি স্বর্ণ ও ৪ হাজার ইউএস ডলার চুরি করে। ঘটনার সংবাদ পেয়ে তদন্তে নামে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম। বাদীর সঙ্গে আলোচনা, মামলার এজাহার পর্যালোচনা এবং ঘটনাস্থলের আশপাশের এলাকার সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে তথ্য সংগ্রহ করে গোয়েন্দা সদস্যরা। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় এবং সিসি ক্যামেরা ফুটেজ বিশ্লেষণে আসামিদের শনাক্তকরণে সক্ষম হয় ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিমের সদস্যরা। আসামিদের অবস্থান সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করে শনিবার ঢাকার পল্লবী থেকে চুরির সময় হাতেনাতে চোর-চক্রের সদস্য জব্বার মোল্লাহ, আজিমুদ্দিন জামাল (৪৪), মোঃ আবুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে দরজা এবং আলমারি ভাঙার বিভিন্ন উপকরণ পাওয়া যায়।
রেজাউল হক বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, ঘটনার আগের দিন তারা কথা বলে ঠিক করে কোথায় চুরি করবে। পরিকল্পনামাফিক পরদিন সকালবেলা তারা ওই এলাকায় হাজির হয়। একত্রে চা পান করার পর তারা হাঁটতে থাকে এবং খেয়াল করে দেখে কোন বাসায় দারোয়ান ও সিসি ক্যামেরা নেই। কাক্সিক্ষত বাসা নির্ধারণের পর দুইজন বাসার ভিতরে প্রবেশ করে, বাকি ২-৩ জন বাইরে পাহারায় থাকে। ১০ মিনিটের মধ্যে চুরি শেষ করে মালামাল ভাগ করে নিয়ে যে যার এলাকায় চলে যায়। পরদিন আবার অন্য কোথাও চুরির পরিকল্পনা করে। জিজ্ঞাসাবাদে চোর চক্রের মূল হোতা জব্বার মোল্লা জানায়, তারা শুধুমাত্র মূল্যবান স্বর্ণালংকার ও টাকা চুরি করে। চোরাইকৃত এই স্বর্ণালংকার সে ঢাকার তাঁতিবাজারের দুইটি দোকান এবং গাজীপুরের টঙ্গী বাজারের একটি স্বর্ণের দোকানে বিক্রি কর। যে টাকা পাওয়া যায় সেটি নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। তার দেয়া তথ্যমতে টঙ্গীবাজারে স্বর্ণের দোকান থেকে আনোয়ার হোসেন ও তাঁতী বাজারে স্বর্ণের দোকানে অভিযান চালিয়ে আব্দুল ওহাবকে চোরাই স্বর্ণ ক্রয় বিক্রয়ের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাদের কাছ থেকে সর্বমোট ৮ ভরি ১০ আনা স্বর্ণ ও ৮২ ভরি ৩ আনা রূপা উদ্ধার করা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।